‘শেকড় ছেড়ে দূরে গিয়ে কেউ সুখি হয় না’ - rangpur news

Breaking

Breaking News

rangpur news

This is news blog site.Here have important online newspaper.if you Concert:MD.Gulam azam sarkar. E-mail:gulamazam@gmail.com Mobil:01735632338

Windows

test banner

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৫

‘শেকড় ছেড়ে দূরে গিয়ে কেউ সুখি হয় না’

নতুন বার্তা ডেস্ক

বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেছেন, ‘শেকড় ছেড়ে দূরে গিয়ে কেউ সুখি হয় না’। তিনি আরো বলেছেন, ‘পুরুষরা মহিলাদের সমর্থনে রাস্তায় নেমে না আসলে কোনো সমাধান হবে না।’

তসলিমার ‘নির্বাচিত’ গল্প নিয়ে ছবি বানিয়েছেন কলকাতার পরিচালক চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। এই ছবি নিয়ে শুরু থেকেই নানা বিতর্ক হয়েছে। প্রিমিয়ার শোতে তসলিমা উপস্থিত হতে পারেননি। তখন তার ভিসা নিয়ে চলছিল ঝামেলা। ভারত সরকার শুক্রবার তার ভিসার মেয়াদ এক বছর বাড়িয়েছে। অর্থাৎ তিনি আগামি এক বছর নির্বিঘ্নে ভারতে থাকতে পারবেন। কলকাতায় থাকার ইচ্ছা সত্ত্বেও তসলিমা থাকতে হবে নয়া দিল্লিতে।

গত ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন টাইমস অব ইন্ডিয়ার বাংলা দৈনিক ‘এই সময়’ তসলিমা ও চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার নেয়। সাক্ষাৎকারটি আজ শনিবার পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: অবশেষে মুক্তি পেল 'নির্বাসিত'৷ কেমন রিয়্যাকশন পেলেন?
চূর্ণী: অত্যন্ত ভালো৷ ছবিটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর দর্শক চুপ করে বসেছিলেন৷ পরে অনেকে বলেছেন যে উঠে চলে যেতে ইচ্ছে করছিল না৷ ইন্টারভ্যাল-এ অনেকে বেরোননি৷ কেউ বা হল থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন৷ পরে শুনলাম নন্দনে স্ট্যান্ডিং ওভেশান হয়েছে৷

তসলিমা: এটা কি লেখিকার জন্য কষ্ট না সিনেমার জন্য বিহ্বলতা?

চূর্ণী: নিশ্চয়ই প্রথমটা৷ চোখের জল তো লেখিকার কষ্টের কথা ভেবেই৷ আমার জন্য তো নয়৷

প্রশ্ন: আজ ভারতে স্বাধীনতা দিবস৷ সেখানে এমন একজনের সঙ্গে কথা বলছি যিনি একজন নারী এবং যিনি নারী স্বাধীনতার কথা লিখেছেন এবং যিনি নির্বাসিত৷ কেমন একটা হাস্যকর সমাপতন না?
তসলিমা: আমরা বিদেশিদের শত্রু জ্ঞান করে দেশ থেকে সরিয়ে দিয়েছি৷ নিজেরা দেশের হাল হাতে নিয়েছি৷ কিন্তু দেখা গিয়েছে আস্তে আস্তে আমরা নিজেরাই শাসক আর শোষক হয়ে উঠেছি৷ এই হিপোক্রিসি সর্বত্র৷ নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে শত্রুতা করলাম৷ দেশ মানে তো নিরাপত্তা, বাক-স্বাধীনতা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার৷ দেশ যদি নারী, সৃষ্টিশীল মানুষকে নিরাপত্তা না দিতে পারে, মেয়েদের ধর্ষিত হওয়ার থেকে বাঁচাতে না পারে, তাহলে সেই দেশ কী করে স্বাধীন হয়? চূর্ণীর ছবিতে এগুলো অত স্পষ্ট করে আসেনি৷ তবে বিষয়গুলো যেভাবে চূর্ণী এনেছে- বেড়ালটা, সেই লেখিকা- জরুরি প্রশ্নগুলো ঠিকই এসেছে, স্বাধীনতা বিষয়ে, মুক্ত চিন্তা বিষয়ে৷

প্রশ্ন: আপনার প্রিয় কলকাতায় ছবির প্রিমিয়ার হলো৷ আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে কত মানুষ লিখছেন যে তারা ছবির প্রিমিয়ারে গিয়েছিলেন৷ আপ্লুত হয়ে ছবিটা তাদের ভালো লেগেছে জানিয়েছেন৷
তসলিমা: আমি তো বার বার খোঁজ নিচ্ছিলাম! কলকাতায় প্রিমিয়ার হলো আর আমিই নেই সেই প্রিমিয়ারে৷ কোনওদিন ভাবতে পারিনি কলকাতা ছাড়তে হবে৷ এই কলকাতায় আসা-যাওয়া ১৯৭৮ থেকে৷ তারপর আমার বই নিশিদ্ধ করল, আমাকে তাড়িয়ে দিল৷ 'নির্বাসন' গল্পটা যে বইতে আছে সেটা কলকাতার বইমেলায় উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল৷ সেটা নিষিদ্ধ হয়ে গেল৷ সেটা তারপর উদ্বোধন করেন নবারুন ভট্টাচার্য৷ সিরিয়ালের ব্যাপারেও এক অবস্থা৷ শেষ পর্যন্ত টেলিকাস্ট হল না৷ ছবি করবে বলেও অ্যাডভান্স টাকা দিয়েছে, সই পর্যন্ত করিয়ে নিয়েছে, কিন্তু ছবিটা হয়নি৷ তাই সত্যি কথা বলতে চূর্ণী যখন ছবিটা করবে বলল, বিশ্বাস করতে পারিনি ও সত্যিই পারবে বলে৷ মানুষটাকেই তো তোমরা নিষিদ্ধ করে দিয়েছ, তার আবার ছবি!

চূর্ণী: তুমি সশরীরে ফিরতে পারলে না, ছবি হয়ে ফিরলে!

প্রশ্ন: ছবির কোন জায়গাগুলো ভালো লেগেছে?
তসলিমা: কিছু কিছু জায়গায় চোখে পানি এসে গিয়েছে৷ কিছু ঘটনা হুবহু এক রেখেছে চূর্ণী৷ বিদেশে যে দ্বীপে আমি ছিলাম সেই জায়গাতেই শ্যুট করেছে৷ ওই কবিতাটা - 'বাড়িটা তুই আছিস কেমন' - দেখতে দেখতে মনে পড়ল ওটা দিল্লির হাউস অ্যারেস্টে বসে লেখা৷ গাদা সিক্যুরিটির মধ্যে৷ সে ভয়ঙ্কর অবস্থা৷ বা সেই জায়গাটা যেখানে বেড়লটা তার মাকে খুঁজছে৷ ওই মহিলাকে যখন তার মা বলে ভ্রম হচ্ছে৷ অনেক ছোট ছোট কাজ মনকে নাড়া দিয়েছে৷ বা বিদেশে যখন চূর্ণী ফ্রিজ খুলে খাবার খেতে গিয়ে গন্ধে খেতে পারে না, বমি করে ফেলে- ওই অসহায়তার জায়গাগুলো৷ অথচ কী অন্যায় করেছিল মানুষটা? মেয়েদের জন্য লিখেছিল, এই তো? আমাকে অনেকে বলেছেন, 'তোমার তো ওই বিদেশের আরামের জায়গায় সুখি হওয়ার কথা৷' আমি তাদের কী করে বোঝাবো যে নিজের মানুষের কাছ থেকে, শেকড় ছেড়ে দূরে গিয়ে কেউ সুখি হয় না৷ ওই অবস্থায় বিদেশের মোহ কাউকে বশ করতে পারে না৷

প্রশ্ন: আপনার মিনু (বেড়াল) কেমন আছে?
তসলিমা: (হেসে) মিনু ভালো আছে৷ এখন আমার কাছেই আছে৷ সাড়ে তিন বছর ও কাছে ছিল না৷ কত জায়গায় ঘুরেছে৷ কখনও কখনও বাথরুমের এক ছোট্ট কোনায় বন্দী ছিল- ভাবতে পারেন! আমার মতো ও-ও লড়াই চালিয়ে গিয়েছে৷ চূর্ণী খুবই পরিচ্ছন্ন, সুন্দর করে দেখিয়েছে এই জায়গাগুলো৷ (মজা করে) আমার তো মনে হচ্ছে এর পর কৌশিকের (চূর্ণীর স্বামী)থেকেও চূর্ণী ভালো ছবি বানাবে! কোনোদিন শুনবো কৌশিকের ছবি গোপনে চূর্ণী বানিয়ে দিয়েছে! (সিরিয়াস হয়ে) তবে বলতেই হয় ও অসম্ভবকে সম্ভব করেছে৷ হয়ত সরাসরি কিছু বলেনি কিন্তু বাক স্বাধীনতা, বেড়াল, সেন্সর বোর্ড, শেষমেষ জাতীয় পুরস্কার- এটাই বলতে ইচ্ছে হয় যে চূর্ণী পারল৷ ওকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা নেই৷ মানুষ তখনই প্রতিবাদ করবে যখন সে ফিল করবে৷ সেই প্রতিবাদের ভাষাটা তুমি দিয়ে দিলে৷ সব থেকে বড় কথা চূর্ণী ভয় পায়নি৷ যেখানে মুখ বুজে থাকলেই সব ঝামেলা মিটে যায়, সেখানে ওর কী দরকার ছিল এটা বানাবার? বাক-স্বাধীনতার সপক্ষে এত প্রশ্ন তোলার?

প্রশ্ন: একটা সংলাপ আছে কলম আর তরোয়ালের মধ্যে পরেরটাই জিতে যায়৷
তসলিমা: সব ব্যাপারে কলম ধরলে তো মানুষ সভ্যই হতো৷ আমি তো দিব্বি কবিতা, প্রেমের গল্প লিখতে পারতাম৷ কিন্তু সমাজের যে অবস্থা ছিল বা ওরা আমাকে যে অবস্থায় পাঠিয়ে দিল তাতে নারীদের জন্য কলম ধরতে বাধ্য হলাম৷ না হলে বাক-স্বাধীনতা, বৈষম্য নিয়ে লেখার কী দরকার ছিল?

চূর্ণী: একটা দৃশ্য আছে- একসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের ছবির পটভূমিকায় প্রশাসনিক প্রহসন চলছে৷ মানে রাজ্যে এরকম সাম্যের ধারা থাকা সত্ত্বেও একজন লেখককে রাজ্য থেকে বেরিয়ে যেতে হলো৷ আসলে সিস্টেমটাই প্রস্তুত নয় এরকম একটা সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার জন্য৷

তসলিমা: ছবিতে দুঃখ-ব্যঙ্গ-হাস্যকর ব্যাপারগুলো একটার সঙ্গে অন্যটা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মিশেছে৷

চূর্ণী: প্রশাসনিক প্রহসনটা ইঁদুর থেকে পাহাড় বানাবার গল্পের মতন৷ যেটার একটা সিম্পল সলিউশান হতে পারে সেটাকেই বিরাটাকার করে ফেলা...

প্রশ্ন: যৌন স্বাধীনতা নিয়েও কথা আছে৷ যেখানে লেখিকা বলে, 'আই হ্যাভ হ্যাড মাই শেয়ার অফ গুড সেক্স উইথ মেন আই চোজ টু অ্যাকসেপ্ট৷'
তসলিমা: এখানে আমি একটা বলতে চাই৷ আমি কিন্তু চিটিং-য়ের কথা বলিনি৷ আমি স্ট্রিক্টলি মনোগ্যামাস৷ যৌন স্বাধীনতা মানে আমার কাছে, নারীর 'না' বলবার স্বাধীনতা৷ কোনো পুরুষ- সে যেই হোক, যদি বলে 'আই অ্যাম রেডি', মেয়েটি যেন, তার ইচ্ছে না থাকলে বলতে পারে, 'আই অ্যাম নট রেডি৷ আমি রেডি নই৷' সেই 'না' করবার স্বাধীনতা৷ আমার 'দ্বিখণ্ডিত' নিষিদ্ধ হয়েছিল এই জন্যই৷ প্রথমে বলা হয়েছিল বইটি অশ্লীল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও যখন নিশিদ্ধ করা গেল না, তখন বলা হল আমি ধর্মে আঘাত দিয়েছি৷ যারা 'দ্বিখণ্ডিত' ব্যান করেছিলেন তারাই 'উতলহাওয়া' বা 'আমার মেয়েবেলা' ব্যান করেননি, কারণ সেখানে আমি লিখেছিলাম যে সেক্স এঞ্জয় করেছি৷

চূর্ণী: বই ব্যান করে দিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলে কোনো লাভ তো হলো না৷ কারণ, পরবর্তীকালে বইটা যখন পাওয়া গেল তখন মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই বইটাই পড়লেন৷ এমন মানুষও পড়েছেন যারা হয়ত আগে ওটা পড়তেন না, যদি না ওটার প্রতি নেগেটিভ অ্যাটেনশন দেওয়া হতো৷ আর এখন তো সোশ্যাল মিডিয়া যেরকম অ্যাক্টিভ কারও লেখাই চেপে রাখা যায় না- সেটা আমরা বুঝে গিয়েছি৷

তসলিমা: হয়তো ৫০০ বছর পর এটা নিয়ে খোলাখুলি কথা হবে৷

চূর্ণী: আসলে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে বা সাম্যর পক্ষে নারীর পাশাপাশি পুরুষদেরও আরও ভোকাল হওয়া দরকার৷

তসলিমা: হ্যাঁ, পুরুষ যতদিন পথে না নামবে ততদিন লাভ হবে না৷ আমি সব পুরুষকে অবশ্যই জেনারালাইজ করছি না৷ কিন্তু ওরা তো আগে শুরু করুক, তারপর বাকিরা জয়েন করবে৷ এটা তো আসলে ছেলে-মেয়ের ব্যাপার নয়, মানুষের ব্যাপার৷ আর সিস্টেম পেশি দিয়ে চলে না, চলে বুদ্ধি দিয়ে৷

নতুন বার্তা/এসএ

কোন মন্তব্য নেই:

Post Top Ad

Responsive Ads Here