এবার রংপুরে ১ শশিুকে অমানুষকি নর্যিাতন
৩০ হাজার টাকায় রফার নাটক
সরকার মাজহারুল মান্নান
এবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনার চরে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র রাকিবুল ইসলামকে চুরির অপবাদে অমানুষিক নির্যাতন করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কাজী তালেব মাস্টার ও তার ছেলেরা। রশিতে বেঁধে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে গায়ে গরম পানির ডলুনি এবং সূর্যের দিকে চোখ রাখতে বাধ্য করা হয় শিশুটিকে। নির্যাতনের পর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮ দিন ধরে চিকিৎসাধীন রাকিবুল এখনো গুরুতর অসুস্থ। এ দিকে রাকিবুলের পরিবারের প থেকে অভিযোগ দেয়া হলেও পুলিশ এবং মাতব্বরা ৩০ হাজার টাকায় মীমাংসার নাটক বানিয়ে থানায় জোরপূর্বক সই নিয়ে আটক কাজী তালেবকে ছেড়ে দেয়। এ দিকে শিশুটির উন্নত চিকিৎসা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নয়া দিগন্তের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
নির্যাতিত রাকিবুলের মা আদুরী বেগম জানান, ২৮ জুলাই বিয়ে খেতে যাই আমি। রাকিবুল সেদিন স্কুল যায়নি। স্কুল কামাই করায় বাবার ধমক খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সারা দিন ঘুরেফিরে শেষে আবুলিয়া বাজারে যায় রাকিবুল। সেখানে ুধার জ্বালা মেটাতে এর-ওর কাছে চেয়ে কিছু খেয়ে রাতে আশ্রয় নেয় কাজী তালেব মাস্টারের গালামালের দোকান বসুনিয়া ভ্যারাইটি স্টোরে। ভোরে দারোয়ান টের পেয়ে খবর দেয় মালিককে। শুরু হয় চুরির অপবাদে অমানুষিক নির্যাতন। রাকিবুল চুরির জন্য দোকানে ঢুকেছে অপবাদ দিয়ে তালেব কাজী, আসাদ, মিঠু, দুখু ও সামাদ নামে পাঁচ যুবক তাকে রড দিয়ে পা, পেট, পিঠ ও কোমরে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে ইনজেনকশন দিয়ে অজ্ঞান করে পেটানো হয়।
আদুরী বেগম আরো জানান, সকালে এ নিয়ে বসে সালিস। তালেব কাজী দাবি করেন, দোকান থেকে চুরি হয়েছে ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে উপস্থিত হন রাকিবুলের বাবা আশরাফ আলী। সালিসে আশরাফ আলীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নিরুপায় আমার স্বামী দিনমজুর আশরাফ ছেলে রাকিবুলকে তালেব কাজীর হাতে তুলে দিয়ে দয়া ভিা চান। তবে রাকিবুলকে ফের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন করেন তালেব মাস্টার। কাজী তালেব মাস্টারের বাড়িতে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রশি দিয়ে বেঁধে তার ছেলের ওপর ফের চালানো হয় নির্যাতন। হাতে রশি বেঁধে মাটিতে শুইয়ে গায়ে গরম পানি দিয়ে শরীরে দেয়া হয় ডলুনি। সূর্যের দিকে মুখ করিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। এতে তার ছেলে জ্ঞান হারায়। তখন রাকিবুলকে নিয়ে যাওয়া হয় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানালে আবার ফিরিয়ে আনা হয় আবুলিয়া বাজারে। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার মানুষ বিুব্ধ হয়ে ওঠেন। স্থানীয় ইউপি মেম্বার বাকের আলীর নেতৃত্বে বসানো হয় ফের সালিস।
প্রত্যদর্শী আমিনুর রহমান জানান, ছেলেটিকে যখন চোর সন্দেহে মারা হয়, তখন আমি হাঁসের খামারে ছিলাম। দৌড়ে এসে দেখি আসাদ, মিঠু ও দুখু তাকে লাঠি দিয়ে মারছে। আমি তাদের বারণ করি। কিন্তু তারা তা শোনেনি।
নির্যাতিতের চাচাতো ভাই দুলু মিয়া জানান, সকালে মোবাইলে জানতে পেরে গিয়ে দেখি রাকিবুলকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাকিবুলের অবস্থা খারাপ। আমরা তার উন্নত চিকিৎসা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মেম্বার বাকের আলী জানান, শিশুটিকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। সালিসে স্থানীয়রা সকালের বিচারের তীব্র প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে আগের বিচার বাতিল করে শিশুটির চিকিৎসার জন্য ৩০ হাজার টাকা তালেব কাজীকে জরিমানা করা হয়। মেম্বার জানান, টাকা সাথে সাথে নেয়া হয়। কিন্তু শিশুটিকে তখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
নির্যাতিত শিশুর চাচা আতাউর রহমান জানান, রাকিবুলকে উদ্ধার করতে না পেরে আমি সন্ধ্যার পর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। এরপর কনস্টেবলসহ এসআই ফজলু গিয়ে রাকিবুলকে উদ্ধার করে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসা চলছিল। অনেক কষ্টে আমরা চিকিৎসা চালাতে থাকি। এরই মধ্যে অবস্থার অবনতি হলে রাকিবুলকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে ভর্তি করি। সে এখনো হাঁটতে পারছে না। তিনি আরো জানান, কোলকোন্দ থেকে তালেব কাজীর ছেলে নাইম, ফারুক, আমিনসহ চার-পাঁচজন আমাকে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি তালেব কাজীকে আটক করেছে পুলিশ। সেখানে যাওয়া মাত্রই এসআই ফজলু আমাকে থানায় নিয়ে যান। একই সাথে বলেন, অভিযোগ দিয়ে আর যোগাযোগ করলে না কেন? পরে আমাকে ওসির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখি তালেব কাজীও আছেন। মেম্বার বাকেরও আছেন। এ সময় ওসি সাহেব বলেন, তুমি কী করবে। মামলা করবে কি না। তখন আমি বলি, স্যার আমি তো রাকিবুলের চাচা। ওর বাবা মেডিক্যালে আছে। ওদের সাথে কথা বলতে হবে। তখন ওসি সাহেব বলেন, ঠিক আছে বিষয়টি যেহেতু মীমাংসা হয়েছে, তাই দু’টি কাগজে সই করো। আর চিকিৎসায় যে টাকা লাগবে, তা তালেব কাজী দেবেন। এরপর তারা আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক সই নেন।
এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বার বাকের আলী জানান, কাজী তালেবকে যখন থানায় আটক করা হয়; তখন আমাকে ফোন দেয়া হয়। ফোন পেয়ে সেখানে যাই। সেখানে আতাউর ও কাজী দু’টি কাগজে সই করেন। সেখানে আরো পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে রাকিবুলের চাচা আতাউর রহমান জানান, আমাদের কোনো টাকা দেয়া হয়নি।
গঙ্গাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল কাদের জানান, আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। সেলফোনে বিষয়টি জেনে এসআই ফজুলকে পাঠিয়ে ছেলেটিকে প্রথমে গঙ্গাচড়া ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। তাদের কাছ থেকে অভিযোগ চাই; কিন্তু কেউ অভিযোগ না করায় এসআই ফজলু নিজেই বাদি হয়ে একটি সুয়োমুটো মামলা করেছেন। তদন্ত চলছে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্যাতিত রাকিবুলের চাচা আতাউর রহমানের অভিযোগ, নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে আটকের পর কাজী তালেবকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রাকিবুলের বাবা আশরাফ আলী জানান, আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমি নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আরডিআরএসের মানবাধিকার কর্মী বিলকিস বেগম জানান, পুলিশের কাছে বিচার না পেয়ে রাকিবুলের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান ডা: শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি শিশুটিকে। শিশুটির পায়ে ও কোমরে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা অমানবিক। -
এবার
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনার চরে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র রাকিবুল
ইসলামকে চুরির অপবাদে অমানুষিক নির্যাতন করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কাজী
তালেব মাস্টার ও তার ছেলেরা। রশিতে বেঁধে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে গায়ে গরম
পানির ডলুনি এবং সূর্যের দিকে চোখ রাখতে বাধ্য করা হয় শিশুটিকে।
নির্যাতনের পর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮ দিন ধরে চিকিৎসাধীন
রাকিবুল এখনো গুরুতর অসুস্থ। এ দিকে রাকিবুলের পরিবারের প থেকে অভিযোগ দেয়া
হলেও পুলিশ এবং মাতব্বরা ৩০ হাজার টাকায় মীমাংসার নাটক বানিয়ে থানায়
জোরপূর্বক সই নিয়ে আটক কাজী তালেবকে ছেড়ে দেয়। এ দিকে শিশুটির উন্নত
চিকিৎসা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নয়া
দিগন্তের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
নির্যাতিত রাকিবুলের মা আদুরী বেগম জানান, ২৮ জুলাই বিয়ে খেতে যাই আমি। রাকিবুল সেদিন স্কুল যায়নি। স্কুল কামাই করায় বাবার ধমক খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সারা দিন ঘুরেফিরে শেষে আবুলিয়া বাজারে যায় রাকিবুল। সেখানে ুধার জ্বালা মেটাতে এর-ওর কাছে চেয়ে কিছু খেয়ে রাতে আশ্রয় নেয় কাজী তালেব মাস্টারের গালামালের দোকান বসুনিয়া ভ্যারাইটি স্টোরে। ভোরে দারোয়ান টের পেয়ে খবর দেয় মালিককে। শুরু হয় চুরির অপবাদে অমানুষিক নির্যাতন। রাকিবুল চুরির জন্য দোকানে ঢুকেছে অপবাদ দিয়ে তালেব কাজী, আসাদ, মিঠু, দুখু ও সামাদ নামে পাঁচ যুবক তাকে রড দিয়ে পা, পেট, পিঠ ও কোমরে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে ইনজেনকশন দিয়ে অজ্ঞান করে পেটানো হয়।
আদুরী বেগম আরো জানান, সকালে এ নিয়ে বসে সালিস। তালেব কাজী দাবি করেন, দোকান থেকে চুরি হয়েছে ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে উপস্থিত হন রাকিবুলের বাবা আশরাফ আলী। সালিসে আশরাফ আলীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নিরুপায় আমার স্বামী দিনমজুর আশরাফ ছেলে রাকিবুলকে তালেব কাজীর হাতে তুলে দিয়ে দয়া ভিা চান। তবে রাকিবুলকে ফের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন করেন তালেব মাস্টার। কাজী তালেব মাস্টারের বাড়িতে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রশি দিয়ে বেঁধে তার ছেলের ওপর ফের চালানো হয় নির্যাতন। হাতে রশি বেঁধে মাটিতে শুইয়ে গায়ে গরম পানি দিয়ে শরীরে দেয়া হয় ডলুনি। সূর্যের দিকে মুখ করিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। এতে তার ছেলে জ্ঞান হারায়। তখন রাকিবুলকে নিয়ে যাওয়া হয় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানালে আবার ফিরিয়ে আনা হয় আবুলিয়া বাজারে। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার মানুষ বিুব্ধ হয়ে ওঠেন। স্থানীয় ইউপি মেম্বার বাকের আলীর নেতৃত্বে বসানো হয় ফের সালিস।
প্রত্যদর্শী আমিনুর রহমান জানান, ছেলেটিকে যখন চোর সন্দেহে মারা হয়, তখন আমি হাঁসের খামারে ছিলাম। দৌড়ে এসে দেখি আসাদ, মিঠু ও দুখু তাকে লাঠি দিয়ে মারছে। আমি তাদের বারণ করি। কিন্তু তারা তা শোনেনি।
নির্যাতিতের চাচাতো ভাই দুলু মিয়া জানান, সকালে মোবাইলে জানতে পেরে গিয়ে দেখি রাকিবুলকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাকিবুলের অবস্থা খারাপ। আমরা তার উন্নত চিকিৎসা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মেম্বার বাকের আলী জানান, শিশুটিকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। সালিসে স্থানীয়রা সকালের বিচারের তীব্র প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে আগের বিচার বাতিল করে শিশুটির চিকিৎসার জন্য ৩০ হাজার টাকা তালেব কাজীকে জরিমানা করা হয়। মেম্বার জানান, টাকা সাথে সাথে নেয়া হয়। কিন্তু শিশুটিকে তখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
নির্যাতিত শিশুর চাচা আতাউর রহমান জানান, রাকিবুলকে উদ্ধার করতে না পেরে আমি সন্ধ্যার পর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। এরপর কনস্টেবলসহ এসআই ফজলু গিয়ে রাকিবুলকে উদ্ধার করে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসা চলছিল। অনেক কষ্টে আমরা চিকিৎসা চালাতে থাকি। এরই মধ্যে অবস্থার অবনতি হলে রাকিবুলকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে ভর্তি করি। সে এখনো হাঁটতে পারছে না। তিনি আরো জানান, কোলকোন্দ থেকে তালেব কাজীর ছেলে নাইম, ফারুক, আমিনসহ চার-পাঁচজন আমাকে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি তালেব কাজীকে আটক করেছে পুলিশ। সেখানে যাওয়া মাত্রই এসআই ফজলু আমাকে থানায় নিয়ে যান। একই সাথে বলেন, অভিযোগ দিয়ে আর যোগাযোগ করলে না কেন? পরে আমাকে ওসির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখি তালেব কাজীও আছেন। মেম্বার বাকেরও আছেন। এ সময় ওসি সাহেব বলেন, তুমি কী করবে। মামলা করবে কি না। তখন আমি বলি, স্যার আমি তো রাকিবুলের চাচা। ওর বাবা মেডিক্যালে আছে। ওদের সাথে কথা বলতে হবে। তখন ওসি সাহেব বলেন, ঠিক আছে বিষয়টি যেহেতু মীমাংসা হয়েছে, তাই দু’টি কাগজে সই করো। আর চিকিৎসায় যে টাকা লাগবে, তা তালেব কাজী দেবেন। এরপর তারা আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক সই নেন।
এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বার বাকের আলী জানান, কাজী তালেবকে যখন থানায় আটক করা হয়; তখন আমাকে ফোন দেয়া হয়। ফোন পেয়ে সেখানে যাই। সেখানে আতাউর ও কাজী দু’টি কাগজে সই করেন। সেখানে আরো পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে রাকিবুলের চাচা আতাউর রহমান জানান, আমাদের কোনো টাকা দেয়া হয়নি।
গঙ্গাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল কাদের জানান, আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। সেলফোনে বিষয়টি জেনে এসআই ফজুলকে পাঠিয়ে ছেলেটিকে প্রথমে গঙ্গাচড়া ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। তাদের কাছ থেকে অভিযোগ চাই; কিন্তু কেউ অভিযোগ না করায় এসআই ফজলু নিজেই বাদি হয়ে একটি সুয়োমুটো মামলা করেছেন। তদন্ত চলছে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্যাতিত রাকিবুলের চাচা আতাউর রহমানের অভিযোগ, নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে আটকের পর কাজী তালেবকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রাকিবুলের বাবা আশরাফ আলী জানান, আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমি নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আরডিআরএসের মানবাধিকার কর্মী বিলকিস বেগম জানান, পুলিশের কাছে বিচার না পেয়ে রাকিবুলের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান ডা: শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি শিশুটিকে। শিশুটির পায়ে ও কোমরে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা অমানবিক। - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/46833#sthash.Zi51r22P.dpuf
নির্যাতিত রাকিবুলের মা আদুরী বেগম জানান, ২৮ জুলাই বিয়ে খেতে যাই আমি। রাকিবুল সেদিন স্কুল যায়নি। স্কুল কামাই করায় বাবার ধমক খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সারা দিন ঘুরেফিরে শেষে আবুলিয়া বাজারে যায় রাকিবুল। সেখানে ুধার জ্বালা মেটাতে এর-ওর কাছে চেয়ে কিছু খেয়ে রাতে আশ্রয় নেয় কাজী তালেব মাস্টারের গালামালের দোকান বসুনিয়া ভ্যারাইটি স্টোরে। ভোরে দারোয়ান টের পেয়ে খবর দেয় মালিককে। শুরু হয় চুরির অপবাদে অমানুষিক নির্যাতন। রাকিবুল চুরির জন্য দোকানে ঢুকেছে অপবাদ দিয়ে তালেব কাজী, আসাদ, মিঠু, দুখু ও সামাদ নামে পাঁচ যুবক তাকে রড দিয়ে পা, পেট, পিঠ ও কোমরে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে ইনজেনকশন দিয়ে অজ্ঞান করে পেটানো হয়।
আদুরী বেগম আরো জানান, সকালে এ নিয়ে বসে সালিস। তালেব কাজী দাবি করেন, দোকান থেকে চুরি হয়েছে ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে উপস্থিত হন রাকিবুলের বাবা আশরাফ আলী। সালিসে আশরাফ আলীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নিরুপায় আমার স্বামী দিনমজুর আশরাফ ছেলে রাকিবুলকে তালেব কাজীর হাতে তুলে দিয়ে দয়া ভিা চান। তবে রাকিবুলকে ফের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন করেন তালেব মাস্টার। কাজী তালেব মাস্টারের বাড়িতে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রশি দিয়ে বেঁধে তার ছেলের ওপর ফের চালানো হয় নির্যাতন। হাতে রশি বেঁধে মাটিতে শুইয়ে গায়ে গরম পানি দিয়ে শরীরে দেয়া হয় ডলুনি। সূর্যের দিকে মুখ করিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। এতে তার ছেলে জ্ঞান হারায়। তখন রাকিবুলকে নিয়ে যাওয়া হয় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানালে আবার ফিরিয়ে আনা হয় আবুলিয়া বাজারে। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার মানুষ বিুব্ধ হয়ে ওঠেন। স্থানীয় ইউপি মেম্বার বাকের আলীর নেতৃত্বে বসানো হয় ফের সালিস।
প্রত্যদর্শী আমিনুর রহমান জানান, ছেলেটিকে যখন চোর সন্দেহে মারা হয়, তখন আমি হাঁসের খামারে ছিলাম। দৌড়ে এসে দেখি আসাদ, মিঠু ও দুখু তাকে লাঠি দিয়ে মারছে। আমি তাদের বারণ করি। কিন্তু তারা তা শোনেনি।
নির্যাতিতের চাচাতো ভাই দুলু মিয়া জানান, সকালে মোবাইলে জানতে পেরে গিয়ে দেখি রাকিবুলকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাকিবুলের অবস্থা খারাপ। আমরা তার উন্নত চিকিৎসা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মেম্বার বাকের আলী জানান, শিশুটিকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। সালিসে স্থানীয়রা সকালের বিচারের তীব্র প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে আগের বিচার বাতিল করে শিশুটির চিকিৎসার জন্য ৩০ হাজার টাকা তালেব কাজীকে জরিমানা করা হয়। মেম্বার জানান, টাকা সাথে সাথে নেয়া হয়। কিন্তু শিশুটিকে তখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
নির্যাতিত শিশুর চাচা আতাউর রহমান জানান, রাকিবুলকে উদ্ধার করতে না পেরে আমি সন্ধ্যার পর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। এরপর কনস্টেবলসহ এসআই ফজলু গিয়ে রাকিবুলকে উদ্ধার করে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসা চলছিল। অনেক কষ্টে আমরা চিকিৎসা চালাতে থাকি। এরই মধ্যে অবস্থার অবনতি হলে রাকিবুলকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে ভর্তি করি। সে এখনো হাঁটতে পারছে না। তিনি আরো জানান, কোলকোন্দ থেকে তালেব কাজীর ছেলে নাইম, ফারুক, আমিনসহ চার-পাঁচজন আমাকে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি তালেব কাজীকে আটক করেছে পুলিশ। সেখানে যাওয়া মাত্রই এসআই ফজলু আমাকে থানায় নিয়ে যান। একই সাথে বলেন, অভিযোগ দিয়ে আর যোগাযোগ করলে না কেন? পরে আমাকে ওসির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখি তালেব কাজীও আছেন। মেম্বার বাকেরও আছেন। এ সময় ওসি সাহেব বলেন, তুমি কী করবে। মামলা করবে কি না। তখন আমি বলি, স্যার আমি তো রাকিবুলের চাচা। ওর বাবা মেডিক্যালে আছে। ওদের সাথে কথা বলতে হবে। তখন ওসি সাহেব বলেন, ঠিক আছে বিষয়টি যেহেতু মীমাংসা হয়েছে, তাই দু’টি কাগজে সই করো। আর চিকিৎসায় যে টাকা লাগবে, তা তালেব কাজী দেবেন। এরপর তারা আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক সই নেন।
এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বার বাকের আলী জানান, কাজী তালেবকে যখন থানায় আটক করা হয়; তখন আমাকে ফোন দেয়া হয়। ফোন পেয়ে সেখানে যাই। সেখানে আতাউর ও কাজী দু’টি কাগজে সই করেন। সেখানে আরো পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে রাকিবুলের চাচা আতাউর রহমান জানান, আমাদের কোনো টাকা দেয়া হয়নি।
গঙ্গাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল কাদের জানান, আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। সেলফোনে বিষয়টি জেনে এসআই ফজুলকে পাঠিয়ে ছেলেটিকে প্রথমে গঙ্গাচড়া ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। তাদের কাছ থেকে অভিযোগ চাই; কিন্তু কেউ অভিযোগ না করায় এসআই ফজলু নিজেই বাদি হয়ে একটি সুয়োমুটো মামলা করেছেন। তদন্ত চলছে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্যাতিত রাকিবুলের চাচা আতাউর রহমানের অভিযোগ, নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে আটকের পর কাজী তালেবকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রাকিবুলের বাবা আশরাফ আলী জানান, আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমি নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আরডিআরএসের মানবাধিকার কর্মী বিলকিস বেগম জানান, পুলিশের কাছে বিচার না পেয়ে রাকিবুলের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান ডা: শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি শিশুটিকে। শিশুটির পায়ে ও কোমরে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা অমানবিক। - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/46833#sthash.Zi51r22P.dpuf
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন