সদ্য বিলীন হওয়া ছিটমহলগুলির অধিকাংশেরই জমির নথিপত্র সংক্রান্ত কাগজপত্র খুঁজে পায়নি দুই দেশের প্রশাসন। সোমবার কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন স্থলবন্দর চ্যাংরাবান্ধায় বিডিও অফিসে দুই দেশের প্রশাসনিক পর্যায়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯ টি ছিটমহলের জমির দলিলের রেকর্ড ভারতীয় প্রশাসনিক কর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ভারতের পক্ষ থেকে ৪৩ টি ছিটমহলের জমির রেকর্ড বাংলাদেশের প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
যেখানে ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহল ভারতে বিলীন হয়েছে। ভারতীয় ছিটমহলের মোট জমির পরিমাণ ১৭ হাজার হেক্টর। বাংলাদেশি ছিটমহলের মোট জমির পরিমাণ সাত হাজার হেক্টর। সেই জমির অর্ধেকের মাত্র নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে।
কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “যে সমস্ত জমির রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে তাই এ দিন হস্তান্তর হয়েছে। বাকি জমির নথি পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে হবে না। সমীক্ষার মাধ্যমে নতুন করে জমির নথি তৈরি করা হবে।” বাংলাদেশের লালমণিরহাটের ডিসি হবিবুর রহমান বলেন, “একশো বছর আগের জমির নথি ঐতিহাসিক দলিল। সে দিক তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি খোঁজার কাজ আমরা জারি রেখেছি। তা ঢাকায় বা কলকাতায় থাকতে পারে। তা না পেলেও কোনও অসুবিধে হবে না।” নাগরিক অধিকার সমন্বয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়কারী দীপ্তিমান সেনগুপ্ত দাবি করেন, ‘‘সরকারি জমির রেকর্ড যেমন হারিয়ে গিয়েছে তেমনই ছিটমহলের সাধারণ মানুষের জমির রেকর্ডও হারিয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “ওই এলাকাগুলিতে ক্যাম্প বসিয়ে জমির সমীক্ষা করা উচিত সরকারের। যারা যে অবস্থানে আছেন, তাঁদের সে ভাবেই জমি বণ্টন করা উচিত।”

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাংলাদেশ থেকে ৯৭৯ জন বাসিন্দা ভারতে ফেরার ব্যাপারে যৌথ জনমত সমীক্ষায় মত দিয়েছিলেন। নতুন করে আরও ৩৯ জন মত পাল্টে বাংলাদেশে থাকতে চেয়ে আবেদন করেছেন। নতুন করে আবার আরও ১ জন ভারতে আসার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। এ ছাড়াও এক গৃহবধূর স্বামী ভারতে আসার ব্যাপারে মত দিলেও ওই গৃহবধূ সে সময় হাসপাতালে থাকায় মতামত দিতে পারেননি। সে কারণে নতুন করে ১৭ অগস্ট ফের এক দিনের জন্য ওই ছিটমহলগুলিতে যৌথ সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রশাসন জানিয়েছে, পঞ্চগড় থেকে ৩১ জন এবং কুরিগ্রাম থেকে ৮ জন মত পাল্টাতে চান। যাঁরা ভারতে আসবেন তাঁদের জমি বিক্রির ক্ষেত্রে যাতে কোনও অসুবিধে না হয় সেদিকে বাংলাদেশ প্রশাসন লক্ষ্য রাখছে বলে জানান লালমণিরহাটের ডিসি। তিনি জানান, ওই বাসিন্দারা যাতে জমির ন্যায্য দাম পান, সে ব্যাপারে প্রশাসন নজর রাখছে। কারও জমি যাতে কেউ ভয় দেখিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে নিতে না পারে সেদিকেও নজর রাখছে প্রশাসন।
এ দিন সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ বাংলাদেশের লালমণিরহাটের ডিসি হবিবুর রহমান, ১৫ বিজিবি-র লালমণিরহাটের কমান্ডিং অফিসার বজরুল রহমান হায়াতির নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত হয়ে ভারতে আসেন। চ্যাংরাবান্ধা বিডিও অফিসে বৈঠকে যোগ দেন তাঁরা। সেখানে কোচবিহারের জেলাশাসক পি ঊল্গানাথন, পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব, রাজশাহিতে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার সন্দীপ মিত্র সহ ভারতের ১৪ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। বৈঠকে জমির রেকর্ড হস্তান্তরের পাশাপাশি ওপাশ থেকে যাঁরা ভারতে ফিরবেন তাঁদের নিয়েও আলোচনা হয়। আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩১ নভেম্বর ওই বাসিন্দারা ভারতে আসবেন। তাঁর আগে তাঁদের ট্রানজিট পাশ দেবে বাংলাদেশ সরকার। ওই বাসিন্দারা কী ভাবে আসবেন, তাঁদের জিনিসপত্র কী ভাবে নিয়ে যাওয়া হবে সেক্ষেত্রে পরিবহণের কী ব্যবস্থা থাকবে,  নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা থাকবে, কোথায় ইমিগ্রেশন অফিস হবে, সে সব বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে।
জেলাশাসক জানান, যাঁরা ওপাশ থেকে আসবেন তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁদের দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ এবং হলদিবাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, “সমস্ত রকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যে সমস্ত বাসিন্দারা ভারতে আসবেন তাঁদের কোনওরকম অসুবিধে যাতে না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।”