- rangpur news

Breaking

Breaking News

rangpur news

This is news blog site.Here have important online newspaper.if you Concert:MD.Gulam azam sarkar. E-mail:gulamazam@gmail.com Mobil:01735632338

Windows

test banner

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০১৫




পঞ্চগড় : দেবীগঞ্জের দহলা খাগড়াবাড়ি ছিটমহলের সরকারপাড়া গ্রামের প্রমিলা, কুলধছ, দেখলা বালা ও ধুলি বামন ভারতে যেতে ফরম পূরণ করেছেন

মো. গোলাম আযম সরকার, রংপুর থেকে : দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দীদশার অবসান হলো বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে। এই আয়োজনকে স্মরণীয় করে রাখতে ছিটমহলবাসী  নিজ নিজ আয়োজনে ৩১ জুলাই  রাত ১২ টায় পালন করলো বিভিন্ন কর্মসূচি। ১৯৪৭ সাল থেকে ছিটমহলবাসী ছিল একধরনের বন্দীদশার মধ্যে। ছিটমহলবাসীদের কর্মসূচির মধ্যে ছিল  রাত ১২টায় ভারতীয় পতাকা নামানো, রাত ১২টায় ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বলন করে বিজয় দিবসের শুভসূচনা, মশাল জ্বালানো, ১ আগস্ট প্রত্যুষে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সম্মিলিতভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন।

এক অনুসন্ধানে জানা গেছে,  বিভিন্ন বিষয়ে সৃষ্টি হওয়া অসঙ্গতি দূর না করেই বিনিময় প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হওয়ায় এসব এলাকায় হানাহানিসহ বিভিন্নেে ত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।  বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সবচেয়ে বড় ছিটমহলটির নাম দাশিয়ার ছড়া। যার নম্বর ১৫০। এটি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায়। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে প্রকাশ, ছিটমহলটির আয়তন এক হাজার ৬৬৩ একর। এখানে সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী লোক সংখ্যা সাত হাজার ৬৯জন। এর মধ্যে ২৮৪ জন ভারতে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছেন। এর মধ্যে মুসলমান ১২৬ জন এবং ১৫৮ জন হিন্দু।

এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, “ছিটমহল নিয়ে ৪১ বছরের বিলম্বিত পাওনা ভারত সরকার বাংলাদেশকে দিয়েছে। কিন্তু বিনিময়ের ব্যাপারে অসংখ্য অসঙ্গতি রয়েছে। দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে এসব অসঙ্গতি দূর না করেই বিনিময় প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় এসব এলাকায় অস্থিরতা থাকবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে। বাড়বে হানাহানি, কাটাকাটি। কিন্তু দুই দেশেই এসব বিষয় নিয়ে চুপ আছে। জরুরি ভিত্তিতে অসংগতিগুলো দূর করতে দুই সরকারেরই উচিৎ প্রকাশ্যে বিবৃতি ও প্রতিশ্রুতি দেয়া এবং তা দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন করা।” নিয়মানুযায়ী ছিটমহলের বাসিন্দারাও স্ব স্ব দেশের সাথে সংযুক্ত থাকবেন। এর মাধ্যমে বদলে গেল দুই দেশের মানচিত্র। বিধি অনুযায়ী ভারতীয় ছিটমহলগুলো থেকে ৮৭৯ জন বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত না হয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য সংযুক্ত হয়েছেন। তারা তিন আগস্ট থেকে বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে ভারতে যান। সেখানকার সরকার তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য তিন হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আর ভারত থেকে বাংলাদেশে সংযুক্ত হওয়ার জন্য কেউ নাম লেখাননি।

ছিটমহলবাসীর  আনন্দকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ৩১ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারীর ১৩৫ ও ১৩৬ নং ছিটে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির জেলা কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। বিদায়ী প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিল, বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি ও ঐতিহ্যবাহি লাঠি খেলা এবং সন্ধ্যার পর স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল, জারি-সারি ও ভাওয়াইয়া গানের আসর। তবে সরকারিভাবে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। ৬৮ বছরের বন্দী জীবনের মুক্তির চিহ্নকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে  উভয়দেশের ছিটমহলবাসীরা ৬৮টি মোববাতি প্রজ্বলন করা ছাড়াও  শুক্রবার রাত ১২টায় ১ মিনিটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলে প্রায় ১৭ হাজার ১৬০ একর জমির মালিক হলেন বাংলাদেশ সরকার অপরদিকে  ভারতের ভেতর থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের প্রায় ৭ হাজার ১১০ একর ভূমির মালিকানা পেলেন ভারত সরকার। সর্বশেষ তথ্যমতে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ১১১টি ছিটমহলের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার অধীনে ১৮টি ও লালমনিরহাট জেলার অধীনে ৩৩টি। এগুলো ভারতের কোচবিহার জেলার প্রশাসনিক সীমানার ভেতর। অপর দিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার। এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি এবং নীলফামারীতে রয়েছে ৪টি। লালমনিরহাটের ৫৯টির মধ্যে সদর উপজেলায় ২টি, হাতীবান্ধা উপজেলায় ২টি ও বাকী ৫৫টি পাটগ্রাম উপজেলার ভিতর। পাটগ্রামের ৫৫টির মধ্যে ১৭টি ছিটমহল জনবসতি শূন্য, আবাদি জমি। এ দিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশী ৫১টি ছিটমহলে মধ্যে নলগ্রাম, ফল্লাপুর, ধরলসুতি মিগীরপুর, মশাল ডাঙ্গা ছিটমহলে রাত ৮টা থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত মশাল ও মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখেন তারা।

জরিপ নিয়ে কিছু কথা : নীলফামারীর ডিমলায় ৪টি ছিটমহলের জনগণনায় ১১৯টি পরিবারে ৫৪৫জন সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাচ্ছে। নীলফামারীর ৪টি ছিটমহলের  কোনো পরিবার সদস্য ভারতে যেতে জনগণনার সময় আবেদন করেনি। ৪টি ছিটমহলের ১১৯টি পরিবারের সকল সদস্য বাংলাদেশ থাকার জন্য জনগণনায় স্বার করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় ২০১১ সালের ১৫ জুলাই হতে ১৮ জুলাই পর্যন্ত জনগণনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার অভ্যন্তরে ৪টি ছিটমহলের জরিপে ১১৯টি পরিবারের ৫০৬ জন জনসংখ্যা ছিল। যার মধ্যে পুরুষ ২৫৮ জন ও নারী ২৪৮ জন। ২০১৫ সালের জনগণনায় পরিবারের সংখ্যা ঠিক থাকলেও জনসংখ্যা দাড়িয়েছে ৫৪৫ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ২৮১ ও নারী ২৬৪ জন। যা ২০১১ সালের চেয়ে এবার ২০১৫ সালে এসে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ জন। এবারের জরিপে শিশু জন্ম, বিয়ে ও মৃত্যুর হিসাব যোগ বিয়োগ করা হয়। বিয়ের কারণে যেসব মেয়ে ছিটমহলের বাইরে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে চলে গেছে তাদের জরিপে বাদ দেয়া হয়েছে। আবার বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে ছিটমহলে যে সব মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তাদের এই জরিপে সংযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া অনেকে মৃত্যুবরণ করায় তারাও বাদ গেছে বর্তমান জরিপে। আর বয়স বেশি হওয়ার কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে ১ জনকে।

সূত্র মতে ২০১১ সালে ২৮ নম্বর বড়খানকী ছিটমহলে ২১ পরিবারে পুরুষ ৪৩, নারী ৪৩ সহ ৮৬ জন ছিল। এবারের জরিপে এই ছিটমহলে পরিবারের সংখ্যা ঠিক থাকলেও ৩ জন বৃদ্ধি পেয়ে মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৫ ও নারী ৪৪ জন। ২৯ নম্বর বড়খানকীবাড়ি গিদালদহ ছিটমহলে ২০১১ সালে পরিবারের সংখ্যা ৪৫। জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ৯২ জন ও নারী ৯৪ জনসহ ১৮৬ জন ছিল। এবারে  জনসংখ্যা ৮ জন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৪ জনে। এদের মধ্যে পুরুষ ৯৬ জন ও নারী ৯৮ জন।

এদিকে ৩০ নম্বর  বড়খানকীবাড়ী খারিজা গীতালদহ ছিটমহলে ২০১১ সালে পরিবারের সংখ্যা ছিল ৮। জনসংখ্যা পুরুষ ১৯ ও নারী  ১৮সহ ৩৭ জন। এবার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৪ জন ও নারী ১৮ জন। ৩১ নম্বর নগর জিগাবাড়ি ছিটমহলে ২০১১ সালে ৪৫টি পরিবারের জনসংখ্যা ছিল ১৯৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১০৪ জন ও নারী ৯৩ জন। ২০১৫ সালের জরিপে এখানে জনসংখ্যা ২৩ জন বৃদ্ধি পেয়ে মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২০ জনে। এরমধ্যে পুরুষ ১১৬ জন ও নারী ১০৪ জন। ডিমলা উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের চেয়ে চলতি বছর ৩৯ জন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের জনগণনায় পুরুষ ২৮১ ও নারী ২৬৪ জন। তারা সকলে বাংলাদেশে থাকার জন্য স্বার করেছেন। ৪টি ছিটমহলে মোট জমির পরিমাণ ১৭৪ দশমিক ০৩ একর।

ছিটমহলে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নির্দেশ :  বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ১১১টি ছিটমহল এলাকায় শিগগিরই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন। তিনি শনিবার ১ আগস্ট সকালে মহাব্যবস্থাপকদের নিয়ে বিআরইবির সম্মেলনে চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন এ কথা জানান। তিনি এ সময় বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ওই এলাকার সাত হাজার ৮শ’ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও ছিটমহলের বাসিন্দাদের দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকদের নির্দেশ দিয়েছেন বিআরইবির চেয়ারম্যান। ছিটমহলের ওই পরিবারগুলোকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার নতুন লাইন করতে হবে।

১১১টি ছিটমহলে উড়লো বাংলাদেশের পতাকা : গত ৩১ জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা এক মিনিটে উভয় দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় হবার কারণে দীর্ঘ ৬৮ বছর দুঃসহ যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে ১১১টি ছিটমহলের বাসিন্দারা পেয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। তাই ছিটমহলগুলোতে চলছে আনন্দের বন্যা। শনিবার থেকে ভারতের ছিটমহলে বাংলাদেশের পতাকা ও বাংলাদেশের ছিটমহলে ভারতের পতাকা  উড়ে। বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশের সীমানায় চলে আসে। যার আয়তন ১৭১৬০.৬৩ একর। অন্যদিকে ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল হয়ে যায় ভারতের। এগুলোর আয়তন ৭১১০.০২ একর।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে ভারতের মোট ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। বাংলাদেশের আলো-বাতাস আর খাবার খেয়ে জীবনধারণ করলেও নাগরিকত্ব না থাকায় দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে ওরা শিা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক সব অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।

৬৮ ফুট দৈর্ঘের পতাকা উড়িয়ে বিজয় মিছিল : বিলুপ্ত হওয়া লালমনিরহাটের ৫৯ ছিটমহলের মানুষ শনিবার সকালে পাটগ্রামে বিজয় উল্লাস করেছে।  ৬৮ ফুট দৈর্ঘ্যরে পতাকা সহকারে এ বিজয় মিছিল করে।

মিছিলে পাটগ্রাম উপজেলার ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষ অংশ নেয়। পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুলের নেতৃত্বে মিছিলটি উপজেলা শহরের সকল সড়ক প্রদণি করে। বিজয় মিছিলে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় গান পরিবেশন করা হয়েছে।
 8
 3  3
পঞ্চগড় : দেবীগঞ্জের দহলা খাগড়াবাড়ি ছিটমহলের সরকারপাড়া গ্রামের প্রমিলা, কুলধছ, দেখলা বালা ও ধুলি বামন ভারতে যেতে ফরম পূরণ করেছেন
মো. গোলাম আযম সরকার, রংপুর থেকে : দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দীদশার অবসান হলো বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে। এই আয়োজনকে স্মরণীয় করে রাখতে ছিটমহলবাসী  নিজ নিজ আয়োজনে ৩১ জুলাই  রাত ১২ টায় পালন করলো বিভিন্ন কর্মসূচি। ১৯৪৭ সাল থেকে ছিটমহলবাসী ছিল একধরনের বন্দীদশার মধ্যে। ছিটমহলবাসীদের কর্মসূচির মধ্যে ছিল  রাত ১২টায় ভারতীয় পতাকা নামানো, রাত ১২টায় ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বলন করে বিজয় দিবসের শুভসূচনা, মশাল জ্বালানো, ১ আগস্ট প্রত্যুষে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সম্মিলিতভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে,  বিভিন্ন বিষয়ে সৃষ্টি হওয়া অসঙ্গতি দূর না করেই বিনিময় প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হওয়ায় এসব এলাকায় হানাহানিসহ বিভিন্ন েেত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।  বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সবচেয়ে বড় ছিটমহলটির নাম দাশিয়ার ছড়া। যার নম্বর ১৫০। এটি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায়। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে প্রকাশ, ছিটমহলটির আয়তন এক হাজার ৬৬৩ একর। এখানে সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী লোক সংখ্যা সাত হাজার ৬৯জন। এর মধ্যে ২৮৪ জন ভারতে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছেন। এর মধ্যে মুসলমান ১২৬ জন এবং ১৫৮ জন হিন্দু।
এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, “ছিটমহল নিয়ে ৪১ বছরের বিলম্বিত পাওনা ভারত সরকার বাংলাদেশকে দিয়েছে। কিন্তু বিনিময়ের ব্যাপারে অসংখ্য অসঙ্গতি রয়েছে। দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে এসব অসঙ্গতি দূর না করেই বিনিময় প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় এসব এলাকায় অস্থিরতা থাকবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে। বাড়বে হানাহানি, কাটাকাটি। কিন্তু দুই দেশেই এসব বিষয় নিয়ে চুপ আছে। জরুরি ভিত্তিতে অসংগতিগুলো দূর করতে দুই সরকারেরই উচিৎ প্রকাশ্যে বিবৃতি ও প্রতিশ্রুতি দেয়া এবং তা দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন করা।” নিয়মানুযায়ী ছিটমহলের বাসিন্দারাও স্ব স্ব দেশের সাথে সংযুক্ত থাকবেন। এর মাধ্যমে বদলে গেল দুই দেশের মানচিত্র। বিধি অনুযায়ী ভারতীয় ছিটমহলগুলো থেকে ৮৭৯ জন বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত না হয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য সংযুক্ত হয়েছেন। তারা তিন আগস্ট থেকে বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে ভারতে যান। সেখানকার সরকার তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য তিন হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আর ভারত থেকে বাংলাদেশে সংযুক্ত হওয়ার জন্য কেউ নাম লেখাননি।
ছিটমহলবাসীর  আনন্দকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ৩১ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারীর ১৩৫ ও ১৩৬ নং ছিটে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির জেলা কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। বিদায়ী প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিল, বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি ও ঐতিহ্যবাহি লাঠি খেলা এবং সন্ধ্যার পর স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল, জারি-সারি ও ভাওয়াইয়া গানের আসর। তবে সরকারিভাবে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। ৬৮ বছরের বন্দী জীবনের মুক্তির চিহ্নকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে  উভয়দেশের ছিটমহলবাসীরা ৬৮টি মোববাতি প্রজ্বলন করা ছাড়াও  শুক্রবার রাত ১২টায় ১ মিনিটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলে প্রায় ১৭ হাজার ১৬০ একর জমির মালিক হলেন বাংলাদেশ সরকার অপরদিকে  ভারতের ভেতর থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের প্রায় ৭ হাজার ১১০ একর ভূমির মালিকানা পেলেন ভারত সরকার। সর্বশেষ তথ্যমতে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ১১১টি ছিটমহলের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার অধীনে ১৮টি ও লালমনিরহাট জেলার অধীনে ৩৩টি। এগুলো ভারতের কোচবিহার জেলার প্রশাসনিক সীমানার ভেতর। অপর দিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার। এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি এবং নীলফামারীতে রয়েছে ৪টি। লালমনিরহাটের ৫৯টির মধ্যে সদর উপজেলায় ২টি, হাতীবান্ধা উপজেলায় ২টি ও বাকী ৫৫টি পাটগ্রাম উপজেলার ভিতর। পাটগ্রামের ৫৫টির মধ্যে ১৭টি ছিটমহল জনবসতি শূন্য, আবাদি জমি। এ দিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশী ৫১টি ছিটমহলে মধ্যে নলগ্রাম, ফল্লাপুর, ধরলসুতি মিগীরপুর, মশাল ডাঙ্গা ছিটমহলে রাত ৮টা থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত মশাল ও মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখেন তারা।
জরিপ নিয়ে কিছু কথা : নীলফামারীর ডিমলায় ৪টি ছিটমহলের জনগণনায় ১১৯টি পরিবারে ৫৪৫জন সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাচ্ছে। নীলফামারীর ৪টি ছিটমহলের  কোনো পরিবার সদস্য ভারতে যেতে জনগণনার সময় আবেদন করেনি। ৪টি ছিটমহলের ১১৯টি পরিবারের সকল সদস্য বাংলাদেশ থাকার জন্য জনগণনায় স্বার করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় ২০১১ সালের ১৫ জুলাই হতে ১৮ জুলাই পর্যন্ত জনগণনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার অভ্যন্তরে ৪টি ছিটমহলের জরিপে ১১৯টি পরিবারের ৫০৬ জন জনসংখ্যা ছিল। যার মধ্যে পুরুষ ২৫৮ জন ও নারী ২৪৮ জন। ২০১৫ সালের জনগণনায় পরিবারের সংখ্যা ঠিক থাকলেও জনসংখ্যা দাড়িয়েছে ৫৪৫ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ২৮১ ও নারী ২৬৪ জন। যা ২০১১ সালের চেয়ে এবার ২০১৫ সালে এসে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ জন। এবারের জরিপে শিশু জন্ম, বিয়ে ও মৃত্যুর হিসাব যোগ বিয়োগ করা হয়। বিয়ের কারণে যেসব মেয়ে ছিটমহলের বাইরে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে চলে গেছে তাদের জরিপে বাদ দেয়া হয়েছে। আবার বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে ছিটমহলে যে সব মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তাদের এই জরিপে সংযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া অনেকে মৃত্যুবরণ করায় তারাও বাদ গেছে বর্তমান জরিপে। আর বয়স বেশি হওয়ার কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে ১ জনকে।
সূত্র মতে ২০১১ সালে ২৮ নম্বর বড়খানকী ছিটমহলে ২১ পরিবারে পুরুষ ৪৩, নারী ৪৩ সহ ৮৬ জন ছিল। এবারের জরিপে এই ছিটমহলে পরিবারের সংখ্যা ঠিক থাকলেও ৩ জন বৃদ্ধি পেয়ে মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৫ ও নারী ৪৪ জন। ২৯ নম্বর বড়খানকীবাড়ি গিদালদহ ছিটমহলে ২০১১ সালে পরিবারের সংখ্যা ৪৫। জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ৯২ জন ও নারী ৯৪ জনসহ ১৮৬ জন ছিল। এবারে  জনসংখ্যা ৮ জন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৪ জনে। এদের মধ্যে পুরুষ ৯৬ জন ও নারী ৯৮ জন।
এদিকে ৩০ নম্বর  বড়খানকীবাড়ী খারিজা গীতালদহ ছিটমহলে ২০১১ সালে পরিবারের সংখ্যা ছিল ৮। জনসংখ্যা পুরুষ ১৯ ও নারী  ১৮সহ ৩৭ জন। এবার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৪ জন ও নারী ১৮ জন। ৩১ নম্বর নগর জিগাবাড়ি ছিটমহলে ২০১১ সালে ৪৫টি পরিবারের জনসংখ্যা ছিল ১৯৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১০৪ জন ও নারী ৯৩ জন। ২০১৫ সালের জরিপে এখানে জনসংখ্যা ২৩ জন বৃদ্ধি পেয়ে মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২০ জনে। এরমধ্যে পুরুষ ১১৬ জন ও নারী ১০৪ জন। ডিমলা উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের চেয়ে চলতি বছর ৩৯ জন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের জনগণনায় পুরুষ ২৮১ ও নারী ২৬৪ জন। তারা সকলে বাংলাদেশে থাকার জন্য স্বার করেছেন। ৪টি ছিটমহলে মোট জমির পরিমাণ ১৭৪ দশমিক ০৩ একর।
ছিটমহলে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নির্দেশ :  বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ১১১টি ছিটমহল এলাকায় শিগগিরই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন। তিনি শনিবার ১ আগস্ট সকালে মহাব্যবস্থাপকদের নিয়ে বিআরইবির সম্মেলনে চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন এ কথা জানান। তিনি এ সময় বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ওই এলাকার সাত হাজার ৮শ’ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও ছিটমহলের বাসিন্দাদের দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকদের নির্দেশ দিয়েছেন বিআরইবির চেয়ারম্যান। ছিটমহলের ওই পরিবারগুলোকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার নতুন লাইন করতে হবে।
১১১টি ছিটমহলে উড়লো বাংলাদেশের পতাকা : গত ৩১ জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা এক মিনিটে উভয় দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় হবার কারণে দীর্ঘ ৬৮ বছর দুঃসহ যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে ১১১টি ছিটমহলের বাসিন্দারা পেয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। তাই ছিটমহলগুলোতে চলছে আনন্দের বন্যা। শনিবার থেকে ভারতের ছিটমহলে বাংলাদেশের পতাকা ও বাংলাদেশের ছিটমহলে ভারতের পতাকা  উড়ে। বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশের সীমানায় চলে আসে। যার আয়তন ১৭১৬০.৬৩ একর। অন্যদিকে ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল হয়ে যায় ভারতের। এগুলোর আয়তন ৭১১০.০২ একর।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে ভারতের মোট ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। বাংলাদেশের আলো-বাতাস আর খাবার খেয়ে জীবনধারণ করলেও নাগরিকত্ব না থাকায় দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে ওরা শিা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক সব অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
৬৮ ফুট দৈর্ঘের পতাকা উড়িয়ে বিজয় মিছিল : বিলুপ্ত হওয়া লালমনিরহাটের ৫৯ ছিটমহলের মানুষ শনিবার সকালে পাটগ্রামে বিজয় উল্লাস করেছে।  ৬৮ ফুট দৈর্ঘ্যরে পতাকা সহকারে এ বিজয় মিছিল করে।
মিছিলে পাটগ্রাম উপজেলার ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষ অংশ নেয়। পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুলের নেতৃত্বে মিছিলটি উপজেলা শহরের সকল সড়ক প্রদণি করে। বিজয় মিছিলে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় গান পরিবেশন করা হয়েছে।
- See more at: http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=18744#sthash.gjyISFvv.dpuf

কোন মন্তব্য নেই:

Post Top Ad

Responsive Ads Here