দেশে যখন অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ নিয়ে বির্তক তুঙ্গে তখন সহিষ্ণুতার অনন্য নজির গড়ল রাঁচির কাছে ছোট্ট গ্রাম তামাড়।
কেমন নজির?
এই গ্রামে দেড়শো বছরের পুরনো একটি মসজিদ প্রায় ভেঙে পড়েছিল। মসজিদটির অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে নমাজ পড়তে যেতে হচ্ছিল পাশের গ্রামের মসজিদে।  সম্প্রতি সেই ভেঙে পড়া মসজিদটির ছাদ ঢালাই ও মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। এবং মেরামতির কাজে নেমে পড়েছেন গ্রামের হিন্দু, মুসলিম, জৈন ও খ্রিস্টানরা। অনেকেই সাধ্যমতো অর্থ সাহায্য করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ভেদাভেদ ভুলে ছাদ ঢালাইয়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন সব ধর্মের মানুষ ।
তামাড়ের ওই মহল্লায় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা প্রায় সমান সমান। গ্রামের এক বাসিন্দা মহম্মদ নাসিমের কথায়, ‘‘মসজিদটার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, নমাজ পড়া তো দূরের কথা, গ্রামের বাচ্চারা মসজিদ চত্বরে খেলতে গেলেও ভয় লাগত। মাঝে মধ্যেই ছাদের চাকলা ভেঙে পড়েছে।’’ অনেক দিন ধরেই মসজিদ সারানোর দরকার ছিল। কিন্তু তার জন্য যতটা টাকার দরকার, তা কী ভাবে জোগাড় হবে তা নিয়েই চিন্তায় ছিলেন নাসিমরা।
সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন গ্রামবাসীরাই। ধর্ম নির্বিশেষে। গ্রামবাসী মহম্মদ মকসুর বলেন, ‘‘মসজিদ সারানো হবে খবর পেয়ে সব ধর্মের মানুষ নিজে থেকেই এগিয়ে এসেছেন।’’
ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হতেই গ্রামবাসীরা একে একে মসজিদে জড়ো হতে থাকেন। কাজে নেমে পড়েন প্রায় ৫০০ জন। কেউ বালি, কেউ সিমেন্ট, কেউ জল তোলার কাজ শুরু করে দেন। অজয় সিংহ নামে তামাড়ের এক বাসিন্দার কথায়,  ‘‘এত পুরনো মসজিদ ভেঙে পড়ছে দেখে খুব খারাপ লাগত। মুসলিম ভাইদের নমাজ পড়তেও অসুবিধা হচ্ছিল। যখন শুনলাম মসজিদটা সারানো হবে, তখন নিজেরাই এই কাজে হাত লাগিয়েছি। চাঁদাও দিয়েছি।’’
তামাড় আঞ্জুমান মসজিদ কমিটির সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরো মসজিদটি সারাতে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হবে। মাসখানেকের মধ্যে সারাইয়ের কাজ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কমিটি। মেরামতির পুরো টাকাটাই দানের মাধ্যমে উঠে এসেছে।
মকসুদ ও অজয়রা জানেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের এই কাজ এখন পাল্টা নজির হয়ে উঠবে। তবে তা নিয়ে তাঁদের বিশেষ মাথাব্যাথা নেই। কারণ, তাঁরা বিশ্বাস করেন, এটাই স্বাভাবিক। আর দেশজুড়ে যেটা হচ্ছে, সেটা বিকৃতি!