বাংলাদেশে সম্প্রতি জেএমবি-র কি পুনর্জাগরণ ঘটেছে?
বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলার ঘটনায় দায়িত্ব স্বীকার করেছে সিরিয়া-ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট।
সরকার বাংলাদেশে এদের অস্তিত্ব স্বীকার না করলেও পুলিশ মনে করে এদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি এই হামলাগুলো করছে। এক সময়ে মনে করা হচ্ছিল নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি জেএমবি’র কি পুনর্জাগরণ ঘটেছে?
পুরো বিশ্বের কাছে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল অনেকটা নাটকীয়ভাবে, ২০০৫ সালের ১৭ই অগাস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা ফাটিয়ে। বেশ কিছু সন্ত্রাসী ঘটনার পর এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়, আর ফাঁসি দেয়া হয় সংগঠনের প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, বহুল আলোচিত সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই সহ ছয়জনকে
।
এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে অনেকবারই বলা হয়েছিল, জেএমবি দুর্বল হয়ে গেছে এবং এটি আর মাথা তুলতে পারবে না। কিন্তু দশ বছর পর জেএমবি নিয়েই আবার ব্যতিব্যস্ত পুলিশ।
পুলিশের সাথে কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে হোসেইনী দালানে হামলার মূল সন্দেহভাজন নিহত হওয়ার পর ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, জেএমবি পুনরায় সংগঠিত হয়েছে।
বেশ কিছু লোকের ‘ইনফিলট্রেশন’ এই সংগঠনে হয়েছে, ফলে আর্থিক দিক দিয়ে তারা স্বচ্ছল। দেশের কয়েক জায়গায় তাদের ক্যাডার রয়েছে। এদের একজন নিহত হলেও আরেক ব্যক্তি হয়তো দায়িত্ব নেবে।
মনিরুল ইসলামের কথায় এটি পরিস্কার যে জেএমবির কাউকে মেরে ফেরা হলেও খুব দ্রুতই শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজ-এর প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এন এম মুনীরুজ্জামান বলছেন, জেএমবির পুনর্জাগরণের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন মহাসড়কে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে তিনজন শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়।
তারা শুধু বাংলাদেশেই কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করেছে তা নয়, পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও তাদের কর্মকাণ্ড করার সক্ষমতা দেখিয়েছে। দাবিকের যে আর্টিকেল ইদানিং বেরিয়েছে, তাতে জেএমবি-র উত্থানের লক্ষণগুলো পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।
মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান যে সাময়িকীর কথা বলছেন, সেই দাবিককে ইসলামিক স্টেটের একটি প্রকাশণা বলে মনে করা হয় এবং এতে বাংলাদেশে সংঘটিত জঙ্গি কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
এই সাময়িকীতে ইসলাম-পন্থী কয়েকটি সংগঠনের সমালোচনা থাকলেও জেএমবিকে বেশ প্রশংসাই করা হয়েছে। গোয়েন্দারা মনে করেন, ইসলামিক স্টেটের কোন কর্মকান্ড বাংলাদেশে নেই, তবে জেএমবি এদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে।
জেনারেল মুনীরুজ্জামান বলছেন, দাবিকের নিবন্ধটি তিনি খুঁটিয়ে পড়েছেন।
দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে তার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া প্রয়োজন। যেমন পানি ছাড়া মাছ বাঁচে না, তেমনি জঙ্গিরাও অস্থিরতা ছাড়া তাদের অবস্থান সংহত করতে পারে না।
সরকারের পক্ষ থেকে অনেকবার বলা হয়েছে যে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হয়েছে। তাহলে জেএমবি-র মতো একটি সংগঠন আবারও পুনর্গঠিত হলো কীভাবে?
জঙ্গি কর্মকাণ্ড বিষয়ে গবেষক নূর খান মনে করেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এটি হয়েছে ।
''বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যেখানে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ মুসলমান, সেখানে এই ধরনের সংগঠনকে যদি আমরা শুধুমাত্র সামরিকভাবে মোকাবেলা করতে চাই, তাহলে সম্ভবত আমরা মস্তবড় ভুল করবো।''
''আমাদের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর দেশে যে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে তার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া প্রয়োজন। যেমন পানি ছাড়া মাছ বাঁচে না, তেমনি জঙ্গিরাও এ ধরনের অস্থিরতা ছাড়া তাদের অবস্থান সংহত করতে পারে না,'' বলেছন নূর খান লিটন।
পুলিশ অবশ্য বলছে, সর্বশেষ অভিযানে জেএমবি-র শীর্ষস্থানীয় বেশীরভাগ সদস্যকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে এবং এদের আটক করা সম্ভব হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন