মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই … aajkaa
যদি
একদিকে থাকে জন্ম, অন্যদিকে অবশ্যই মৃত্যু। দুটোই সত্যি, দুটোই
বাস্তব। মানুষ আনন্দে মেনে নিয়েছে প্রথমটিকে, তবে সর্বদা এড়িয়ে গেছে
পরেরটির বাস্তবতা। এড়িয়ে যাননি একজন, লন্ডন নিবাসী সীমা জয়া শর্মা। ৩৮টি
বসন্ত পেরিয়েছিল, মনে ইচ্ছে ছিল আরও কিছুদিন পৃথিবীতে থাকার। সম্ভবত সেই
জন্যই মৃতু্যকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁর বেঁচে থাকার নতুন কৌশল খুঁজছিলেন
তিনি। ক্যান্সার আক্রান্ত সীমা নিশ্চিত জানতেন, হাতে সময় বেশি নেই। যেকটা
দিন রয়েছি, সেকটা দিন মরার ভয় তাড়া না করলেই মুক্তি। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ,
শেষ কয়েকটা দিন তিনি জীবনটাকে উপভোগ তো করলেনই, তাঁর মৃতু্যর শোক
পরিবারকে যাতে গ্রাস না করতে পারে, করে গেলেন সেই ব্যবস্থাও। তাঁর সতেরো
বছরের সন্তানকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিতে বললেন। মৃতু্যর কয়েক সেকেন্ড আগের
কথাগুলো যাতে ফেসবুকে তাঁর বন্ধুবান্ধব সকলেই পড়তে পারে, সেরকমটাই ছিল
সীমার শেষ ইচ্ছে। কী লিখতে বললেন তিনি? ‘সকলে ভাল থাকবেন, সকলকে ভাল
রাখবেন’, নাহ্, এরকম কিছুর আশপাশ দিয়েও গেলেন না। বললেন, ‘আমার মৃতু্যর
পরে প্লিজ কেউ শোক প্রকাশ করতে আমার বাড়িতে আসবেন না, এলে রঙচঙে জামাকাপড়
পরে আসুন, শোক প্রকাশ নয়, আমরা মৃতু্যকে উপভোগ করি’। এই বার্তার শেষে যে
পরিচিত স্মাইলি ব্যবহার করলেন তিনি, সেগুলি ফেসবুক চ্যাটে কথার মাঝে
আনন্দ বা উচ্ছ্বাস প্রকাশের জন্য প্রায়ই আমরা ব্যবহার করে থাকি। তাঁর
আশা, এই মন্তব্য নিশ্চিত ভাবেই মৃতু্যর বাস্তবতাকে মানতে সাহস জোগাবে
অনেককেই। শরীর ভেঙে গেছে, কিংবা চিকিৎসক বলে দিয়েছেন আয়ু নেই খুব বেশি। তা
বলে কি যেকটা দিন জীবন রয়েছে, সেই কদিন বাঁচব না। সীমার কথা শুনে অনেকেই
হয়ত এই মন্ত্র আপন করবেন। বেঁচেও মরে যাওয়ার বদলে, মরেও বেঁচে থাকতে চাইবেন
সীমার মতো। ২০০৯ সাল থেকেই সীমার ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে। ২০১৩ সালে
তিনি আন্তর্জাতিক ক্যান্সার রিসার্চ প্রচারের প্রধান মুখও ছিলেন। মিডিয়া
ভলেন্টিয়ার লায়াইসম মার্টিন ম্যাকগ্লোনের কথায়, সীমার মৃতু্য আমাদের কাছে
অনেকটা বড় ধাক্কা। তবে তঁার অদ্ভুত মনের জোর, ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধিতে
তাঁর ভূমিকা, অনেকেরই মনে জোর বাড়িয়েছে দিনের পর দিন। শোনা যায় তিনি নাকি
নিজের শ্রাদ্ধের পরিকল্পনাও করে রেখেছিলেন। রেখেছিলেন পাঁচ মিনিটের ভিডিও
সেখানেই তাঁর এই সব নির্দেশ। মৃতু্যও আসলে তাঁর কাছে অবশ্যম্ভাবী বাস্তব,
তা থেকে মানুষ মুখ ফেরাবে কী করে। তাই ভয় না পেয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি
মানতেন কষ্টটাই শেষ সত্য হতে পারে না। বাঁচাটাই আসল কথা, প্রাণ ভরে বাঁচা।
এই নতুন পোস্ট জনপ্রিয়তায় পৌঁছেছে মুহূর্তে। সবার একটাই কথা, সীমার মতো
বুকের পাটা কজনেরই বা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন