প্রথম ‘হিন্দু শাসক’ নিয়ে সেলিম-রাজনাথের বক্তব্যে উত্তাল লোকসভা
রাজনাথ সিং ও মুহাম্মদ সেলিম
৩০ নভেম্বর (রেডিও তেহরান): ভারতে
অসহিষ্ণুতা ও প্রথম ‘হিন্দু শাসক’ প্রসঙ্গ নিয়ে লোকসভায় বিরোধী ও সরকার
পক্ষের মধ্যে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে স্পিকার সুমিত্রা
মহাজনকে দুপুর ২ টা ৫ মিনিট পর্যন্ত অধিবেশনের কাজ বন্ধ রাখতে হয়।
(সোমবার) অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে আলোচনার
শুরুতে সিপিআই(এম) সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম সরকার পক্ষকে তীব্র সমালোচনা
করেন। এক পর্যায়ে মুহাম্মদ সেলিম তার বক্তব্যে বলেন, নির্বাচনে জেতার পর
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘৮০০ বছর পর দেশে প্রথম হিন্দু শাসক এসেছে।’
মুহাম্মদ সেলিমের এ ধরণের বক্তব্যের পর সংসদে উপস্থিত থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি দাবি করেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমি এ রকম কোনো বিবৃতি দেইনি। এর প্রমাণ দিতে হবে নইলে ক্ষমা চাইতে হবে।’
রাজনাথ সিং এভাবে সাফাই দেয়ার পর সরকার পক্ষের এমপি’রা মুহাম্মদ সেলিমের ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সোচ্চার হন।
মুহাম্মদ সেলিম প্রখ্যাত ‘আউটলুক’ ম্যাগাজিনের উদ্ধৃতি দিয়ে তার বক্তব্যের সাফাই দেয়ার চেষ্টা করলেও সরকার পক্ষের শোরগোলে তা বারবার বাধার মুখে পড়ে। সেলিম বলেন, ‘যদি পত্রিকার কথা ঠিক না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হোক। আমি তো শুধু সেখান থেকে উদ্ধৃত করছি মাত্র।’
বিজেপি নেতা রাজীব প্রতাপ রুডি রাজনাথ সিংয়ের হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এ ধরণের মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে যাতে সংসদের কাজ ঠিকমত চালানো যায়, নইলে আমাদের পক্ষে হাউসে বসে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
রাজনাথ সিং পুনরায় উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মুহাম্মদ সেলিমের বক্তব্যে আমি অত্যন্ত আহত হয়েছি। সংসদীয় জীবনে আমি কখনো এতটা অপমানিত হইনি। আমি সবসময় বুঝেশুনেই কথা বলে থাকি। যদি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরণের মন্তব্য করে থাকেন তাহলে তার পদে থাকার কোনো অধিকার নেই।’
সংসদে এ নিয়ে তুমুল গোলমাল শুরু হলে স্পিকার এক ঘণ্টার জন্য অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। দুপর ২ টা ৫ মিনিটে পুনরায় সংসদের কাজ পুনরায় শুরু হলে মুহাম্মদ সেলিম তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় গোলমাল অব্যাহত থাকে। স্পিকারকে বাধ্য হয়ে আবারও দুপুর ২ টা ৩০ পর্যন্ত সংসদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়। পরে ডেপুটি স্পিকার ড. এম থাম্বি দুরাই সংসদের কাজ শুরু করলে বিজেপি এমপি’রা ক্ষমা চাওয়া এবং বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় থাকেন। ডেপুটি স্পিকারকে বাধ্য হয়ে পুনরায় বিকেল ৩টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অধিবেশনের কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিতে হয়।
মুহাম্মদ সেলিম এর আগে বলেন, ‘দেশের সংবিধান আমাদের সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। সংবিধান মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা দিয়েছে। এটা ফ্যাসিবাদী দেশ নয়, গণতান্ত্রিক দেশ। কার বাসায় কি রান্না হচ্ছে সরকার তা দেখার কে?’
তিনি দেশে অসহিষ্ণুতা বেড়ে চললেও প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে নিশ্চুপ কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেলিম আজ উত্তর প্রদেশের দাদরিতে মুহাম্মদ আখলাক হত্যা থেকে শুরু করে কালবুর্গি এবং অন্যদের হত্যা প্রসঙ্গে সরকারপক্ষকে তুলোধোনা করেন।#
রেডিও তেহরান/এমএএইচ/এআর/৩০
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন