‘অসহিষ্ণুতা'
ইস্যুতে বাইরের ক্রমশ তপ্ত হয়ে ওঠা রাজনীতির আঁচ সংসদের ভিতরে অনিবার্য
ছিল৷ তবে শুরুর দিনেই তা স্পষ্ট হবে এমনটা ভাবা যায়নি৷ প্রথম সংবিধান দিবস
উপলক্ষে লোকসভার বিশেষ বৈঠকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দটি নিয়ে সমুখ সমরে নামল
বিজেপি ও কংগ্রেস৷ সাবধানী শব্দচয়নে আড়ালে থেকেও প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে এল
অসহিষ্ণুতা৷ সংবিধান নিয়ে বিতর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, ধর্মনিরপেক্ষতা
শব্দটির ‘ভীষণভাবে অপব্যবহার' হচ্ছে৷ আর সংবিধান নিয়ে বিতর্ক করায় কংগ্রেস
সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ক্ষমতাসীন দলকে বিদ্রূপ করতে ছাড়লেন না৷
আলোচনার
শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান সংশোধন
করে ‘সমাজতান্ত্রিক' ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটি প্রস্তাবনায় যুক্ত করা হয়৷
আমাদের কোনও অভিযোগ নেই৷ অতীত অতীতই৷ বি আর আম্বেদকর কোনওদিন মনে করেননি এই
শব্দ দু'টি প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা দরকার আছে৷ কারণ এগুলি সংবিধানেরই অংশ৷
এগুলি ভারতীয় ব্যবস্থার সঙ্গেই গড়া৷" সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘সেকুলার'
শব্দটি আসলে পন্থ-নিরপেক্ষ বলেও দাবি করেন তিনি৷
এই
সময়েই কংগ্রেসের সাংসদরা রাজনাথের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন৷ এর মধ্যেই
তিনি বলতে থাকেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা' দেশে সব থেকে অপব্যবহার হওয়া শব্দ৷ এই
অপব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিত৷ কারণ ভীষণভাবে অপব্যবহার হওয়া এই শব্দ সমাজে
উদ্বেগ সৃষ্টি করছে৷ ‘ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটির অপব্যবহার হলে সামাজিক
সম্প্রীতি রক্ষা করা কঠিন৷
ভরা
সংসদে রাজনাথের এই ভাষণের সময় তাঁর পাশেই বসে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদি৷ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সংসদে তাঁর বক্তব্যে
সংবিধান রচনার পুরো কৃতিত্বই কংগ্রেসের বলে এদিন দাবি করেন৷ বিজেপির পক্ষ
থেকে সোনিয়ার মন্তব্যকে আক্রমণের চেষ্টা করা হলে কংগ্রেস নেত্রী হাসিমুখে
পাল্টা জানতে চান, "এটা তো ইতিহাস বলছে৷ কোনও আপত্তি আছে? আর সংবিধান রচনা
নিয়ে আম্বেদকর তো নিজেই বলেছিলেন এটা কংগ্রেস পার্টির অনুশাসনের কামাল৷"
সংবিধান প্রসঙ্গে বলার সময়ই সোনিয়া বিজেপির দিকে পাল্টা আক্রমণ করেন৷ তিনি
বলেন, "আজ খুশির দিন আবার দুঃখেরও৷ কারণ, সংবিধানের. উপর বিপদ নেমে এসেছে৷
জেনেবুঝে তার উপর আঘাত করা হচেছ৷ বিগত কয়েক মাস ধরে আমরা যা দেখছি তা
সংবিধানের সুনিশ্চিত করা সমস্ত মূল্যের বিপরীত৷" সংবিধান রচয়িতার ক্ষেত্রে
বর্তমান শাসক দলের কোনও ভুমিকা নেই এবং তাঁরা এমনিই মাতামাতি করছে বলেও
তিনি এদিন কটাক্ষ করেন৷ সেনিয়া বলেন, "সংবিধানের প্রতি যাঁদের কোনও আস্থা
নেই৷ সংবিধান রচনায় যাঁদের পূর্বসূরিদের কোনও ভূমিকাই ছিল না৷ তাঁরাই আজ
সংবিধানের নামে শপথ নিচেছন৷ সংবিধানের বিষয় নিয়েচর্চার নাম করে গোলমাল
সৃষ্টি করতে চাইছেন৷ এর থেকে বড় হাস্যকর ব্যাপার আর কী হতে পারে?"
সোনিয়া
বলেন, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে সংবিধানে৷ আর সেই স্বাধীনতা
আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিল কংগ্রেস৷ কাজেই সংবিধানে কংগ্রেসের ভূমিকা রয়েছে৷
কংগ্রেসের
শশী থারুর অবশ্য ‘ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দ প্রসঙ্গে রাজনাথ সিংয়ের পাশে
দাঁড়িয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, সঠিক জায়গাটি ধরেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ সত্যই,
এই ‘ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটি নিয়ে খেলা উচিত নয়৷ এদিন রাজ্যসভা আম্বেদকরের
প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর মুলতবি হয়ে যায়৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন