পদ্মভূষণ ফেরাবেন বিজ্ঞানী ভার্গব
অসিহষ্ণুতার বিরুদ্ধে সরব ইতিহাসবিদেরাও-anandabazar.
নিজস্ব সংবাদদাতা
পি এম ভার্গব বিজ্ঞানী
এক দিকে দেশ জুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ। অন্য দিকে, গোটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা। এই দুইয়ের সমালোচনা করে আজ প্রতিবাদে সরব হন দেশের ৫৩ জন ইতিহাসবিদ। সাহিত্যিকদের পুরস্কার ফেরানোর ঘটনায় অস্বস্তিতে ছিল সরকার। গতকাল সেই পথে পা বাড়ান চিত্র পরিচালক ও দেশের বিজ্ঞানীমহল। পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ চলচ্চিত্র জগতের দশ ব্যক্তিত্ব মুম্বইয়ে জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। আর গেরুয়া শিবিরের অতিসক্রিয়তার প্রতিবাদে নিজের পদ্মভূষণ পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বর্ষীয়ান বিজ্ঞানী পি এম ভার্গব। তা ছাড়া, পরিকল্পিত ভাবে ধর্মীয় অসন্তোষ ছড়ানো ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে থাকা ১৩৫ জন বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদরা রাষ্ট্রপতির কাছে ই-মেলে একটি প্রতিবাদপত্র পাঠান।
সরকার পক্ষ গতকালের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আজ সরব হয়েছেন ইতিহাসবিদেরা। রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিব, কে এন পানিক্কর, মৃদুলা মুখোপাধ্যায়ের মতো ইতিহাসবিদেরা আজ যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, যে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল কঠোর ভাষায় বার্তা দেওয়া। কিন্তু ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার পরিবর্তে তিনি অন্য বিষয় নিয়ে সরব হচ্ছেন। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
সর্বস্তরের শিক্ষিত সমাজ যখন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এ ভাবে মুখ খুলছে, তখন আজও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দাবি করেন, ‘‘এটা ভেকধারীদের কৃত্রিম বিদ্রোহ। বিহার নির্বাচন চলাকালীন যে ভাবে প্রতিবাদ করা হচ্ছে তার পিছনে রয়েছে নির্বাচনী রাজনীতি।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও বলেন, ‘‘দেশে যখনই কংগ্রেস সরকার এসেছে, রাজ্যে রাজ্যে দাঙ্গা হয়েছে। হাজার হাজার লোক মারা গিয়েছেন। কই, তখন তো কেউ অকাদেমি পুরস্কার বা পদ্ম খেতাব ফিরিয়ে দেননি!’’
আজ ভার্গবের সুরেই সরব হন রোমিলা থাপার ও ইরফান হাবিবেরা। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘মতের পার্থক্য হলেই হিংসার শিকার হতে হচ্ছে। যুক্তিপূর্ণ আলোচনার পরিবর্তে বুলেট ব্যবহার করে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।’’ ইতিহাসবিদেরা প্রশ্ন তুলেছেন সরকারের মানসিকতা নিয়েই। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘চতুর্দিকে কেন্দ্র-বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু কেন সেই মনোভাব জন্মেছে তার উৎস খোঁজার পরিবর্তে মন্ত্রীরা একে কাগুজে বিপ্লব বলে অভিহিত করছেন। সাহিত্যিকদের পরামর্শ দিচ্ছেন কলম বন্ধ করে রাখার জন্য। প্রতিবাদ জানালে মুখ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁদের আরও অভিযোগ, এই সরকারের আমলে ইতিহাস পাল্টানোর প্রচেষ্টা চলছে। ভারতের নতুন ইতিহাস লিখতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির।
দেশের এই সার্বিক ছবি পাল্টাতে প্রধানমন্ত্রীকে আরও সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চাইছেন ইতিহাসবিদেরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে গোটা বিষয়টি নিয়ে চুপ, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। ইতিহাসবিদ মৃদুলা মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘সরকারের উচিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা। যে বহুত্ববাদী চরিত্রের জন্য ভারত এত দিন পরিচিত হয়ে এসেছে, সেই চরিত্রকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সক্রিয় হতে হবে সরকারকে।’’
গোটা বিষয়টির মধ্যে অবশ্য পরিকল্পিত রাজনীতির ছাপ দেখছে বিজেপি। আজ অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘বিদ্রোহ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা করছে তারা ঘোষিত বিজেপি-বিরোধী। নরেন্দ্র মোদী যখন বারাণসীতে নির্বাচনে লড়ছিলেন তখন ওই ব্যক্তিরাই মোদীর বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছিলেন।’’ প্রতিবাদের সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জেটলি। তাঁর কথায়, ‘‘বেছে বেছে বিহার নির্বাচনের সময়েই যে ভাবে প্রতিবাদের সুর তীব্র হচ্ছে, তাতে এর পিছনে নিবার্চনী রাজনীতি থাকলে অবাক হব না।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও আজ বলেন, ‘‘সমানে বলা হচ্ছে যে দেশে অসিহষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরে কোনও বড় মাপের দাঙ্গা বা অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। অথচ, দেশে কংগ্রেস সরকারের আমলে দাঙ্গায় হাজার হাজার লোক মারা গিয়েছেন। তখন তো কেউ খেতাব ফিরিয়ে দেননি!’’
মুখে বললেও বিশিষ্টজনেরা যে ভাবে প্রতিবাদের সুর চড়াচ্ছেন, তাতে অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপি শিবিরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন