‘হিটলারকে দায়মুক্তি দিতে চান নেতানিয়াহু’
(রেডিও
তেহরান): হোলোকাস্টের
কল্পকাহিনী নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে
বিপাকে পড়েছেন
ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
তিনি দাবি
করেছেন, একজন
ফিলিস্তিনি নেতা নাৎসি বাহিনীকে
‘হোলোকাস্ট’ ঘটাতে উৎসাহিত করেছিলেন।
তার এ
মন্তব্যকে ইতিহাস বিকৃতি বলে মন্তব্য
করেছেন খোদ
ইসরাইলের হোলোকাস্ট
বিষয়ক প্রধান
ইতিহাসবিদ দিনা পোরাট। ইসরাইলের প্রধান
বিরোধীদলীয় নেতা আইজ্যাক হেরযোগ এ
মন্তব্যকে ‘মারাত্মক ইতিহাস বিকৃতি’ বলে
উল্লেখ করেছেন।
নেতানিয়াহু
বলেছেন, নাৎসিবাদীদের নেতা
অ্যাডলফ হিটলার
চেয়েছিলেন ইহুদিদেরকে শুধুমাত্র ইউরোপ থেকে
বের করে
দিতে। কিন্তু
তাদেরকে আগুনে
পুড়িয়ে হত্যা
করতে হিটলারকে
পরামর্শ দিয়েছিলেন
জেরুজালেমের (বাইতুল মোকাদ্দাসের) গ্রান্ড মুফতি
হাজ আমিন
আল-হুসেইনি।
একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা
বলেছেন, নেতানিয়াহুর
এ মন্তব্যে
বোঝা যায়
তিনি ফিলিস্তিনিদের
ব্যাপারে কতটা
ঘৃণা পোষণ
করেন। একইসঙ্গে
তিনি এ
বক্তব্য দিয়ে
হিটলারকে দায়মুক্তি
দিতে চেয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়
নাৎসি
নেতা হিটলার
৬০ লাখ
ইহুদিকে গ্যাস
চেম্বারে পুড়িয়ে
হত্যা করেছিলেন
বলে দাবি
করে ইহুদিবাদীরা।
এই ঘটনাকে
হোলোকাস্ট বলে অভিহিত করা হয়।
অথচ হোলোকাস্টের
কথিত এ
কল্পকাহিনীকেই অস্বীকার করেছেন নিরপেক্ষ ইতিহাসবিদরা।
তারা বলছেন,
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
সময় সারা
বিশ্বেই ৬০
লাখ ইহুদি
ছিল না।
এ ছাড়া,
হিটলার যদি
সত্যিই তাদেরকে
হত্যা করতে
চাইতেন তাহলে
গুলি করে
হত্যা করা
ছিল অনেক
সহজ ও
কম ব্যয়বহুল।
এসব ইতিহাসবিদ
নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেন, ফিলিস্তিনের মাটিতে
ইহুদিদের জন্য
একটি অবৈধ
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
করার জন্য
হোলোকাস্টের রূপকথার গল্প তৈরি করা
হয়েছে।
চলতি মাসের গোড়ার
দিক থেকে
জর্দান নদীর
পশ্চিম তীর
ও অবরুদ্ধ
গাজা উপত্যকার
ফিলিস্তিনিরা যখন নতুন করে ইন্তিফাদা
গণআন্দোলন শুরু করেছেন তখন হোলোকাস্ট
নিয়ে এ
বিতর্কিত মন্তব্য
করলেন উগ্র
ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
নতুন করে
শুরু হওয়া
এই আন্দোলনকে
তৃতীয় ইন্তিফাদা
হিসেবে অভিহিত
করা হচ্ছে।
এতে এ
পর্যন্ত প্রায়
অর্ধশত ফিলিস্তিনি
শহীদ হয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে
ও পরে
ফিলিস্তিনি ভূমি জবরদখল করে ইহুদিবাদীদের
জন্য একটি
অবৈধ রাষ্ট্র
গঠনের বিরোধিতা
করেছিলেন বাইতুল
মোকাদ্দাসের গ্রান্ড মুফতি হুসেইনি। তিনি
১৯২০ ও
১৯৩০-এর
দশকে ইহুদিবাদী
ও তৎকালীন ব্রিটিশ
উপনিবেশবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব
দেন। ১৯৩৭
সালে হুসেইনি
ফিলিস্তিন থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য
হলেও তার
মাতৃভূমিতে একটি জারজ ইহুদি রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা চালিয়ে যান।
১৯৪১ সালের নভেম্বরে
হুসেইনি বার্লিনে
হিটলারের সঙ্গে
সাক্ষাৎ করেন।
ফিলিস্তিনে একটি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার
প্রতি নাৎসি নেতার
সমর্থন আদায়ের
জন্য তিনি
ওই সাক্ষাৎ
করেন বলে
তৎকালীন
জার্মান গণমাধ্যমে
প্রকাশিত খবর
থেকে জানা
যায়।
কিন্তু বাইতুল মোকাদ্দাসে
(জেরুজালেম) মঙ্গলবার বিশ্ব ইহুদিবাদী কংগ্রেসে
দেয়া ভাষণে
নেতানিয়াহু ওই সাক্ষাতের ঘটনাকে সম্পূর্ণ
ভিন্নভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হিটলার সে
সময় ইহুদিদের
নির্মূল করতে
চাননি- তিনি
তাদের বহিস্কার
করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু হাজ
আমিন আল-হুসেইনি বার্লিনে
গিয়ে হিটলারকে
বলেছিলেন: ‘আপনি যদি তাদের বহিস্কার
করেন তাহলে
তারা সবাই
ফিলিস্তিনে চলে যাবে’।”
নেতানিয়াহু
আরো বলেন,
“এ অবস্থায়
হিটলার প্রশান
করেন- তাহলে
আমি তাদেরকে
কি করবো?
তখন হুসেইনি
বলেন- তাদেরকে
আগুনে জ্বালিয়ে
দিন।”
কিন্তু জেরুজালেমের (বাইতুল
মোকাদ্দাস) ইয়াদ ভাশেম হোলোকাস্ট মেমোরিয়ালের
প্রধান ইতিহাসবিদ
প্রফেসর দিনা
পোরাট বলেছেন,
বাস্তবতার নিরিখে নেতানিয়াহুর বক্তব্য অশুদ্ধ।
তিনি ইসরাইলি
পত্রিকা ইয়েদিওথ
আহরোনোথকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,
“আপনি একথা
বলতে পারেন
না যে,
মুফতি (হুসেইনি)
হিটলারকে ইহুদিদের
হত্যা বা
আগুনে জ্বালানোর
বুদ্ধি দিয়েছিলেন।
এটি সত্য
নয়। অনেকগুলো
ঘটনা (আগুনে
পোড়ানোর) ঘটার
পর হিটলার-হুসেইনির সাক্ষাৎ
হয়েছিল এবং
এটিই তার
(নেতানিয়াহুর) বক্তব্যের অসত্যতার প্রমাণ।”
এ ছাড়া, ইসরাইলের
বিরোধীদলীয় নেতা আইজ্যাক হেরযোগ বলেছেন,
নেতানিয়াহুর বক্তব্য হোলোকাস্ট অস্বীকারকারীদের পক্ষে যাবে। হেরযোগ তার
ফেসবুক পাতায়
লিখেছেন, “এটি একটি মারাত্মক ইতিহাস
বিকৃতি। এ
বক্তব্য হোলোকাস্ট,
নাৎসিবাদসহ
আমাদের মানুষদের
জন্য হিটলার
যে বিপর্যয়
সৃষ্টি করেছিলেন
তাকে তুচ্ছ
করা হবে
বলে আমি
এ বক্তব্য
প্রত্যাহারের জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান
জানাচ্ছি।”
ফিলিস্তিন
লিবারেশন অর্গানাইজেশন
বা পিএলও’র মহাসচিব
সায়েব এরিকাত
এ সম্পর্কে
এক বিবৃতিতে
বলেছেন, “ইসরাইল
সরকারের নেতা
তার প্রতিবেশীদের
এত বেশি
ঘৃণা করেন
যে তিনি
ইতিহাসের সবচেয়ে
ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী
অ্যাডলফ হিটলারকে
৬০ লাখ
ইহুদিকে হত্যার
দায় থেকে
মুক্তি দিতে
চান।”#
রেডিও তেহরান/এমআই/২১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন