কানাডার নির্বাচনে নারী ও নিকাব নিয়ে বিতর্ক, জয়ী জনগণ
জাস্টিন ট্রুডো
(রেডিও তেহরান):
জোবায়ের আল মাহমুদ: বড় এক বিপদ থেকে
রক্ষা পেল কানাডা ও তার জনগণ। সম্প্রতি কানাডার ৪২তম জাতীয় নির্বাচনে
স্টিফেন হার্পারের লজ্জাজনক বিদায়ের মধ্য দিয়ে কানাডা এবারের মত রক্ষা পেল।
সারা পৃথিবীর মানুষ যে কানাডাকে একটি
উদার-গণতান্ত্রিক-উন্নত-বৈচিত্র্যপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে জানে; সে কানাডা
ধ্বংস হয়ে যেত– যদি এবার আবার স্টিফেন হার্পার ক্ষমতায় আসত। কানাডার ভাগ্য
ভালো– জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেনি।
গত ১৯ অক্টোবর কানাডায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড়
প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতা করেছে প্রধান তিনটি
দল- ক্ষমতাসীন ‘কনজারভেটিভ পার্টি’, বিরোধী ‘লিবারেল পার্টি’ এবং বামপন্থী
‘নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি’ (এনডিপি)। কনজারভেটিভ পার্টি’র নেতৃত্বে ছিলেন
সদ্য-বিগত নয় বছরের প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার, এনডিপি’র নেতৃত্বে
ছিলেন টম মুলকেয়ার এবং লিবারেল পার্টি’র নেতৃত্বে ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো।
তিনটি দলের নির্বাচন পরবর্তী পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি স্বাভাবিকভাবেই তিন
ধরণের ছিল। যেমন, হার্পারের শ্লোগান ছিল– ‘নিরাপদ কানাডা জন্যে প্রয়োজন
প্রমাণিত নেতৃত্ব’; মুলকেয়ারের শ্লোগান ছিল –‘পরিবর্তনের জন্যে আমরা তৈরি’;
এবং ট্রুডোর শ্লোগান ছিল– ‘প্রয়োজন সত্যিকারের পরিবর্তন’। শ্লোগান ছাড়াও,
অর্থনীতি, পরিবেশ ও সম্পদ, বৈদেশিক নীতি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও
স্বাধীনতা, অভিবাসী ও বেকার সমস্যাসহ সব বিষয়েই তিনটি দলের ভিন্ন ভিন্ন
পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি ছিল। এসব পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির সত্য-মিথ্যা
নির্ণয়, কার্যকারিতা যাচাই এবং সম্ভাবনা জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্যে তারা
কমপক্ষে পাঁচটি জাতীয় বিতর্ক ও টিভি বিতর্কে অংশ নেয়। সাধারণত এসব বিতর্ক
দেখে জনগণ সিদ্ধান্ত নেন– কাকে তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
নির্বাচনের ছয় মাস আগ থেকে এই তিন দলের
নেতারা তুমুল বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সংসদ থেকে শুরু করে টিভি-বিতর্ক
পর্যন্ত; সবখানে। যদিও সবগুলো বিতর্ক সাধারণত শুরু হয়েছে কানাডার অর্থনীতি,
পরিবেশ, নিরাপত্তা, বৈদেশিক নীতি ইত্যাদি দিয়ে, কিন্তু শেষ হয়েছে ইসলাম
নিয়ে। বিশেষকরে, মুসলিম নারীদের নিকাব নিষিদ্ধ করার বিষয়ে। নির্বাচনের আগের
দু’মাস কানাডা নিয়ে আন্তর্জাতিক বড়-বড় সংবাদ মাধ্যমগুলো যত সংবাদ,
সম্পাদকীয় এবং টক-শো পরিবেশন করেছে, অর্ধেকের বেশি ছিল নিকাব নিয়ে বিতর্ক।
সদ্য-বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার ও তার দল কনজারভেটিভ পার্টি
শুরু থেকেই ইসলাম বিদ্বেষী ও মুসলিম নারীদের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন।
বিপরীতে, জাস্টিন ট্রুডো ও তার দল লিবারেল পার্টি মুসলিম নারীদের
স্বাধীনতার পক্ষে, নিকাব পরার অধিকারের পক্ষে এবং কানাডার বৈচিত্র্য
সংস্কৃতির পক্ষে ছিলেন। আর বামপন্থী এনডিপি নিজেদের জন্যে মাঝামাঝি একটি
অবস্থান বেছে নিয়েছিল। যেহেতু তথাকথিত বাংলাদেশী বামপন্থীদের মত এনডিপি
তাদের সততা ও মূল্যবোধের বিসর্জন দেয়নি; ফলে অধিকাংশ বিতর্কে তারা শক্তভাবে
নিকাবের পক্ষাবলম্বন করেন।
২৪ সেপ্টেম্বর, কানাডার পাঁচটি রাজনৈতিক
দলের প্রধান নেতারা একটি জাতীয় বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে কনজারভেটিভ
পার্টির প্রধান এবং সদ্য-বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার বলেন, ‘আমি
আবার নির্বাচিত হলে নারীদের নিকাব পরা নিষিদ্ধ করব। কেননা, এটি কানাডার
সংস্কৃতির বিপরীত এবং একটি বর্বর প্রথা।’
ওই বিতর্কে স্টিফেন হার্পারের কড়া
সমালোচনা করেন লিবারেল পার্টির তরুণ নেতা জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন,
‘হার্পার নির্বাচনে জয়ী হবার জন্যে একটি খেলায় নেমেছেন। তিনি সংখ্যালঘু
মুসলিম নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে নির্বাচনে জয়ী হতে চান।
কিন্তু আমি সোজা বলে দিতে চাই, আমি বিশ্বাস করি– সরকার কোনো নাগরিককে তার
পোশাকের ব্যাপারে বাধ্য করতে পারে না। আমি অবশ্যই সংখ্যালঘুর পক্ষে আছি এবং
নারীদের নিকাব পরার অধিকারের পক্ষে থাকব।’
এনডিপি প্রধান টম মুলকেয়ারও সেদিন স্টিফেন
হার্পারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন , ‘নিকাব পরার কারণে হার্পার অনেক
নারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন, এবং অনেকেই নিকাব পরার কারণে কানাডায় চাকরি
পাচ্ছেন না।’
নির্বাচনের আগে, এরকম আরো অনেকগুলো জাতীয়
বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবগুলো বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী হার্পার ছিলেন নারী ও
ধর্মীয় স্বাধীনতার বিপক্ষে আর জাস্টিন ট্রুডো ছিলেন নিকাবের পক্ষে।
জাতীয় বিতর্কে নামার আগেও নিকাব নিয়ে
কানাডার সংসদে কম বিতর্ক হয়নি। ২০১৫-এর ১০ মার্চে, সংসদে দাঁড়িয়ে স্টিফেন
হার্পার মুসলিম নারীদের নিকাবকে একটি নারী-বিরোধী প্রথা হিসেবে উল্লেখ
করেন।’ তার এ বক্তব্যে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে
সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরের দিন জাস্টিন ট্রুডো সংসদে দাঁড়িয়ে স্পিকারকে বলেন,
‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী কানাডার নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতার বিপক্ষে একটি
বিপজ্জনক অবস্থান নিয়েছেন। অর্ধ মিলিয়ন মুসলিম নারী কানাডার নাগরিক। কেন
তিনি তাদের পছন্দের বিশ্বাসকে ‘নারী-বিরোধী’ বলেছেন? তিনি কি এর কোনো
ব্যাখ্যা করতে পারবেন?’
জাস্টিন ট্রুডোর এ প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার বলেন, ‘আমি ধর্মীয় বিশ্বাসকে নারী বিরোধী
বলিনি। আমি বলেছি নিকাব একটি নারী বিরোধী প্রথা– যা অধিকাংশ মডারেট মুসলিমও
বিশ্বাস করে।’ এবার জাস্টিন ট্রুডো আরো কড়া ভাষায় হার্পারের সমালোচনা করে
স্পিকারকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কেন বলেছেন – ধর্মীয় স্বাধীনতাকে দমন করা
উচিত?’ এর জবাবে হার্পার বলেন, ‘আমি চাই না কানাডার কোনো মুসলিম নারী তার
পরিচয় গোপন করে রাখুক; এমনিতেই মুসলিমরা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের
সাথে জড়িত।’
কানাডার সংসদে এভাবে নানা সময়ে নিকাবের
বিষয়টি উঠে আসে। ক্ষমতার দোহাই দিয়ে স্টিফেন হার্পার ও তার দলের সদস্যরা
নানাভাবে ধর্মীয় ও নারী স্বাধীনতা হরণ করতে শুরু করে। কিন্তু বরাবরই এসবের
প্রতিবাদ করে লিবারেল পার্টির প্রধান জাস্টিস ট্রুডো।
এর আগে, স্টিফেন হার্পার একটি সরকারী আদেশ
জারি করে। আদেশে বলা হয়– কানাডার নাগরিকত্বের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কোনো
নারী মুখ ঢেকে আসতে পারবে না। এ আদেশের বিরুদ্ধে, ২০১৫ সালের শুরুতে,
জুনেরা ইসহাক নামে এক নারী আদালতে অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, শপথ
গ্রহণ অনুষ্ঠানে নারীদের নিকাব খুলে আসার যে আদেশ সরকার দিয়েছে, তা কানাডার
‘নাগরিক অধিকার সনদ’ (চার্টার রাইটস) এবং ‘বহু সংস্কৃতি আইন’ (মাল্টি
কালচারাল অ্যাক্ট) লঙ্ঘন করেছে। কানাডার আদালত জুনেরা ইসহাকের এই মামলা
গ্রহণ করেন এবং ৬ ফেব্রুয়ারি কানাডার ফেডারেল কোর্ট এই মামলার রায় ঘোষণা
করেন। রায়ে বলা হয়, নিকাবের বিষয়ে সরকারি বাধ্যবাধকতা কানাডার নাগরিক আইনের
পরিপন্থি। আদালত তার রায়ের পক্ষে কয়েকটি যুক্তি প্রদান করেন–
এক. যদি শপথ নেবার সময় মুখ বা ঠোঁটের
সঞ্চালন দেখানো আবশ্যক হয়, তাহলে কানাডার নাগরিকত্ব অর্জন করা শুধু নিকাব
পরা মুসলিম নারীর পক্ষেই অসম্ভব নয়, একইভাবে একজন বোবা ব্যক্তি বা নীরবতা
পালনকারী সাধুর জন্য অসম্ভব।
দুই. কানাডার নাগরিকত্ব আইনে ধর্মীয়
আনুগত্য করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। যদি সরকারি আদেশ
মেনে নেয়া হয় এবং শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মুসলিম নারীদের নিকাব পরার অনুমতি
না দেয়া হয়, তাহলে নাগরিকত্ব আইন লঙ্ঘন করা হবে।
-এসব যুক্তি দেখিয়ে, কানাডার আদালত নিকার
বিরোধী সরকারি আদেশের বিপক্ষে রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষ ফেডারেল আদালতের এ
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন; কিন্তু তাও নাকচ হয়ে যায়। ফলে এই মামলার রায়
সারা দেশে আলোড়ন তোলে। মামলায় জিতে, অবশেষে, ৯ অক্টোবর নিকাব পরেই জুনেরা
ইসহাক কানাডার একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
স্টিফেন
হার্পার বারবার হেরেছেন নিকাব বিতর্কে, হেরেছেন আদালতেও। হেরে গিয়ে তিনি
রেগে গিয়েছেন চরম। চূড়ান্ত হেরে যাবার আগের দিন, অর্থাৎ ১৮ অক্টোবর
পর্যন্তও তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে গিয়েছেন– ইসলাম ও মুসলিমদের
বিরুদ্ধে নিয়মিত বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। তার প্রতিটি বক্তব্যে, প্রতিটি বিতর্কে,
দলীয় প্রতিটি পরিকল্পনায় ইসলামের বিদ্বেষ ছিল সুস্পষ্ট। হার্পারের সাথে
সাথে তার কনজারভেটিভ পার্টির লোকজনও দেশজুড়ে ইসলাম-বিদ্বেষ ছড়িয়ে বেড়াতেন
এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। নিকাব নিয়ে বিভিন্ন ধরণের কুরুচিপূর্ণ ছবি এবং
কটাক্ষ করা অডিও-ভিডিও তারা তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করতেন নিয়মিত।
নির্বাচনের আগে হার্পারের ওয়েবসাইটের প্রচ্ছদে লেখা ছিল– ‘আমি তরুণী
মেয়েদেরকে কখনো বলবো না, মেয়ে হবার কারণে তাদের মুখ ঢেকে রাখা উচিত। এটি
আমাদের কানাডার নয়।’ হার্পার তার টুইটারে লিখেছেন – ‘আমার গর্ব, আমি আজ
নিকাবের বিপক্ষে বলে এসেছি।’
এভাবে হার্পার ও তার দল যত পেরেছে,
ক্ষমতার অপব্যবহার করে মুসলিম নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছে; কেবল
নির্বাচনে জয়ী হবার জন্যে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, ভাগ্য ভালো কানাডার, সে
জয়ী হতে পারেনি। ৪২তম জাতীয় নির্বাচনে হার্পারের ভরাডুবি হলো। এখন প্রশ্ন
হলো, কেন এমনটা হলো-তা জানার জন্যেই এই দীর্ঘ ভূমিকা।
এবারের নির্বাচনে আসন সংখ্যা ছিল ৩৩৮টি।
লিবারেল পার্টি ১৮৪ টি আসন পেয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেছে। ক্ষমতাশীল
কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ৯৯ টি আসন এবং বামপন্থী এনডিপি পেয়েছে ৪৪টি আসন।
জাস্টিস ট্রুডো ৮৫ টি আসন বেশি পেয়ে স্টিফেন হার্পারকে হারিয়েছেন। ২০১১
সালের নির্বাচনে লিবারেল পার্টি পেয়েছিল মাত্র ৩৬ টি আসন। ২০১৩ সালে
জাস্টিস ট্রুডো লিবারেল পার্টির হাল ধরেন। ফলে এবার তার যোগ্য নেতৃত্বের
কারণেই কেবল লিবারেল পার্টি আগের চেয়ে ১৪৮ টি আসন বেশি পেয়ে কানাডার
ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। অন্যদিকে, ২০১১ সালে স্টিফেন হার্পার ১৫৯ টি আসন পেয়ে
ক্ষমতায় টিকে ছিলেন। আর এবার তার স্বৈরতান্ত্রিক ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের
কারণে গতবারের চেয়ে ৬০ টি আসন কম পেয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেন।
লক্ষণীয়, এবারের নির্বাচনে
কানাডা-নাগরিকদের চিন্তায় যে বিরাট পরিবর্তন হলো, তা কেবল স্টিফেন
হার্পারের বিতর্কিত-অপরিকল্পিত- স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনার কারণেই
ঘটেনি। ইসলাম নিয়ে অমুসলিমদের ধারণা যে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে – এটা
তারও ইঙ্গিত। বিভিন্ন গণমাধ্যমের জরিপ অনুযায়ী জানা যায়, এক বছর আগেও
কানাডায় কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা ছিল বেশি। যখনি স্টিফেন হার্পার ও
তার দল নির্বাচনে জেতার জন্যে প্রকাশ্যে ও ন্যক্কারজনকভাবে ইসলামের
বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করল, নারীদের স্বাধীনতা হরণ করলো, তখনি তার
জনপ্রিয়তা কমতে থাকল। কানাডার বড়বড় জাতীয় গণমাধ্যমগুলো আমাদের তাই
দেখিয়েছে। এমনকি ছয় মাস আগেও কনজারভেটিভ পার্টি ছিল প্রথম, দ্বিতীয়
বামপন্থী এনডিপি এবং তৃতীয় ছিল লিবারেল পার্টি। দু’মাস আগে অর্থাৎ আগস্ট
মাসে নারী স্বাধীনতার ব্যাপারে কিছুটা ভালো উদ্যোগ নেয়ায় এনডিপি চলে আসে
প্রথমে, কনজারভেটিভ দ্বিতীয়তে এবং লিবারেলরা তৃতীয় থেকে যায়। কিন্তু
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ১৭, ২৪ এবং ২৮ সেপ্টেম্বরের জাতীয় বিতর্ক
অনুষ্ঠানগুলোতে স্টিফেন হার্পারকে তরুণ নেতা জাস্টিস ট্রুডো যেভাবে ধসিয়ে
দিয়েছেন, তাতে প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি।
একেবারে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।
কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিস
ট্রুডোকে ইসলামের খুব বড় একজন বন্ধু হিসাবে ভেবে নিচ্ছি, তা নয়। তবে ইসলাম ও
মুসলিম নারীদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে তিনি যতটা শক্তিশালী ভূমিকা
পালন করেছেন, তা এ যুগে বিরল; অমুসলিম নেতাদের থেকে এতটা আশা করা যায় না।
হার্পার ভেবেছিলেন– সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরোধিতা করলে কানাডার বিশাল
জনসংখ্যা তাকে ক্ষমতায় রাখবে। কিন্তু তার ধারণা ছিল ভুল। বিশ্ব চিন্তার
পরিবর্তন হচ্ছে। নাইন-এলেভেনের পরবর্তী ধারণার সাথে এখনকার চিন্তার মিল
নেই। ইসলাম নিয়ে মানুষ আবার নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছে। হার্পার এটা বোঝেনি
বলে বিরাট হোঁচট খেয়েছে। হার্পারের মত বাংলাদেশের নেতারাও যদি ইসলামকে
না-বুঝে, না-জেনে সিদ্ধান্ত নেন, তাদেরও একই দশা হওয়া স্বাভাবিক।#
লেখক: তুরস্কের উলুদাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন