- http://www.anandabazar.com
নয়াদিল্লি, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:১২:১৯
সরাসরি বললেন না বটে, কিন্তু সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে পরোক্ষে এই বার্তাই দিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অরুণ জেটলি। আজ প্রসার ভারতীর একটি অনুষ্ঠানে জেটলি বুঝিয়ে দেন, সংবাদমাধ্যমের বক্তব্যের সঙ্গে সরকারের মতের অমিল হলে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ জারি করার পথে হাঁটতে পিছপা হবে না কেন্দ্র। দেশের প্রথম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই পটেলের স্মৃতিতে এক আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল প্রসার ভারতী। বিষয়বস্তু ছিল— সংবাদমাধ্যমের উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা। বিষয়টি বিতর্কিত হওয়ায় বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, বিচার ব্যবস্থার মতো এ বার সংবাদমাধ্যমকেও আসলে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিরা। পাল্টা যুক্তিতে বিজেপি শিবির সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। বিজেপি নেতা এম জে আকবরের কথায়, সংবাদমাধ্যমের সীমারেখা থাকা উচিত। না হলে সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায়।

এই চাপানউতোরের মধ্যেই প্রসার ভারতী অনুষ্ঠান থেকে জেটলি কী বার্তা দেন তা নিয়ে আগ্রহ ছিল সব শিবিরেই। আলোচনাসভাতে জেটলি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার দিন শেষ। এটা কার্যত অসম্ভব। অন্তত এমন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে রূপায়িত করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।’’ এই কথা বলেও জেটলি প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের মতো বহুধর্মী, বহুজাতির দেশে সংবাদমাধ্যমের কাজে লক্ষ্মণরেখা থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। কোনও সংবাদমাধ্যম সেই সীমারেখা লঙ্ঘন করলে তাদের উপর প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ জারি করতেও সওয়াল করেন তিনি। জেটলির বক্তব্যের বিরোধিতায় সরব হয়েছে কংগ্রেস। প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারির মতে, সব দিক থেকে বিপর্যস্ত মোদী সরকার এখন মুখ বাঁচাতে সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে চাইছে। অনেকেই মনে করছেন, মাত্র দেড় বছরেই সংবাদমাধ্যমের একাংশ যে ভাবে সরকারের সমালোচনায় সরব, তাতে বিজেপির একটি বড় অংশ ক্ষুব্ধ। দল তথা সঙ্ঘ পরিবারের এই অংশ সংবাদমাধ্যমের রাশ টানার পক্ষে। সেই সুরই আজ শোনা গিয়েছে জেটলির গলায়। কিন্তু সরকারের পক্ষে তা যে যথেষ্ট কঠিন কাজ— তা-ও স্বীকার করে নিয়েছেন জেটলি। তাঁর কথায়, ‘‘সংবাদমাধ্যমের রাশ টানতে গেলে সবার আগে রাজ্যগুলির সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু এখন কোনও রাজ্যই এই পদক্ষেপ করতে চাইবে বলে মনে হয় না।’’
যদিও এর সঙ্গেই জেটলির হুঁশিয়ারি, যদি সংবাদমাধ্যমে উপর নিষেধাজ্ঞা জারির দরকার হয়, সে ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির সাহায্য ছাড়াই তৎপর হবে কেন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘ডেনমার্কের একটি কাগজের কার্টুনকে ঘিরে বিতর্ক হয়েছিল। এ দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কী হতো!’’ জেটলির ব্যাখ্যা, ভারতের মতো নানা জাতি, নানা ধর্মের দেশে এই লক্ষ্মণরেখা পার হলে ফৌজদারি আইন রয়েছে। সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণে ১৯ (২) ধারা সংবিধানে রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সেটির প্রয়োগও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।