অদ্ভুত মহাজাগতিক বিস্ময়, লাভজয় আর সুরার ফোয়ারা
-sangbadpratidin
আগুনের ঝাঁটা নয়, সুরার ঝরনাধারা৷
নীলচে আলোর মায়া ছড়িয়ে বিশাল ব্রহ্মাণ্ডে অ্যালকোহল ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে চলেছে সে৷ নাম ‘লাভজয়'৷
আসলে একটি ধূমকেতু৷ যার গতিপথের প্রতি সেকেন্ডে ছিটকে বেরোচ্ছে প্রায় ৫০০ বোতল ওয়াইনের সমমানের ইথাইল অ্যালকোহল৷ এমনকী চিনিও৷
‘মিষ্টি আর মায়াবী' এই ধূমকেতুকে আবিষ্কার করে তাই রীতিমতো উত্তেজিত বিজ্ঞানীমহল৷
মহাকাশে অ্যালকোহলের ফোয়ারা!
বিষয়টা
নেহাতই অপচয়ের বলে মনে হতে পারে৷ কিন্ত্ত, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধূমকেতুকে
আর যাই হোক অপচয় বলা চলে না৷ বরং এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে এক নতুন পৃথিবীর
চাবিকাঠি৷
কেন না, যে
কোনও গ্রহে প্রাণের বীজ পোঁতার ক্ষমতা আছে এই ধূমকেতুর৷ যেখানে আছড়ে পড়বে
সেখানেই তৈরি হবে প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাবনা৷ নতুন এই ধূমকেতু আবিষ্কারের পর
তাই পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য নিয়েও নতুন ধারণা তৈরি হচ্ছে বিজ্ঞানীমহলে৷
অনেকেই
বলছেন, কোটি কোটি বছর আগে হয়তো এমনই কোনও জৈব ধূমকেতুর ধাক্কায় প্রাণ
সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীতে৷ ধূমকেতুতে থাকা জৈব অণুই হয়তো প্রাণ সৃষ্টিকে
ত্বরান্বিত করেছিল৷ যদিও এই তত্ত্ব এখনই মানতে নারাজ অন্য বিজ্ঞানীরা৷
তাদের মতে, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও গবেষণা করা দরকার৷
ধূমকেতু
লাভজয়ের অস্তিত্ব প্রথম ধরা পড়ে ফ্রান্সের প্যারিস মানমন্দিরে৷ প্রায় এক
বছর আগে৷ কিন্ত্ত, তখনও এর গুণাগুণ জানা যায়নি৷ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা
করছিলেন ধূমকেতুটি প্রবল উত্তপ্ত হওয়ার৷ বা বলা ভাল সূর্যের কাছে আসার৷
"আসলে ধূমকেতুগুলিকে দেখতে আগুনের ঝাঁটার মতো হলেও এর পৃষ্ঠদেশ হয় বরফ
শীতল৷ তাছাড়া বেশিরভাগ ধূমকেতুই সূর্যের এত দূর দিয়ে যায় যে তাদের চরিত্র
বিচার করা সম্ভব হয় না৷ সূর্যের কাছে এলে সৌরঝড় ও সোলার প্লাজমার সংস্পর্শে
এসে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ধূমকেতু৷ তখনই গ্যাস, জল ও অন্যান্য জৈব কণা নিঃসরণ
করতে শুরু করে৷ তখনই সম্ভব হয় বিচার বিশ্লেষণ৷" জানাচ্ছেন, প্যারিস
মানমন্দিরের নিকোলাস বিভার৷
গত
৩০ জানুয়ারি সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে লাভজয়৷ তখন অবশ্য তার নাম অন্য৷
‘সি/২০১৪ কিউ২'৷ সূর্যের ধার ঘেঁষে ওই ধূমকেতু যাওয়ার সময়েই সচল হয়ে যায়
তার ভিতরের সমস্ত জৈব পদার্থ৷ শুরু হয় অ্যালকোহল নিঃসরণ৷ রেডিও টেলিস্কোপে
সেই ছবি তুলে তার বিশ্লেষণ শুরু করেন বিজ্ঞানীরা৷ সম্প্রতি সেই বিশ্লেষণের
ফলাফল মেলে৷ বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতি সেকেন্ডে প্রচুর পরিমাণ ইথাইল
অ্যালকোহল নিঃসরণ করছে ধূমকেতু লাভজয়৷ সেই ইথাইল অ্যালকোহল যা আমাদের
পৃথিবীতে বহুল পরিমাণে ব্যবহার করা হয় মদ্য পানীয়ে৷ লাভজয় থেকে নিঃসৃত ওই
অ্যালকোহলের পরিমাণ প্রায় ৫০০ বোতল ওয়াইনের সমান৷ আর শুধু অ্যালকোহলই নয়৷
যাত্রাপথে এক ধরনের চিনি এবং আরও ২১ রকমের জৈব পদার্থও নিঃসরণ করছে ওই
ধূমকেতু৷ এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷
প্রতিবেদন: ঐন্দ্রিলা বসু সিংহ
তথ্যসূত্র: সংবাদ সংস্হা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন