নরেন্দ্র মোদীর সফর থেকে বাংলাদেশ কী পেল-বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে
বাংলাদেশের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে বাজেট থেকে টাকার যোগান দিয়ে সেগুলোকে সরকার সাহায্য করতে চাইছে এবং মূলধনের যোগান দিয়ে সরকার সেগুলোর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে চায়।
তবে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন এ সাহায্যের মাধ্যমে আবারও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ‘লুটপাটের’ সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।
শনিবার ঢাকায় বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে, ভারতের সাথে বিভিন্ন চুক্তি থেকে থেকে জনগণের পাওয়া, বাজেট থেকে জনগণের করের টাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করা, ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিতে ব্যর্থতা ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে খেলোয়াড় নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনা হয়।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে সহায়তার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এর বাইরে আগেও গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করতে সাড়ে তেরো হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল।
সে প্রেক্ষাপটে একজন দর্শক প্রশ্ন করেন “খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্যে আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল দেয়ার প্রস্তাব করা হলো বাজেটে। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমানোর বড় কোন উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে দেখা যাচ্ছে না কেন?”
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এর জবাবে বলেন বাংলাদেশের অর্থনীতির বিবেচনায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা তেমন কোন বিষয় নয়।
তিনি বলেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অনেক শাখা এবং সেখানে প্রচুর মানুষ কাজ করে। সেজন্য ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মিঃ মান্নান বলেন “এটা কোন খয়রাতি সাহায্য না। এটাকে নেগেটিভভাবে দেখলে হবে না।”
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন বলেন সরকারী দলের লোকেরাই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর লুটপাটের সাথে যুক্ত ছিল।
বাজেটে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য আবারও ‘লুটপাটের ব্যবস্থা’ করে দেয়া হচ্ছে বলে মিঃ রিপন উল্লেখ করেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, “এ অনিয়মের সাথে যারা জড়িত ছিল তাঁদের কোন বিচার হচ্ছেনা। পরিচালনা পর্ষদের যারা এই কাজে সহযোগিতা করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।”
বাংলাদেশ সংলাপে আরেক প্যানেলিস্ট ব্যাংকার জিয়াউল হাসান বলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন সময় বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। তাছাড়া এ ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের সফলতাও খুব কম বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মিঃ হাসান বলেন সরকার বাজেট থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্য আর কতদিন টাকার যোগান দেবে সে বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিৎ।
মিঃ হাসানের সাথে একমত পোষণ করেন অনুষ্ঠানের আরেকজন প্যানেলিস্ট সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে আর কতদিন সাহায্য করা হবে সে বিষয়ে একটি সময়সীমা থাকতে হবে। কারণ বারবার একই জিনিস হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানের একজন দর্শক বলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ‘লুটপাটের’ বিষয়টি বিচারের নাম করে সরকার এড়িয়ে যাচ্ছে।
আরেকজন দর্শক মন্তব্য করেন “হলমার্ক যেভাবে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে গেছে, ঠিক সেভাবে একটা শ্রেণীকে সুযোগ করে দেয়ার জন্য বাজেটে টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যাতে তাঁরা বিদেশে বাড়ি কিনতে পারে।”
এ বিষয়ে নাসিম ফেরদৌস বলেন “বড় বড় ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ উদ্ধারে বড় কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। বিচার তো পরের কথা।”
তবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলছেন, ব্যাংকগুলোতে যারা অনিয়ম করেছে তাঁদের বিচার যেমন হবে তেমনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতেও হবে। মিঃ মান্নান বলেন পাশ্চাত্যের অনেক দেশেই সেটা করা হয়েছে।
তবে তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “পাশ্চাত্যে ব্যাংকগুলিকে সরকার সহায়তা করেছিল অর্থনৈতিক মন্দার কারণে। আর বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে টাকার যোগান দিতে হচ্ছে কতিপয় ব্যক্তির লুটপাটের কারণে
নরেন্দ্র মোদীর সফর থেকে বাংলাদেশ কী পেল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের পর বাংলাদেশের কতটা লাভ হবে সে প্রশ্ন অনেকেই তুলছেন। ভারতের সাথে কানেক্টিভিটি বাড়ানো এবং ভারতীয় কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন।
এক্ষেত্রে ভারতকে কোন বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছেনা বলে জানান অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন কানেক্টিভিটিতে আমরা ভয়ঙ্কর লাভবান হব।
মিঃ মান্নান বলেন ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা করার চেষ্টা বাংলাদেশ অনেকদিন ধরেই করছে। মিঃ মোদীর সফরে বাংলাদেশের সেই চাহিদা পূরণ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতের রিলায়েন্স ও আদানি গ্রুপকে বাংলাদেশে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সমঝোতা স্মারক সাক্ষর হয়েছে।
এ দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভারতের কোম্পানিগুলোকে মহেশখালীতে জমি দেবে বাংলাদেশ।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী মিঃ মান্নান বলছেন এতে বাংলাদেশই লাভবান হবে। তিনি বলেন “আমরা যদি ভারত থেকে গরু আমদানি করতে পারি, শাড়ি আমদানি করতে পারি, পেঁয়াজ আমদানি করতে পারি, তাহলে বিদ্যুৎ আমদানি করতে সমস্যা কোথায়।”
কিন্তু অনেকেই অভিযোগ করছেন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কয়েকজন দর্শকও এ ব্যাপারে বাংলাদেশের চাইতে ভারতই বেশী লাভবান হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
কিন্তু অর্থ প্রতিমন্ত্রী এ ধরণের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, যে কোন বিদেশী বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে তাঁদেরকে জমি দেয়ার বিষয়টি একেবারে নতুন কোন ঘটনা না।
মিঃ মান্নান বলেন “যেকোনো ইনভেস্টার (বিনিয়োগকারী) আসলে আমাদের কাছে জমি চাইবে, গ্যাস চাইবে, নিরাপত্তা চাইবে – এগুলো তো আমরা দিতে বাধ্য।” ব্যবসা করতে গেলে সেটা ‘খোলা মনে’ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশ সংলাপের আরেকজন প্যানেলিস্ট বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন বলেন ভারতের সাথে যে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। মিঃ রিপন বলেন এই চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকগুলো সরকার যদি জনসমক্ষে প্রকাশ করত তাহলে বোঝা যেত বাংলাদেশের কতটা লাভ হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে একজন দর্শকও মন্তব্য করেন যে “কী চুক্তি হয়েছে তা আমরা এখনও পরিষ্কার দেখতে পারছি না। ভারত এখানে উপকৃত হচ্ছে। দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা আমোদিত হতে চাই না, উপকৃত হতে চাই।”
অনুষ্ঠানের আরেকজন প্যানেলিস্ট নাসিম ফেরদৌস মনে করেন যে ভারতের সাথে কানেক্টিভিটি বাড়লে ভারতের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।
তিনি মনে করেন বাংলাদেশীদের ভারতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি যদি সহজ করা হত তাহলে বাংলাদেশ কানেক্টিভিটির দিক থেকে আরও উপকৃত হত।
সাবেক এ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সেদেশের যানবাহন চলাচলের সুযোগ দিলে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
ব্যাংকার জিয়াউল হাসান মনে করেন ভারতের সাথে যতটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখা যায় বাংলাদেশের জন্য ততই ভালো।
তবে, নরেন্দ্র মোদীর সফরে বাংলাদেশের কতটা লাভ হয়েছে সে বিষয়ে তিনি সরাসরি কোন মন্তব্য করেননি।
ধানের নাম নিয়ে উদ্বেগ
সংলাপে শাওলিন আকিব প্রশ্ন করেন কৃষকদের জন্য ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন?
সরকারীভাবে ৮৫০ টাকা দরে ধান কেনার কথা থাকলেও কৃষক বাজারে ৪০০-৪৫০ টাকার বেশী দাম পাচ্ছে না।
নাসিম ফেরদৌস বলেন সরকারের দিক থেকে ধান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত অনেক দেরীতে হয়েছে। সেজন্য কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে ধান বিক্রি করা শুরু করেছে।
তিনি বলেন বাংলাদেশে যখন ধানের ভালো ফলনের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল ঠিক সেসময়ে বিদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্তভাবে চাল আমদানি করেছে। এ কারণে ধানের দাম কমেছে বলে নাসিম ফেরদৌস মনে করেন।
ব্যাংকার জিয়াউল হাসান প্রশ্ন তোলেন সরকার কেন কৃষকদের জন্য ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে পারছে না কেন?
বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন অভিযোগ করেন সরকারদলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার জন্যই শুল্কমুক্তভাবে চাল আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছিল।
তবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন সরকার প্রায় মাসখানেক আগে চাল আমদানির উপর দশ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
তিনি আশ্বস্ত করেন, ধানের দাম বাড়তে শুরু করেছে এবং সেটি মনপ্রতি ৮০০ টাকায় গিয়ে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ ভারত টেস্ট ম্যাচ প্রসঙ্গ
একজন দর্শক প্রশ্ন করেন “ভারতের বিরুদ্ধে ফতুল্লা টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ দলে সুযোগ পেয়েছে একজন মাত্র পেসার। এই দল নির্বাচন কতটুকু সঠিক হয়েছে বলে আপনারা মনে করেন?”
ফেরদৌস বলেন এ ম্যাচে অন্তত দুজন পেসার থাকা উচিৎ ছিল।
ব্যাংকার জিয়াউল হাসান মনে করেন একজন পেস বোলার নিয়ে খেলাটা ঠিক হয়নি।
একজন দর্শক বলেন, বাংলাদেশের কোচ হয়তো ভেবেছিলেন বর্তমান আবহাওয়ায় স্পিনাররা হয়তো বেশী সুবিধা পাবেন। সেজন্য দলে একজন পেসার রাখা হয়েছে।
বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে চলতি সপ্তাহে আলোচিত বিষয়বস্তু সম্পর্কে আপনার কী মতামত?
গ্রামে একটা কথা আছে যে চুরি করার পেছনে নাকি বাড়ির মানে নিকটতম কোন ব্যক্তির হাত থাকে, সে হিসাবে ব্যাংক চুরির ক্ষেত্রেও সরকারি দলের কারো হাত থাকতেই পারে।
Hossain Saddam
ব্যাংক থেকে টাকা ডাকাতি করবে, আর প্রতিবছর বাজেটে জনগণের করের টাকা দিয়ে পূরণ করবে, কোন জবাবদিহিতা নাই।
আব্দুল্লাহ আল মামুন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন