কয়েক মাস আগে একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ওঠে। সেই ছবিতে দেখা যায়, একটি হলুদ গাড়ির সামনে এক যুবক ডান হাতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে। আর বাঁ হাত দিয়ে কোলে আগলে রাখা সদ্যজাত এক শিশু। যে অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি টুইটারে পোস্ট করা হয়েছিল সেটি আবু রুমায়শাহ-এর।
৩১ বছরের ওই যুবকের নাম ফের গোটা দুনিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে। কারণ, আইএস-এর সাম্প্রতিক একটি ভিডিও। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বন্দিকে হত্যা করার দৃশ্য রেকর্ড করা ওই ভিডিও-য় যাকে প্রধান খুনি হিসেবে দেখা গিয়েছে তার নাম সিদ্ধার্থ ধর। ওরফে আবু রুমায়শাহ।
ব্রিটেনের একটা মহলের মতে, ওই যুবকের পারিবারিক শিকড় রয়েছে পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-বিহার অঞ্চলে। ধর পদবি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের মধ্যেও রয়েছে। তবে, কাশ্মীরি হিন্দুদের মধ্যে সিদ্ধার্থ নামের চল না থাকলেও সে সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, সিদ্ধার্থের বাবা কাশ্মীরি পণ্ডিত বংশের। মা সবিতা ধর বাঙালি। তবে, এই পরিচয়ের ব্যাপারটা আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ভিডিও হাতে আসার পর তদন্তে নেমে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা সিদ্ধার্থের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সূত্রের খবর, তার মায়ের নাম সবিতা এবং বোনের নাম কণিকা।

কে এই সিদ্ধার্থ?
ব্রিটিশ পুলিশ সূত্রে খবর, ব্রিটেনের একটি হিন্দু পরিবারে তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওটা। পরে সে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে। নাম হয় আবু রুমায়শাহ। দিনে দিনে সে হয়ে মুহাজিরাউন চক্রের নেতৃস্থানীয় এবং মূল বক্তা। ওই চক্র যদিও ব্রিটেনে সন্ত্রাস বিরোধী আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ সংগঠন। এর পর মৌলবাদী মুসলমান হিসেবে রুমায়শাহ পরিচিত হতে শুরু করে। মার্কিন-আরব-ইজরায়েল বিরোধী বিভিন্ন সমাবেশে তাকে দেখা যেতে থাকে। এমনকী, টেলিভিশনেও তাকে মাঝে মাঝেই দেখা যেত। লন্ডনে মৌলবাদী মুসলমানদের কাছে সে অতি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে।

আবু রুমায়শাহ
তার পুরনো প্রতিবেশীদের অনেকে জানান, এমনিতে ভাল ছেলে ছিলেন সিদ্ধার্থ। তবে, আয়েশা নামে এক মহিলার সঙ্গে বিয়ের পর তার মতিগতি পাল্টাতে শুরু করে। তাঁদের দাবি, আয়েশার পরিবার কট্টর মৌলবাদী ছিল। তারই প্রভাবে সিদ্ধার্থ পাল্টে যেতে থাকে। সিদ্ধার্থের বোন কণিকা গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, দাদার সঙ্গে তাঁর স্মৃতি সবই ছোটবেলার। ভীষণ মিশুকে ছিল সিদ্ধার্থ। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কী ভাবে যে কী হয়ে গেল!’’
এই সব কারণে তাকে নজরে রেখেছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। ২০১৪-য় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু, জামিনে শেষমেশ ছাড়া পায় সে। যদিও বিনা অনুমতিতে তার বিদেশ যাওয়া আটকাতে পাসপোর্ট জমা রাখা হয়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে সিরিয়া পালিয়ে যায় সিদ্ধার্থ। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে প্যারিসের ট্রেন ধরে। সেখান থেকে সোজা সিরিয়া। গোয়েন্দারা প্রথমে সে কথা জানতে পারেননি। সিরিয়ায় পৌঁছে সিদ্ধার্থ কয়েক সপ্তাহ পরে তার সিরিয়াবাসের কথা টুইট করে জানায়। সঙ্গে একটি ছবি। সেই ছবিতে দেখা যায়, সিদ্ধার্থের কোলে তার নবজাতক সন্তান এবং অন্য হাতে রাইফেল। সঙ্গে লেখা: ব্রিটিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই জঘন্য। আর সে কারণেই আমি ব্রিটেন এবং আইএস-এর মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে পারলাম।
এর পর বিভিন্ন সময়ে তার নানা মৌলবাদী বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গিয়েছে। শেষতম সংযোজন সাম্প্রতিক ভিডিও।