কথা বলার মতো অবস্থা নেই
ঝরঝরে বাংলায় বললেন সিদ্ধার্থর মা -anandabazar
শ্রাবণী বসু
প্রতিবেদকের বর্ণনা শুনে সবিতার ছবি এঁকেছেন ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।
এখন কথা বলতে পারব না। আমি কিছু বলতে চাই না।
পরিষ্কার বাংলায় জড়তাহীন উচ্চারণ। সামনে যিনি দাঁড়িয়ে, তাঁর বয়স আন্দাজ ষাটের কোঠায়। মাঝারি উচ্চতা। কাঁচাপাকা চুল পিছন দিকে বাঁধা। ছেলের সঙ্গে মুখের মিল ভালই। ইনি সবিতা ধর। সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গি সিদ্ধার্থ ধরের মা।
আইএস জঙ্গিদের নতুন ভিডিওতে মুখোশ-পরা যে ঘাতককে দেখা যাচ্ছে, তাকে সিদ্ধার্থ ধর বলেই সন্দেহ করছেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তার পর থেকে তোলপাড় এই বঙ্গতনয়কে ঘিরে। সিদ্ধার্থর মা সবিতা এবং বোন কণিকার সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে পুলিশ। আইএস-এর ভিডিও দেখানো হয়েছে তাঁদের। মা-বোন দু’জনেই স্বীকার করেছেন, গলা শুনে সিদ্ধার্থ বলেই মনে হচ্ছে। তবে ছবিটা নিয়ে একটু সংশয় আছে। কিন্তু বুধবার নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যে ভাবে বারবারই সবিতা বললেন যে তিনি মর্মাহত (শকড), তাতে মনে হল সিদ্ধার্থই যে আইএস জঙ্গি, সেটা অনেক়টা মেনেই নিয়েছেন।
উত্তর লন্ডনের পামার্স গ্রিন এলাকাটায় নানা জনগোষ্ঠীর বাস। অভিবাসীরাই থাকেন মূলত। কিন্তু আলাদা করে বাঙালি বেশি বা হিন্দু বেশি বা মুসলিম বেশি, এমনটা বলার উপায় নেই। মোটের উপরে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত পাড়া। সামনের নর্থ সার্কুলার রোড রাস্তাটা খুবই ব্যস্ত। তেইশ বছর আগে ধর পরিবার এখানে বসবাস শুরু করে। স্বামী-স্ত্রী, দুই মেয়ে ললিতা ও কণিকা আর ছেলে সিদ্ধার্থ।
সবিতার বাংলায় কোনও রকম টান নেই। উচ্চারণে নেই ব্রিটিশ প্রভাব। প্রশ্ন করি, ‘‘আপনারা কি কলকাতার লোক?’’ কলকাতার নাম শুনে কী যেন বলতে গেলেন। কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘আমি খুব ‘শকড’! এটা কথা বলার সময় নয়। ইটস টু সুন!’’ অপেক্ষা করার সময়েই বাড়ির ছবি তুলেছিলাম। কিন্তু সবিতার ছবি তোলা যায়নি। মনের মধ্যে অবশ্য গেঁথে গিয়েছিল আপাত সাধারণ এক মায়ের মুখ। ভিতরটা খান খান হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মুখচ্ছবিতে আশ্চর্য কাঠিন্য!
পরিষ্কার বাংলায় জড়তাহীন উচ্চারণ। সামনে যিনি দাঁড়িয়ে, তাঁর বয়স আন্দাজ ষাটের কোঠায়। মাঝারি উচ্চতা। কাঁচাপাকা চুল পিছন দিকে বাঁধা। ছেলের সঙ্গে মুখের মিল ভালই। ইনি সবিতা ধর। সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গি সিদ্ধার্থ ধরের মা।
আইএস জঙ্গিদের নতুন ভিডিওতে মুখোশ-পরা যে ঘাতককে দেখা যাচ্ছে, তাকে সিদ্ধার্থ ধর বলেই সন্দেহ করছেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তার পর থেকে তোলপাড় এই বঙ্গতনয়কে ঘিরে। সিদ্ধার্থর মা সবিতা এবং বোন কণিকার সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে পুলিশ। আইএস-এর ভিডিও দেখানো হয়েছে তাঁদের। মা-বোন দু’জনেই স্বীকার করেছেন, গলা শুনে সিদ্ধার্থ বলেই মনে হচ্ছে। তবে ছবিটা নিয়ে একটু সংশয় আছে। কিন্তু বুধবার নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যে ভাবে বারবারই সবিতা বললেন যে তিনি মর্মাহত (শকড), তাতে মনে হল সিদ্ধার্থই যে আইএস জঙ্গি, সেটা অনেক়টা মেনেই নিয়েছেন।
উত্তর লন্ডনের পামার্স গ্রিন এলাকাটায় নানা জনগোষ্ঠীর বাস। অভিবাসীরাই থাকেন মূলত। কিন্তু আলাদা করে বাঙালি বেশি বা হিন্দু বেশি বা মুসলিম বেশি, এমনটা বলার উপায় নেই। মোটের উপরে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত পাড়া। সামনের নর্থ সার্কুলার রোড রাস্তাটা খুবই ব্যস্ত। তেইশ বছর আগে ধর পরিবার এখানে বসবাস শুরু করে। স্বামী-স্ত্রী, দুই মেয়ে ললিতা ও কণিকা আর ছেলে সিদ্ধার্থ।
লন্ডনের নর্থ সার্কুলার রোডে এই বাড়িতেই ছোট মেয়েকে নিয়ে থাকেন সবিতা ধর। ছবি: শ্রাবণী বসু।
সিদ্ধার্থর ষোলো বছর বয়সে মারা যান তার বাবা। কণিকা আগের দিনই বলেছিলেন,
শান্ত-চুপচাপ স্বভাবের সিদ্ধার্থর মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এই মৃত্যু। তার
পর থেকেই এক কট্টরবাদী বন্ধুর পাল্লায় পড়ে একটু একটু করে পাল্টে যাওয়া।
সিদ্ধার্থদের বাড়ির আশপাশে তুরস্কের বেশ কয়েকটি পরিবারের বাস। তাদের এক জন
কুড়ি বছর ধরে এই পরিবারকে দেখছেন। মহিলা বললেন, ‘‘সিদ্ধার্থ ভারী মিষ্টি
ছেলে ছিল। চোখের সামনে বড় হল! মুসলিম হয়ে যাওয়ার পরেও বার কয়েক দেখা
করেছিল!’’
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
আজ সকালে সিদ্ধার্থর বাড়ি গিয়ে দেখি, দরজা বন্ধ। একটা চিরকুট লিখে
অপেক্ষা করছিলাম। আশপাশে তেমন লোকজনের আনাগোনা বা পুলিশের গতিবিধি নজরে
পড়ল না। একটি গাড়ি কেবল বাড়ির সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল আগে থেকেই। একটু
পরে একটি টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধিরা বন্ধ-দরজা বাড়ির ছবি তুলে নিয়ে
গেলেন। তার পর আবার সব চুপচাপ। প্রায় দেড়-দু’ঘণ্টা পরে ফিরলেন সবিতা। গায়ে
সালোয়ার-কামিজের উপরে লম্বা কোট। পুরু ঠোঁটে লিপস্টিকের ছোঁয়া।
সিদ্ধার্থ, তখন ব্রিটেনে। — ফাইল চিত্র
সরাসরি বাংলায় বললাম, ‘‘কলকাতার কাগজ আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে আসছি।
আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।’’ বাংলা শুনে একটু থমকালেন সবিতা। তার পর
নিজেও ঝরঝরে বাংলায় বললেন, ‘‘এখন কথা বলতে পারব না। আমি কিছু বলতে চাই
না।’’ ফের বললাম, ‘‘বুঝতে পারছি আপনার মনের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে!’’
সবিতা জবাব দিলেন, ‘‘এত হঠাৎ করে সব ঘটে গেল। উই আর ইন শক। কথা বলার মতো
অবস্থায় নেই।’’ আগের দিন কণিকা বলেছিলেন, ভাই যদি আইএস জঙ্গি হয়, তা হলে
নিজের হাতে খুন করবেন তাকে। এ দিন সবিতার সঙ্গে কথা বলে মনে হল, আর
‘যদি-কিন্তু’ নেই। আইএস ভিডিও-র ঘাতককে নিজের ছেলে বলে মেনেই নিচ্ছেন তিনি।
নইলে কেন বলবেন, ‘‘কথা বলার মতো ধাতস্থ হইনি। আমাকে আগে ব্যাপারটা হজম
করতে হবে।’’সবিতার বাংলায় কোনও রকম টান নেই। উচ্চারণে নেই ব্রিটিশ প্রভাব। প্রশ্ন করি, ‘‘আপনারা কি কলকাতার লোক?’’ কলকাতার নাম শুনে কী যেন বলতে গেলেন। কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘আমি খুব ‘শকড’! এটা কথা বলার সময় নয়। ইটস টু সুন!’’ অপেক্ষা করার সময়েই বাড়ির ছবি তুলেছিলাম। কিন্তু সবিতার ছবি তোলা যায়নি। মনের মধ্যে অবশ্য গেঁথে গিয়েছিল আপাত সাধারণ এক মায়ের মুখ। ভিতরটা খান খান হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মুখচ্ছবিতে আশ্চর্য কাঠিন্য!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন