কুর্দ'দের জন্য কোন ক্রিসমাস নেই - rangpur news

Breaking

Breaking News

rangpur news

This is news blog site.Here have important online newspaper.if you Concert:MD.Gulam azam sarkar. E-mail:gulamazam@gmail.com Mobil:01735632338

Windows

test banner

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

কুর্দ'দের জন্য কোন ক্রিসমাস নেই

কুর্দ'দের জন্য কোন ক্রিসমাস নেই-

guruchandali

Debabrata Chakrabarty


“History books will write how the Kurds without a state fought ISIS and fascist Turkey together. “

তুরস্কের ২কোটির অধিক কুর্দ জনজাতি এবং দক্ষিণ তুরস্কের বাসিন্দাদের এই বছরে অন্তত কোন ক্রিসমাস নেই । কেক কাটা বা টার্কি ভোজনের পরম্পরাও অনুপস্থিত ,ইংরাজি নববর্ষ পালনের উন্মাদনা নেই ,পারস্পরিক উপহার বিনিময় নেই ,বরং রাতের পর রাত সদর দরজায় সামরিক বাহিনীর কড়া নাড়ার আশঙ্কায় বিনিদ্র রাত্রি যাপনের বাস্তবতা আছে । শহরের রাস্তায় ,গলিপথে ট্রেঞ্চ খননের , ব্যারিকেড তৈরি করার ,মলোটভ ককটেল বানানোর ব্যস্ততা আছে । সমস্ত গলি এবং পাড়ায় পাড়ায় স্নাইপারদের দৃষ্টি এড়ানোর কৌশল হিসাবে প্লাস্টিকের চাদর ঝোলানোর টার্গেট আছে সর্বোপরি প্রত্যহ সকালে কোন না কোন শহিদের অন্তিম সংস্কারের মিছিলে পা মেলানো , প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দৃঢ়মুষ্টি এবং সদ্য গঠিত গণতান্ত্রিক স্বশাসন রক্ষা করার সপক্ষে রাষ্ট্রের কতৃত্ব অগ্রাহ্য করার অদম্য প্রতিরোধ আছে । বিদ্যুৎবিহীন ,জলবিহীন ,যোগাযোগ ব্যবস্থা রহিত দীর্ঘ শীতের রাত্রি অবশেষে উজ্বল সূর্যোদয়ের আশা আছে । এই বছরে তাদের জন্য অন্তত কোন ক্রিসমাস নেই।

তুরস্কের সরকার গত জুলাই মাস থেকে নিজদেশবাসীর বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন । দক্ষিণ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে কোন শহরে একনাগাড়ে ২২ দিন ধরে ,কোথাও ১৫ দিন ধরে শুট অ্যাট সাইট কার্ফু জারি রেখেছে । নিজ দেশবাসীকে সবক শেখানর বাহানায় শহরের সমস্ত উঁচু বিল্ডিং গুলীতে স্নাইপার বাহিনী নিযুক্ত হয়েছে , কার্ফু অগ্রাহ্য করে যে কোন প্রয়োজনেই হোকনা কেন রাস্তায় দেখামাত্র গুলী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । হাজারে হাজারে সামরিক বাহিনী ,ট্যাঙ্ক ,কামান এবং ভারী অস্ত্র নিয়ে মোতায়েন হচ্ছে সমস্ত কুর্দ প্রভাবিত শহরগুলিতে ,সামান্য প্ররোচনায় রকেট ব্যবহৃত হচ্ছে , ইউনেস্কো স্বীকৃত ঐতিহাসিক সৌধ গোলা বর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ,সাথে চলছে সামরিক হেলিকপ্টার থেকে গোলা বর্ষণ । তুরস্কের সরকারের সেপ্টেম্বার মাস থেকে নিজ নাগরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই যুদ্ধে ইতিমধ্যে প্রান হারিয়েছে ১৮৬ জনের অধিক সাধারণ নাগরিক । তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সদস্য , পিকেকের গেরিলা এবং শহরের যুবক মিলিশিয়া বাহিনীর সন্মিলিত মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৫০০ বা তার অধিক মাত্রা অতিক্রম করেছে । জুলাই মাস থেকে দক্ষিণ তুরস্কের এই অঞ্চলে ৫২ বার শুট অ্যাট সাইট কার্ফু জারি করা হয়েছে, এক একটি শহরে সর্বনিন্ম ৫দিন থেকে ঊর্ধ্বতম ২১দিনের লাগাতার কার্ফু জারী রয়েছে । সমস্ত শিক্ষকদের মেসেজ করে নিজেদের বাড়িতেই স্পেশাল ট্রেনিং দেওয়া হবে এই বাহানায় শহরগুলি খালি করতে বলা হয়েছে ,সমস্ত হসপিটালের অধিকর্তাদের উপযুক্তপরিমাণ স্টক মজুত রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে । সাংবাদিক ,হিউম্যান রাইটস আন্দোলনের সাথে যুক্ত নাগরিক ,আইনজীবী ,মিউনিসিপ্যালিটির মেয়র , রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের হাজারে হাজারে গ্রেপ্তার করা চলছে । ঘাড়ের ওপর বসে থাকা ইসলামিক স্টেটের বর্বর মৌলবাদী শক্তি নয় বরং আইসিস এর সাথে সম্মুখ যুদ্ধরত কুর্দ জনতা এবং তুরস্কের নাগরিকরাই এই গণহত্যার অভিমুখ। নিজদেশের অধিবাসী কুর্দরাই সন্ত্রাসবাদী এবং তাদেরকে উচ্ছেদ করাই এই অভিযানের মুল উদ্দ্যেশ্য।

তুরস্কের কুর্দিস্তানে এই হঠাৎ গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি উৎপন্ন হওয়ার কিছু নির্দিষ্ট কারন বর্তমান । প্রথমত আবদুল্লাহ অচালানের প্রতিষ্ঠিত পিকেকে (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি ) গত ৩৭ বছর ধরে তুরস্কের আধিপত্যবাদি সরকারের দীর্ঘকালীন কুর্দ জনজাতি নিপীড়নের বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় চরিত্র । ১৯৭৮ সালে মাত্র ২৩জন সাথী কে নিয়ে আবদুল্লাহ অচালান স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠার উদ্দ্যশ্যে গড়ে তোলেন পি.কে.কে। ১৯৮০এর দশকের মধ্যভাগ থেকে কুর্দ স্বাধীনতার উদ্দশ্যে তুরস্কের সরকারের সাথে সশস্ত্র সংগ্রামরত পি.কে.কে বর্তমানে তুরস্কের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তাঞ্চল গড়ার সাথে সাথে সাধারণ জনতার রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি ,সামাজিক পরিবর্তন এবং স্বাধীনতার স্বার্থে প্রতিরোধী আন্দোলন বিস্তৃত করেছে তুরস্কের প্রায় সমস্ত শহরাঞ্চলে । ১৯৯০ সালের শেষের দিক থেকে অচালান পি,কে,কে কে স্তালিনবাদি খোলস থেকে বার করতে শুরু করেন এক আভ্যন্তরীণ আন্দোলন ,কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ,গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে ক্রমবর্ধমান আমলাতান্ত্রিকতা থেকে পিকেকে কে মুক্ত করে এক বৃহৎ গণতান্ত্রিক শক্তি হিসাবে গড়ে তোলা ছিল উদ্দেশ্য ।১৯৯৩ সাল থেকে তুরস্কের সাথে কুর্দিশ সমস্যার রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান খুঁজতে শুরু করেন অচালান । পি.কে.কে গঠনের পূর্বে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে নিজেকে ভাঙ্গা ,পথ পরিবর্তন , সম সাময়িক থাকা এবং প্রথাগত কুর্দ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃত আন্তর্জাতিক আন্দোলন হিসাবে গড়ে ওঠার যে প্রক্রিয়া অচালান দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়েছেন তা এক কথায় অদম্য অনবদ্য বিপ্লবী কর্মকাণ্ড । বিগত ৪০ বছরের সংগ্রামের ইতিহাসে প্রকৃত সমাজতন্ত্রের প্র্যাকটিস, নারী স্বাধীনতার ইতিহাস, জাতীয়তাবাদী মুক্তি আন্দোলনের গতিপথ , প্যান আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং নানাবিধ বৈকল্পিক আন্দোলনের ইতিহাস অচালান শুধু বিশ্লেষণই করেন নি বরং সময়ে সময়ে নিজেদের অবলম্বিত পথ বিশ্লেষণ করেছেন এবং বুঝতে চেষ্টা করেছেন যে সমস্য ঠিক কোথায় , সবাই কেন একই সিস্টেমের পুনরাবৃত্তি করছেন ? অবশেষে অচালান এই বৈপ্লবিক সিধান্তে উপনীত হন ঃ-

“ The call for a separate nation state results from the interests of the ruling class or the interests of the bourgeoisie, but does not reflect the interests of the people, since another state would only involve the creation of additional injustice and would curtail the right to freedom even more.”

পি.কে.কের এতদিনের আন্দোলনের গতিমুখ পরিবর্তিত হতে থাকে ২০০৫ সালের সময় থেকে , সশস্ত্র উপায়ে রাষ্ট্রশক্তি উচ্ছেদ করে নিজেদের নূতন রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই পরিবর্তিত হয় আবদুল্লাহ অচালানের ‘ডেমোক্র্যাটিক কনফেডেরালিসম ‘ তত্বের অনুসারী এক রাষ্ট্রবিহীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। কুর্দ জাতী মুক্তির আন্দোলন পরিচালনাকারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত পিকেকে এবং তার দীর্ঘকালীন এই উদ্দশ্যে পরিচালিত আন্দোলনের গণ্ডী থেকে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রের অস্তিত্ববিরোধী এবং জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে ওঠার এই আন্দোলনের গতিমুখ পরিবর্তনই পিকেকের সাফল্য,এবং প্রতিকুল পরিস্থিতে মধ্যপ্রাচ্যে বৈকল্পিক আন্দোলনের প্রধান শক্তি হিসাবে টিকে থাকার রহস্য ।

২০০৭ সালের সময় থেকে তুরস্কের কুর্দিস্তানে কুর্দিশ আন্দোলন অচালানের তত্ব অনুযায়ী গণতান্ত্রিক স্বশাসিত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করে বিশদ পর্যায়ে। রাষ্ট্রের পরিবর্তে এক রাষ্ট্রবিহীন স্পেস তৈরি হতে থাকে অতি দ্রুত । পাহাড়ের এবং গ্রামাঞ্চলের গেরিলাযুদ্ধ্ব নেমে আসে রাস্তায় , মহল্লায় , মিউনিসিপ্যালিটি পরিধির বিপ্লবী রাজনীতিতে । গণতান্ত্রিক স্বশাসনের মডেল হিসাবে বিভিন্ন সামাজিক পরিধি জনতা নিজেরাই গড়ে নিতে থাকে ।স্বাস্থ্য ,শিক্ষা , অর্থনীতি , এমনকি আত্মরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠতে থাকে অতি দ্রুত । যুবকেরা YDG-H ( প্যাট্রিয়টিক রেভলিউসনারি ইয়ুথ মুভমেন্ট )এর দ্বারা যুদ্ধাস্ত্র এবং ট্রেনিং প্রাপ্তির অবশেষে প্রতিটি মহল্লায় গড়ে তুলতে থাকেন আত্মরক্ষা বাহিনী । পিকেকের নেতৃত্বে গত ৩৭ বছর ধরে চলে আসা কুর্দ স্বাধীনতার লড়াই , ৪০০০০এর ওপর মৃত্যু এবং দীর্ঘকালীন প্রায় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতির অবসানকল্পে ১৬বছর ধরে কারাবন্দী আবদুল্লাহ অচালান ,পিকেকে এবং তুরস্কের সরকারের মধ্যে এক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৩ সালে। এই শান্তিচুক্তিকে বিশ্বাসযোগত্যা দেওয়ার স্বার্থে অচালানের নির্দেশে পিকেকে তুরস্কে তাদের মুক্তাঞ্ছল এলাকাগুলি থেকে ২০১৩ সালেই তাদের সামরিক শক্তি ইরাকের কুয়ান্দিল পাহাড়ে স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু করে , অন্যদিকে তুরস্কের সরকার কিছু রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি , কুর্দদের ভাষা এবং বিভিন্ন বিষয়ের স্বীকৃতি দেওয়া শুরু করে । তুরস্ক জুড়ে বিশেষত কুর্দ জনতার হৃদয়ে এক অদ্ভুত আশার সঞ্চার হয় এবং সকল পক্ষই এই শান্তিচুক্তির দীর্ঘআয়ু কামনা করার সাথে সাথে তুর্কী এবং কুর্দ জনজাতির সহবস্থানের ভিত্তিতে নূতন তুরস্কের আশা পোষণ করতে শুরু করেন ।

পি.কে.কের প্রতিষ্ঠাতা এবং কুর্দ জনতার নেতা আবদুল্লাহ অচালান স্বতন্ত্র কুর্দ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে সরে আসতে থাকেন ২০০৩-২০০৪ সালের সময় থেকে । নূতন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা যে আদপে কোন সমস্যারই সমাধান করতে পারেনা বরং নূতন ভাবে দমনপীড়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে , সিস্টেম কাজ করে চলে রাষ্ট্রের সীমানায় এই বোধ ,অভিজ্ঞতা এবং বিশ্লেষণ থেকে তিনি প্রস্তুত করেন তার রাষ্ট্রবিহীন গণতন্ত্র 'ডেমোক্র্যাটিক কনফেদারিলিস্ম’ এর তত্ব , রাষ্ট্রের সীমানা অস্বীকার না করে, রাষ্ট্রর আধিপত্য অস্বীকার কারী নিজেদের গণতান্ত্রিক স্বশাসন বজায় রাখার এক বৈকল্পিক সমাজব্যবস্থার তত্ব । অচালানের তত্বের অনুসরণে ২০০৫ সাল থেকে কেবলমাত্র সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে কুর্দিশ স্বাধীনতা আদায়ের রাস্তা থেকে পিকেকে ক্রমে সরে আসতে থাকে । বরং নিজেদের সামরিক শক্তি অটুট রেখে গড়ে তুলতে থাকে এক বিপুল গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড । মহিলা ,যুবা ,বুদ্ধিজীবী , এনজিও ,শ্রমিক ,কৃষক এবং সমস্ত শ্রেণীর জনতার অংশগ্রহণে তুরস্কের দক্ষিণ অংশে এবং সীমান্তের অপরপারে সিরিয়াতে গড়ে উঠতে থাকে অসংখ্য কমিউন , কাউন্সিল ,মিলিশিয়া ,কমিটি ,কো ওপারেটিভ ,মহিলা প্রতিরক্ষা মিলিশিয়া ,সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা, নিজেদের বৈপ্লবিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং নারী মুক্তির গন আন্দোলন । দক্ষিণ তুরস্কের ২০-২৫টিকুর্দ প্রভাবিত জেলায় রাষ্ট্রের শাসনের সমান্তরাল শাসন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালাতে থাকে কুর্দ জনতা । একই সাথে রাজনৈতিক পরিধি দখল করা এবং পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক এবং আইনসম্মত রাজনৈতিক দল । দক্ষিণ তুরস্কের প্রায় সমস্ত মিউনিসিপ্যালিটি এই নূতন রাজনৈতিক শক্তির দখলে চলে আসে ।একই সময়ে সীমান্তের অপরপারে রোজাভা নিজেদের এলাকা আসাদ বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করে ২০১২ সালের জুলাই মাসে। অচালানের তত্বের অনুসরণে সংগঠিত হতে থাকে এক অভূতপূর্ব সামাজিক বিপ্লব ( এ বিষয়ে ইতিমধ্যে দুই পর্বে লেখা প্রকাশিত হয়েছে গুরুর ব্লগে ) । ২০১৩ সালের নভেম্বরে রোজাভা নিজেদের স্বশাসন ঘোষণা করে এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশ করে নিজেদের সংবিধান বা সামাজিক চুক্তি । অচালানের তত্বের অনুসারে নারীমুক্তি এবং জেন্ডার ইকুয়াল সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তুরস্কে এবং সিরিয়ার রোজাভায় সমস্ত প্রতিষ্ঠানে কো চেয়ার বা যৌথ নেতৃত্ব ব্যবস্থা প্রচলন করা হয় ,নিচের স্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত সমস্ত সংস্থায় একজন পুরুষ এবং একজন নারী নেতৃত্ব শেয়ার করবেন । প্রতিটি সংস্থায় নুন্যতম ৪০% মহিলা কোটা বাধ্যতামূলক করা হয় ।তুরস্কের কুর্দিস্তানে এবং সিরিয়ায় এই গণতান্ত্রিক স্বশাসিত ব্যবস্থা অতি দ্রুত সমাজের সমস্ত মানুষকে এক অভূতপূর্ব সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জুড়তে থাকে ,গড়ে উঠতে থাকে এক কমিউনিটি নির্ভর রাষ্ট্রের আওতার বাইরে স্বাধীন জীবন । তুরস্কের যুবক এবং পিকেকের গেরিলারা সীমান্ত পেরিয়ে রোজাভার নব্যগঠিত স্বশাসিত ব্যবস্থার সমর্থনে ,কোবানে প্রতিরোধের সংগ্রামে যোগদান করতে থাকেন এবং রোজাভার গণতান্ত্রিক কনফেডারেশনের শিক্ষা ,অভিজ্ঞতা তুরস্কের কুর্দিস্তানে বহন করে আনতে থাকেন । অচালনের তত্বের ভিত্তিতে তুরস্কে এবং রোজাভায় গড়ে ওঠা এই গণতান্ত্রিক স্বশাসন ব্যবস্থা তুরস্ক তো বটেই এমনকি যে কোন রাষ্ট্রের পক্ষেই অত্যন্ত বিপদজনক । আইন ব্যবস্থা , শিক্ষা ,স্বাস্থ্য ,উপার্জন, এমনকি সামরিক বাহিনী বজায় রাখার যে রাষ্ট্রের একাধিপত্য এই গণতান্ত্রিক স্বশাসন সেই সমস্ত একাধিপত্যের প্রতি কঠিন চ্যালেঞ্জ । সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই মডেলের সাফল্য এবং তুরস্কের প্রায় ১৭টি জেলা জুড়ে রাষ্ট্রের সমান্তরাল এই ব্যবস্থা তুরস্কের দীর্ঘকালীন আধিপত্যবাদি সরকারের অবশ্যই মাথাব্যথার কারন ।২০১৪ সালে এই সমান্তরাল ব্যবস্থা প্রতিরোধের উদ্দশ্যে তুরস্কের সরকার বলপ্রয়োগের রাস্তা অবলম্বন করতে শুরু করে , কার্ফু জারী করে ,সাঁজোয়া বাহিনীর সাহায্যে শহরের মহল্লাগুলীতে প্রবেশের চেষ্টা চালায় তুরস্কের সরকার -প্রতিরোধে গণতান্ত্রিক স্বশাসিত ব্যবস্থার প্রতিরক্ষাবাহিনী মহল্লায় প্রবেশের রাস্তা গুলীতে গভীর ট্রেঞ্চ খুঁড়তে থাকে , তৈরি করে ব্যারিকেড , হাল্কা অস্ত্র এবং মলোটভ ককটেল এর সাহায্যে তুরস্কের সামরিক শক্তির মোকাবিলা করতে থাকে । তুরস্কের সেনা গভীর ট্রেঞ্চ, ব্যরিকেড এবং শহরের যুব মিলিশিয়াকে অতিক্রম করতে না পেরে অবশেষে ফিরে যায় ব্যারাকে ।

তুরস্কের বর্তমান শাসক দল Recep Tayyip Erdogan এর নেতৃত্বে গত ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত । আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কেমাল আতাতুর্কের আপাত সেকুলার রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে তুরস্ক কে ইসলামী মৌলবাদের দিকে ক্রম পরিবর্তিত করার প্রধান কারিগর এই এরডোগানের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার অভিবাসনা বাকি সমস্ত শাসকের মতই বর্তমান । এখন এই তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিক সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্ট ভিত্তিক একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন । এবং এই সংবিধানের সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সাংসদ এবং নিরঙ্কুস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের উদ্দশ্যে ২০১৫ সালের জুন মাসের সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে Erdogan (অচালান, পিকেকে এবং তুরস্কের সরকারের মধ্যে)শান্তিচুক্তি অগ্রাহ্য করতে শুরু করেন । শুরু হয় কুর্দ এবং তুর্কী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন এবং তিক্ততা সৃষ্টির পরিচিত খেলা । যেমন আমাদের দেশে ভোটের পূর্বে দাঙ্গা লাগানো হয় অথবা জাতীবিদ্বেষ খুঁচিয়ে জাগিয়ে তোলার পরিচিত ফ্যসিস্ত রাস্তা অবলম্বনে এক টার্গেটেড ভোট ব্যাঙ্কের ভোট সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয় -ঠিক সেই রাস্তায় Erdogan প্রথমে অচালানের জেলের ভেতরে প্রাপ্ত রাজনৈতিক বন্দীর অধিকার সঙ্কুচিত করতে থাকেন,পি.কে.কের সাথে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া লাগাতে থাকেন , সীমান্তের ওপারে ইসলামিক স্টেটের সাথে কোবানের ১৩৫ দিনের স্তালিনগ্রাদ সদৃশ্য প্রতিরোধ সহযোগিতার পরিবর্তে কঠিন এম্বারগোর দেওয়াল খাড়া করে চূড়ান্ত অমানবিক অসহযোগিতার বাতাবরণ সৃষ্টি করেন -একই সাথে তুর্কী জনতাকে বার্তা দিতে থাকেন কেবলমাত্র আমার পার্টি এবং আমি Recep Tayyip Erdogan এই কুর্দ উপদ্রব ,তুরস্ক হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বাসনা কঠিন হস্তে দমন করতে পারি । জুন ২০১৫ সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল এরডোগানের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার বাসনায় বরফ শীতল বারি বর্ষণ করে । কুর্দ সমস্যার প্রতি সহমর্মি এবং সেক্যুলার লিবারেল পার্টি HDP এই প্রথম অভূতপূর্ব পরিমাণ সাংসদ তুরস্কের পার্লামেন্টে পাঠাতে সক্ষম হয় । সংবিধান সংশোধন করে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী নির্ভর ব্যবস্থাকে প্রেসিডেন্সিয়াল একাধিপত্যের স্বপ্ন কুর্দ এবং তুরস্কের প্রগতিশীল জনতার অংশ ধুলিস্যাত করতে আপাত সক্ষম হন।

Erdogan প্রেসিডেন্সিয়াল একাধিপত্যের আশায় ,তুরস্কের দীর্ঘকালীন গৃহযুদ্ধের অবসানের প্রাথমিক পদক্ষেপ পিকেকে এবং সরকারের ২০১৩ সালের শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করে পুনরায় নির্বাচন ঘোষণা করেন । ২০১৫ সালের জুলাই মাসে তুরস্কের বিমানবাহিনী পি.কে,কের ইরাকী কুর্দিস্তানের কুয়ান্দিল পাহাড়ের HQএ লাগাতার বোমাবর্ষণ শুরু করে , এই বোমাবর্ষণে পিকেকের কিছু সদস্যের সাথে সাতজনা সাধারণ নাগরিকও প্রান হারান । ১৬ বছর ধরে জেলবন্দী অচালানের তুরস্কে স্থায়ী শান্তির প্রয়াসের প্রথম পদক্ষেপ মাত্র ২বছর ৬ মাসের ব্যবধানে Erdoganএর প্রেসিডেন্সিয়াল একাধিপত্যের বাসনার সামনে ভঙ্গ হয় । ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় দমন এবং জনতার প্রতিরোধের অসাধারণ ইতিহাস ।

২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে এখনো পর্যন্ত তুরস্কের কুর্দ প্রভাবিত অঞ্চলে ৫২ বার কারফিউ ঘোষিত হয়েছে , প্রতিটি শহরে স্নাইপার মোতায়েন হয়েছে ,কুর্দ জনতার গণতান্ত্রিক স্বশাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ সামরিকবাহিনী প্রথাগত যুদ্ধে নিয়োজিত সামরিক অস্ত্র মোতায়েন করছে তুরস্কের কুর্দিস্তান অঞ্চলে। ইতিমধ্যে ১৭টিজেলার বাসিন্দাগণ স্বশাসন ঘোষণা করছেন,ট্রেঞ্চ কেটে ,ব্যারিকেড তৈরি করে প্রতিরোধের দেওয়াল গড়ে তুলছেন শহরে শহরে ,মহল্লায় মহল্লায়। এলাকায় রাষ্ট্রের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিস্থায় অক্ষম তুরস্কের সরকার কামান দেগে ,ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণে নিজেদের দেশের শহরগুলিকে অবাসযোগ্য করে তুলছে । পি.কে.কের শহীদদের কবরস্থান বোমায় বিধ্বংস করা হয়েছে কিন্তু এতদসত্বেও তুরস্কের সরকারী বাহিনী এখনো মহল্লাগুলিতে প্রবেশে অক্ষম প্রতিপন্ন হয়েছে । শহরের যুবক মিলিশিয়া বাহিনী ,ট্রেঞ্চগুলিকে আরও গভীর করে খুঁড়ছেন ,প্রত্যহ অস্ত্রবলে বলীয়ান হচ্ছেন , স্নাইপারের বুলেট থেকে বাঁচতে সারা শহর জুড়ে প্লাস্টিক পর্দার দৃষ্টি প্রতিহত কারী অবরোধ তৈরি করছেন । প্রধান রাস্তা এড়াতে এই বাড়ির ঐ বাড়ির দেওয়াল ভেঙ্গে শুঁড়ীপথ তৈরি করে পৌঁছে যাচ্ছেন এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় , খাবার ভাগ করছেন ,আহতদের উদ্ধার করছেন সৃষ্টি করছেন শহুরে প্রতিরোধের নূতন আর্কিটেকচার ।

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে তাঁরা এই শহরগুলির প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি থেকে প্রতিরোধকারীদের নির্মূল করবেন। তুরস্ক প্রভূত প্রানের বিনিময়ে এমনকি প্রত্যেক শহরকে দরকারে ধ্বংসস্তূপে পরিনত করে এই গণতান্ত্রিক স্বশাসনের ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দিতে উদ্যত।কুর্দিস্তানের হাজারে হাজারে জনতা কারফিউ অগ্রাহ্য করে রাস্তায় নামছেন এবং মূলত শহুরে যুবকরা প্রানের বিনিময়ে সদ্যঅর্জিত গণতান্ত্রিক স্বশাসনের অধিকার রক্ষা করছেন তুরস্কের কমপক্ষে ১৭টি জেলা জুড়ে । অচালান এবং পি.কে.কে দীর্ঘকালের সংগ্রাম এবং ক্রমাগত পথ পরিবর্তনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ সশস্ত্র আন্দোলন কে বিপুল জনতার আন্দোলনে পরিনত করতে সক্ষম হয়েছে , পোড় খাওয়া গেরিলা ,মিলিশিয়া এবং সাধারণ নাগরিকের পার্থক্য মিলিয়ে যাচ্ছে দ্রুত , সাধারণ মানুষ এমনকি বয়স্ক মানুষেরা নিজেদের স্বশাসন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার স্বার্থে অস্ত্র তুলে নিচ্ছেন সৃষ্টি হচ্ছে এক অসাধারণ প্রতিরোধের ইতিহাস -লাগাতার ২২ দিনের কারফিউয়ের অসহনীয় পরিবেশেও নাগরিকগণ শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন না, রক্ষা করছেন নিজেদের স্বাতন্ত্র্য । আদপে এই নূতন তত্বের বলে বলীয়ান লড়াই কেবলমাত্র তুরস্ক বা সিরিয়ার সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাস পালটে দেওয়ার লড়াই নয় বরং সমস্ত মধ্যপ্রাচ্যের যে কোন আধিপত্যবাদী সরকার বিরোধী , পুঁজিবাদী আধুনিকতা বিরোধী সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক ,জেন্ডার ইক্যুয়াল ,ইকোলজিকাল সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লড়াই।

১৯৯৭ সালে কুর্দ জনতার আন্দোলনের সমর্থনে নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন ‘We know what it means to be oppressed in your own country .We know the pain of a mother whose child has disappeared … I am part of the Kurdish Struggle . I am one of you ‘ Nelson Mandela Sept 1997 কালের নিয়মে নেলসন ম্যান্ডেলার কণ্ঠ বর্তমানে কুর্দ জনতার এই অসাধারণ আন্দোলনের সপক্ষে গর্জে উঠতে অক্ষম ,কিন্তু আমরা ?

পুনঃপাঠের জন্য ঃ-
Turkey’s Kurdish cities become war zones http://on.wsj.com/1OLGKwh via @WSJ
Scores of Kurdish civilians among hundreds killed in Turkey's southeast – HRW http://bit.ly/1YuVGcG
German politicians accuse Turkey of war against Kurds http://rudaw.net/english/middleeast/turkey/201220153 via @RudawEnglish
The return of war? Turkey's south-east region plunged into 'worst violence in years' | via @Telegraph http://www.telegraph.co.uk/news/
[Kurds resist state-imposed curfews in Turkey]: @ROAR_Magazine https://roarmag.org/essays/turkey-curfew-kurdish-resistance/

কোন মন্তব্য নেই:

Post Top Ad

Responsive Ads Here