যিশু নাকি ১৬ বছর ভারতে ছিলেন!-aajkaal.in
যত দূর জানা যায়, আনুমানিক ৪০০ খ্রিস্টাব্দে পোপ সেন্ট জুলিয়াস-১ নামে একজন রোমান ধর্মযাজক ২৫ ডিসেম্বর দিনটিকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করেন৷ সেই সময় রোমে আরও একটি উৎসবের কথা শোনা যায় তা হল, ‘স্যাটার্নালিয়া’ ছত্র্রব্ধব্ভব্জু্রপ্তন্রগ্গ উৎসব৷ ‘স্যাটার্ন’ থেকে ‘স্যাটার্নালিয়া’৷ ‘স্যাটার্ন’ হল কৃষির দেবতা৷ এই উৎসব একমাস ধরে চলত৷ বলতে গেলে দুটি উৎসবকে জুড়ে দিয়ে নামকরণ করা হল ‘ক্রিসমাস’ উৎসব৷ পরবর্তীকালে মিশর, ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন এবং তারপরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল৷ এইভাবেই যুগে যুগে জনপ্রিয় হয়েছে বড়দিন৷ যদিও ‘ক্রিসমাস’ কথার অর্থ খুবই সহজ৷ অর্থাৎ যা ভগবানের উৎসব, যে উৎসবে সকলে মিলে রুটি ও পানীয় খাওয়া হয়৷ তবুও তাঁর চর্চায় বিতর্ক যে পিছু ছাড়ে না৷ সত্যি করে বলতে কী, যিশুর জন্ম কবে, তা নিয়ে কোনও সঠিক প্রমাণ আমাদের হাতে নেই৷ নির্দিষ্ট করে বলা নেই, কবে তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন৷ এই যে ক্রিসমাসকে ঘিরে এত কল্পনা, নানা মুনির নানা মত, নানান বই, পত্রপত্রিকায় হরেক ব্যাখ্যা, সে সবের সূত্র ধরে যদি এগিয়ে যাই, তাহলে পুনরুত্থানের পর সুগন্ধী তেল দিয়ে তাঁর পা-ও ধুয়ে দেন৷ অনেকে আবার এমন কথাও বলেছেন যে, মেরি ম্যাগদলিন যিশুর বিবাহিতা স্ত্রী ছিলেন এবং যিশু ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সময় তিনি নাকি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন৷ যিশুর পুনরুত্থানের পর ফরাসি দেশে ওই মহিলাকে সরিকে দেওয়া হয়৷ সেখানে তিনি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন৷ তবে এমন সব রসালো খবরাখবরের পাশাপাশি তাঁর ক্লান্তিহীন বিশ্বভ্রমণের কাহিনীও বেশ চমকপ্রদ৷ সেই সুবাদে তিনি ভারতেও আসেন৷ এ কথা নিকোলাই নাটোভিচ নামে একজন রাশিয়ান লেখকের ভারত ভ্রমণ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী লেখায় উল্লেখ ছিল৷ তাঁর কলমে প্রভু যিশুর ভারত ভ্রমণের কথা ঊনবিংশ শতাব্দীতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷ তাতে লেখা ছিল, যিশু সিরিয়া হয়ে স্হলপথে কিংবা মিশর থেকে জলপথে ভারতবর্ষে আসেন এবং প্রায় ১৬ বছর থেকে এ দেশের নানা স্হান পরিভ্রমণ করেন৷ স্বামী অভেদানন্দও ১৯১৬ সালে আমেরিকা যাত্রাকালে চিকাগো শহরে রাশিয়ান লেখকের এই বইটির সন্ধান পান এবং দেশে ফিরে লাদাখে যান ওই লেখকের লেখার সত্যতা যাচাই করতে৷ তাতে তিনি যে সফল হন, অর্থাৎ সেটা যে সত্যি, তা তিনি তাঁর ‘কাশ্মীর ও তিব্বত’ গ্রম্হে লিখে গেছেন৷
আবার অপর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, যিশু ভারতে একবার নয়, দু’বার এসেছিলেন৷ প্রথম বার তিনি বিয়ে করার ভয়ে ১৩ বছর বয়সে সওদাগরদের সঙ্গে সিন্ধুদেশ অতিক্রম করে ভারতে এসেছিলেন এবং দীর্ঘ ১৬ বছর বিভিন্ন স্হান পরিদর্শন করে ভারতের নানা ধর্মীয় দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর ২৯ বছর বয়সে স্বদেশে ফিরে যান৷ কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, রোমান সম্রাটের অত্যাচারে তাঁর সম্প্রদায়ের সাথীরা সব ইজরায়েল ছেড়ে চলে গেছে৷ তাদের খোঁজে তিনি আর একবার কাবুল হয়ে ভারতে আসেন৷ জানা যায়, কাবুল দিয়ে এ দেশে আসার পথে তিনি ওখানকারই একটি পুকুরে হাত-মুখ ধুয়ে বিশ্রাম করেছিলেন৷ পরবর্তীকালে সেই পুকুরটির নাম হয়ে যায় ‘ঈশা তালাও’৷ মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে যিশুর নাম ঈশা৷ সেই উপলক্ষে প্রতি বছর এই ‘ঈশা তালাও’-এর ধারে মেলা বসে৷
এ ছাড়াও আরও একটি চমকপ্রদ ঘটনার উল্লেখ আছে যে, যিশু ও বুদ্ধ দুজনেই নাকি ৩০ বছর বয়সে ধর্মপ্রচার শুরু করেন৷ তার আগে দুজনেই নির্জন পাহাড়ে ৪০ দিন তপস্যা করেছিলেন৷ সেই সময় পথভ্রষ্ট করার জন্য বুদ্ধকে প্রথমে প্রলোভন ও পরে ভয় দেখানো হয়৷ যিশুকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে শয়তান৷ বুদ্ধ জলের ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হয়েছিলেন৷ যিশুও তাই৷ তিনি তাঁর শিষ্য পিটারকে নিয়ে জর্ডন নদীর ওপর দিয়ে হেঁটেছিলেন৷ আসলে প্রত্যেক ধর্মেই এমন অনেক ঘটনা বা গল্প আছে, যা একত্রিত করলে দেখা যাবে, ধর্মে, দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা সবাই এক৷ আজ যিশু যেমন খ্রিস্টধর্মের স্তম্ভ, তেমনই তিনি আমাদের আপনজন৷ এই উৎসব তাই বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টান, মুসলিম, জৈন সবার উৎসব৷ এখানেই ক্রিসমাস বা বড়দিন উৎসবের সর্বজনীনতা৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন