ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ ও জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার পরিণতি
(রেডিও তেহরান): অধিকৃত
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ইসরাইলের সমালোচনা
করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে দেয়া প্রতিবেদনে মাকারিম উইবিসোনো
বলেছেন ইহুদিবাদি ইসরাইল তার সাথে সহযোগিতা করছে না।
উইবিসোনো
২০১৪ সালের ২৪ জুনে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অধিকৃত ফিলিস্তিনের মানবাধিকার
পরিস্থিতি দেখাশোনার দায়িত্ব পান। কিন্তু অধিকৃত ফিলিস্তিনের ওই এলাকা
পরিদর্শন করতে চাইলে উইবিসোনোকে অনুমতি দেয় নি ইসরাইল। বারবার আবেদন
জানানোর পরও অনুমতি না পাবার কারণে তিনি চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই দায়িত্ব
থেকে ইস্তফা দেন। যদিও ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিনি তাঁর দায়িত্বে বহাল থাকছেন।
উইবিসোনো
তার প্রতিবেদনে জানিয়েছেন ইসরাইলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না করার মানে হলো
অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইল ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনীদের অধিকার লঙ্ঘন করে
যাচ্ছে যা খুবই দু:খজনক। ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ওইসব প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ ও নির্যাতনের কথা
সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাসহ তদন্ত দলগুলোকে
সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা কিংবা ওই এলাকা পরিদর্শন করার অনুমতিও
দিচ্ছে না ইসরাইল। এমনকি জাতিসংঘের পরিদর্শকদেরকেও অধিকৃত ফিলিস্তিন
ভূখণ্ডে ঢুকতে দেয় নি তারা।
ইসরাইলিদের
অপরাধ ও নির্যাতনের বিষয়টি এতোটাই স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক যে-কোনো
পর্যবেক্ষক, পরিদর্শক কিংবা তদন্ত টিমই সেখানে গেছে তারাই সেখানে
ইসরাইলিদের নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহতা খুব দ্রুত উপলব্ধি করতে
পেরেছে। ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের ভয়াবহতা এবং তাদের পাশবিক আচরণের বর্ণনা তারা
তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখও করেছেন।
এরকম
পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের কাছে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা হলো ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ
সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বজনমত গঠন করা এবং এই অবৈধ রাষ্ট্রটির
অপরাধের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এ
ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের গড়িমসি বা দেখেও না
দেখার ভান করার কারণে ইসরাইল তাদের অপরাধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে সাহস
করেছে কিংবা এই অপরাধযজ্ঞ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি কোন
পর্যায়ে গেলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইসরাইলের সমালোচনা করার মতো ঘটনা ঘটে
এমনকি এই সংস্থার কর্মকর্তা উইবিসোনো তাদের অপরাধযজ্ঞ তদন্ত করার অনুমতি না
পেয়ে দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছে-তা অনুধাবন করতে হবে। ইসরাইলের
ঔদ্ধত্যে জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় এই সংস্থার আইন বিশেষজ্ঞ
কর্মকর্তারা যে কতোটা অসন্তুষ্ট এবং বিরক্ত তাও ফুটে ওঠে এ ধরনের পদক্ষেপ
থেকে।
ইসরাইলের
আচরণ থেকে বোঝা যায় তারা তাদের অপরাধের মাত্রার ব্যাপারে কোনোরকম সীমারেখা
মানে না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয় ভূমিকার পাশাপাশি
পশ্চিমা সরকারগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে ইসরাইল তাদের এই অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে
যাচ্ছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে কিংবা আন্তর্জাতিক কনভেনশনকে
বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইসরাইল যে তাদের অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে তা বিশ্ব সমাজকে
প্রচণ্ডরকম ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। ইহুদিবাদি ইসরাইল প্রমাণ করেছে তারা
আন্তর্জাতিক কোনো রীতিনীতির ধার ধারে না। ইসরাইল আরও প্রমাণ করেছে তাদের
কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য ভয়াবহ হুমকি।
এরকম
পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ যদি ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষপ নেয়ার ব্যাপারে
নিষ্ক্রিয় থাকে তাহলে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই অবৈধ রাষ্ট্রটির
অপরাধযজ্ঞ আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে বিশেষজ্ঞমহলের বিশ্বাস।#
রেডিও তেহরান/এনএম/২২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন