ওবামার পদক্ষেপে প্রমাণিত হয়েছে আমেরিকা এখনও ইরানকে হুমকি মনে করে
(রেডিও তেহরান): মার্কিন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের ব্যাপারে জাতীয় জরুরী অবস্থার মেয়াদ নবায়ন
করেছেন। হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জরুরী অবস্থার বিষয়টি নবায়নের
পর প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, এ বিষয়ে একটি চিঠি মার্কিন কংগ্রেসের
প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে পাঠানো হয়েছে।
বিবৃতিতে
আরো বলা হয়েছে, পরমাণু সমঝোতা হলেও ইরান সরকারের কিছু কিছু নীতি বা
কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী যা কিনা মার্কিন জাতীয়
নিরাপত্তা, পররাষ্ট্র নীতি ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। এ কারণেই ইরানের
ব্যাপারে আমেরিকার জাতীয় জরুরী অবস্থা বহাল রাখা হল। এসব হুমকির মোকাবেলায়
ইরান বিরোধী কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলেও হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে
উল্লেখ করা হয়েছে।
আমেরিকায়
১৯৭৭ সালে মার্কিন কংগ্রেস একটি আইন পাশ করে এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তাতে
সই করেন। ওই আইন অনুযায়ী যে কোনো দেশের হুমকির মোকাবেলায় জাতীয় জরুরী
অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষমতা বলে
প্রেসিডেন্ট হুমকি সৃষ্টিকারী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়টি
পুনর্মূল্যায়ন করতে পারেন। এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন
করার পাশাপাশি তাদের সম্পদ আটক করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট।
এই
আইনের ভিত্তিতে ১৯৯৫ সালের মার্চে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল
ক্লিন্টন ইরানের ব্যাপারে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। এ সংক্রান্ত আইনের নিয়ম
অনুযায়ী এক বছর পার হলে আপনা আপনিই এর আর কার্যকারীটা থাকে না। তবে এর
মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে প্রেসিডেন্ট ফের নবায়ন করতে পারেন।
বিশ্লেষকরা
বলছেন, হোয়াইট হাউজের এ পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, আমেরিকা এখনও ইরানকে হুমকি
বলে মনে করে। আমরা গত ৫০ বছরে আমেরিকার ইরান বিরোধী কর্মকাণ্ড ও আচরণ যদি
পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাব মার্কিন কর্মকর্তারাই বরং ইরানের জন্য
হুমকি সৃষ্টি করেছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের অনেক বছর আগে থেকেই
আমেরিকা শত্রুতামূলক আচরণ করে আসছে।
উদাহরণ
স্বরূপ, ১৯৫৩ সালে ইরানের বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ব্রিটেনের
অভ্যুত্থান, ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি আমেরিকার সমর্থন,
ইরানের ওপর ইরাকে চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময় সাদ্দামের প্রতি সমর্থন ও ইরানের
জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে উস্কানি নেয়া, পারস্য উপসাগরে
মার্কিন রণতরী থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করে ২৯০
আরোহীকে হত্যা প্রভৃতি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। এ ছাড়া, ইরাকের সঙ্গে
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও আমেরিকার ইরান বিরোধী তৎপরতা থেমে নেই। ইরানের উন্নয়ন ও
অগ্রগতির চাকা থামিয়ে দেয়ার জন্য দেশটির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় কঠোর
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। গত প্রায় ১২ বছর ধরে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু
কর্মসূচির অজুহাতে দেশটির বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক নানান পদক্ষেপ নেয়া হয়।
পরমাণু সমঝোতার পরও মার্কিন কর্মকর্তাদের ইরান বিরোধী নীতি অব্যাহত রয়েছে।
তারা এখন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আমেরিকা
ইরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন দেয়ার অভিযোগ তুলছে। অথচ সারা
বিশ্ব জানে আমেরিকাই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল কায়দা তৈরি করেছে এবং এদেরকে
ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে। অথচ
সন্ত্রাসীদের দমনের কথা বলে ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করে আমেরিকা। বর্তমানে
আমেরিকা উগ্র ওহাবি তাকফিরি বা দায়েশ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে যারা সারা
বিশ্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। #
রেডিও তেহরান/মোঃ রেজওয়ান হোসেন/১০
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন