চলচ্চত্রি ‘মুহাম্মদ’ (সা.) ইরানে বপিুল প্রশংসতি - rangpur news

Breaking

Breaking News

rangpur news

This is news blog site.Here have important online newspaper.if you Concert:MD.Gulam azam sarkar. E-mail:gulamazam@gmail.com Mobil:01735632338

Windows

test banner

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

চলচ্চত্রি ‘মুহাম্মদ’ (সা.) ইরানে বপিুল প্রশংসতি

 চলচ্চত্রি ‘মুহাম্মদ’ (সা.) ইরানে বপিুল প্রশংসতি

র্শীষ নউিজ ডস্কে : ইরানরে চলচ্চত্রি ইতহিাসে সবচয়েে ব্যয়বহুল ছবি ‘মুহাম্মদ’ (সা.) অবশষেে মুক্তি পয়েছে।ে ইসলাম র্ধমরে পথপ্রর্দশক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ছলেবেলোর সময়টুকুকে অবলম্বন করে নর্মিতি এই ছবি ইরানে র্দশকদরে বপিুল প্রশংসা লাভ করছে।ে নন্দতি চলচ্চত্রিকার মাজদি মাজদিি ছবটিি পরচিালনা করছেনে।

নান্দনকিভাবে চত্রিায়তি এই ছবটিরি দর্ঘ্যৈ ১৭১ মনিটি। এটি নর্মিাণে ব্যয় হয়ছেে প্রায় চার কোটি র্মাকনি ডলার। ছবটিি আংশকিভাবে র্অথায়ন করছেে দশেটরি সরকার। ছবটিি নর্মিাণে সময় লগেছেে সাত বছররেও বশে।ি মাজদি মাজদিি বশ্বিজুড়ে নামডাকওয়ালা এক পরচিালক। তনিি র্বাতা সংস্থা এএফপকিে বলনে, ছবটিি হতে যাচ্ছে একটি ট্রলিোজরি প্রথম র্পব। এর মাধ্যমে ইসলামরে প্রকৃত ভাবর্মযাদা পুনরুদ্ধার করতে চান তনি,ি উগ্রবাদীদরে আচরণে যা বর্পিযয়রে সম্মুখীন। এই কাহনিীর ধারাবাহকিতা ধরে রখেে আরো দুটি ছবি নর্মিাণ করতে চান তনি।ি


প্রায় দড়ে হাজার বছর আগরে সৌদি আরবরে চত্রি বশে দভাবে ফুটয়িে তোলা হয়ছে।ে চরিাচরতি মরুভূমতিে উটে সওয়ার আরব বাসন্দিা নয়, বরং এই ছবরি চত্রিায়ণ ছলি অনকেটাই বষিয়ানুগ। মহানবীর (সা.) অভূতর্পূব জন্ম এবং কশৈোররে দকিে এগয়িে যাওয়ার সময়টুকু এখানে ফুটয়িে তোলা হয়ছেে দ নর্মিাণশলৈীর মাধ্যম।ে

একটি দৃশ্যে দখোনো হয়, উপজাতীয়দরে একটি সশস্ত্র দল পবত্রি মক্কা নগরীর দকিে ধয়েে আসার পথে একঝাঁক কাকরে ছুঁড়ে মারা পাথরইে ধ্বংস হয়ে যায়। এই দৃশ্যরে সঙ্গে সংযুক্ত তীব্র আবহসঙ্গীত প্রশংসনীয়। আরকেটি হৃদয়র্স্পশী দৃশ্যে দখো যায়, বালক মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতরে অলৌককি র্স্পশে তাঁর ধাত্রী সুস্থ হয়ে ওঠনে। পুরো ছবতিে মহানবীর মহমিা এভাবইে বভিন্নি ঘটনার পরপ্রিেেতি চত্রিায়ন করা হয়ছে।ে

র্দশকরাও দারুণভাবে গ্রহণ করছেনে ছবটি।ি ‘ছবটিি আমাদরে জন্য খুবই প্ররেণাদায়ক’, এভাবে বলনে মাশা রসৌলজাদহ্।ে মধ্যবয়স্ক এই নারী তহেরানরে একটি সনিমো হলে তাঁর মা এবং কশিোরী ময়েকেে নয়িে ছবটিি দখেছেনে।

ছবটিি দখোর পর ইরানে বসবাসকারী বাংলাদশেী সাংবাদকি আশরাফ রহমান তার ফসেবুক স্ট্যাটাসে লখিছেনে,‘‘র্দীঘ প্রতীার পর অবশষেে দখেলাম ইরানরে ইতহিাসে সবচয়েে ব্যয়বহুল চলচ্চত্রি ‘মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা.)’। বৃহস্পতবিার রাত ১১টা ৪০ মনিটিে শুরু হওয়া মুভটিি দখেলাম তহেরানরে কড়ঁৎড়ংয পরহবঢ়ষবী-এ। এটা ইরানরে সবচয়েে বড় সনিপ্লেক্সে। এখানে ১৪টি সনিমো হল রয়ছে।ে আসন সংখ্যা ২৮০০ট।ি সর্ম্পূণ ড-িসনিমো স্ট্যার্ন্ডাড র্পদায় ছবরি কোয়ালটিি হলো টু-ক।ে হলরে সাউন্ড সস্টিমে ডলব-ি৭.১।

মুভতিে প্রায় দড়ে হাজার বছর আগরে আরবরে চত্রি বশে দভাবে ফুটয়িে তোলা হয়ছে।ে বরিতহিীনভাবে চলা প্রায় তনি ঘণ্টার মুভটিি কখন যে শষে হয়ে গলে টরেও পলোম না! নঃিসন্দহেে এটা আমার জীবনে দখো সরো চলচ্চত্রি। মুভটিরি ঘটনাপ্রবাহ হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে কন্দ্রে করে আর্বততি হলওে তাঁর চরত্রিে অভনিয়কারী শশিুটরি মুখমণ্ডল দখোনো হয়ন।ি এমনকি যে শশিুটি মুহাম্মদ (সা.) এর চরত্রিে অভনিয় করছেে তার নামও দখোনো হয়ন।ি ফলে এতদনি যসেব অপপ্রচার চলছলি তা মথ্যিা প্রমাণতি হলো। তব,ে মুভতিে আবদুল মোত্তালবি, আবু তালবি, রাসূলরে মা আমনিা, দুধমাতা হালমিা, আবু সুফয়িান, আবু লাহাবসহ তৎকালীন নতেৃবৃন্দরে চরত্রিে অভনিয়কারীদরে দখোনো হয়ছে।ে

মুহাম্মাদ (সা.) এর জীবনীভত্তিকি ট্রলিজ’ির প্রথম র্পবে রাসূলরে জন্ম-র্পূবর্বতী কছিু ঘটনা ছলি ফ্যাশ-ব্যাক।ে ছবরি শুরুটা হয়- শোয়াবে আবু তালবি উপত্যকায় মুসলমানদরে অবরুদ্ধ জীবনরে দুঃখ-কষ্টরে চত্রি তুলে ধরার মাধ্যম।ে কুরাইশদরে নর্যিাতনমূলক চুক্তরি ফলে মুসলমানরা নদিারুণ কষ্টে জীবনযাপন করে আবু তালবি উপত্যকায়। সে সময় ববিি খাদজিা বভিন্নিভাবে মুসলমানদরে সহযোগতিা করছেনে। তবে মুভতিে হজরত খাদজিাকে দখোনো হয়ন।ি

শোয়াবে আবু তালবিরে ঘটনাপ্রবাহ ২০ মনিটি দখোনো হলওে রাসূল (সা.)কে একবারও দখোনো হয়ন।ি এক র্পযায়ে সূরা ফলিে র্বণতি ঘটনা প্রবাহ দখোনো হয়। ইয়মেনেি বাদশাহ আবরাহার হস্তবিাহনিী নয়িে মক্কায় আক্রমণ ও আবাবলি পাখরি মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতরিোধ চমৎকারভাবে ফুটয়িে তোলা হয়ছে।ে আবরাহা’র পতনরে প্রায় দুইমাস পর রাসূলখেোদার জন্ম হয়। জন্মরে সময়কার কছিু অলৌককি ঘটনা, মুহাম্মদরে বরিুদ্ধে ইহুদদিরে চক্রান্ত, তখনকার আরবে নারী শশিুকে জীবন্ত হত্যা, শশিুদরে বলদিানরে বরিুদ্ধে শশিু মুহাম্মদরে অবস্থান, দাসপ্রথা, দাস মুক্তরি বষিয়ে (মুহাম্মদ সা.)-এর ভূমকিা, দুধমাতা হালমিার কাছে শশিু মুহাম্মদকে হস্তান্তর, আবার মা আমনিার কাছে ফরিে আসা, আমনিার মৃত্যু, পাদ্রী বুহাইরার সঙ্গে রাসূলখেোদার সাাৎ, আবদুল মোত্তালবিরে মৃত্যু এবং রাসূলরে শশৈবরে কছিু মুজজিা তুলে ধরা হয়ছে।ে মুভরি শষোংশে আবারো শোয়াবে আবু তালবিরে ঘটনা দখোনো হয়ছেে যখোনে দখো যায়, মক্কার কুরাইশরা বনু হাশমি গোত্ররে সঙ্গে যে নর্যিাতনমূলক চুক্তি করছেলি সইে চুক্তরি দললি পোকায় খয়েে ফলে।ে ফলে চুক্তি বাতলি হয়ে যায় এবং নর্বিাসতি মুসলমানরা মুক্তি পায়। মুভটিি শষে হয়ছেে একটি নাতে রাসূল দয়ি।ে

ছবটিি না দখেইে যারা এতদনি সমালোচনা করছেনে, তারা যদি তা দখেনে তাহলে মাজদি মাজদিকিে নশ্চিয়ই ধন্যবাদ দবেনে। ইসলামী ইরান এর আগওে বভিন্নি নবী-রাসূলগণরে জীবনীর ওপর চলচ্চত্রি ও সরিয়িাল নর্মিাণ করছে।ে যমেন : হজরত ইউসুফ (আ.), হজরত মারয়িাম (আ.), হজরত সুলাইমান (আ.), হজরত ইব্রাহীম (আ.), হজরত আইয়ুব (আ.) প্রভৃত।ি কন্তিু মুহাম্মাদ (সা.) চলচ্চত্রিটরি মতো এত চমৎকার ছবি ইরান কনে, গোটা মুসলমি বশ্বিে আর হয়ন।ি এই মুভরি মাধ্যমে মাজদি মাজদিি পাশ্চাত্যে রাসূল (সা.) এর অবমাননাকর ছায়াছবি ‘ফতিনা’, ‘ইনসন্সে অব মুসলমিস’ ও ডনেশি র্কাটুনরে উপযুক্ত জবাব দয়িছেনে। ইসলাম যে সন্ত্রাসী র্ধম নয়, তা রাসূলরে চারত্রিমার্ধুয দয়িে ফুটয়িে তোলা হয়ছে।ে আমি মনে কর,ি এ ধরনরে কাজ আরো বশেি বশেি হওয়া দরকার।

র্বতমান বশ্বিে এখন র্পযন্ত হজরত ঈসা (আ.) কে নয়িে প্রায় ২৫০টি ফল্মি, হজরত মুসা (আ.) কে নয়িে প্রায় ১২০টি ফল্মি এবং অন্যান্য নবী রাসূলদরে নয়িে প্রায় ৮০টি ফল্মি এবং গৌতম বুদ্ধকে নয়িে প্রায় ৪০টরি মতো ফল্মি নর্মিতি হয়ছে;ে অথচ সখোনে র্সবশষে ও র্সবশ্রষ্ঠে রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) কে নয়িে চলচ্চত্রিরে সংখ্যা মাত্র দুটো! চলচ্চত্রিরে মতো শক্তশিালী এ মাধ্যম আরো বশেি করে ব্যবহার করা উচতি।

মহানবীর জীবনীভত্তিকি প্রথম ছায়াছবি নর্মিাণ করছেলিনে সরিয়ি-আমরেকিান চলচ্চত্রি নর্মিাতা মোস্তফা আক্কাদ। ওই ছায়াছবরি নাম ‘দ্য ম্যাসজে’। ১৯৭৬ সালে তা মুক্তি পাওয়ার পর মুসলমান বশ্বিরে কোনো কোনো মহল তার কঠোর সমালোচনা করছেলি। সত্যি বলতে কী, সমালোচকদরে কাজই হলো সমালোচনা করা। তারা ন্যায়-অন্যায় ও বচিারবুদ্ধরি চয়েে হংিসা ও পরশ্রীকাতরতাকে বশেি কাজে লাগায়। তারা ইসলাম অবমাননার জবাব দয়োর মতা রাখে না কন্তিু কউে উপযুক্ত জবাব দলিে তারও সমালোচনা শুরু করনে! এর মাধ্যমে তারা মুসলমানদরে তি করার পাশাপাশি ইসলামবদ্বিষেীদরে উপকার কর।ে

যাই হোক, ইরানে প্রর্দশন শষেে মুভটিি সারা বশ্বিে ছড়য়িে পড়বে বলে আশা কর।ি রাসূলরে প্রতি ভালোবাসা প্রর্দশনরে জন্য সাড়ে চারশ কোটি টাকা ব্যয়ে ছবটিি নর্মিাণরে জন্য পরচিালক মাজদি মাজদিি ও ইরান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

তহেরান জমজমাট

বলো ১১টার মধ্যইে জমজমাট হয়ে ওঠে প্রোগৃহ। হাউসফুল না হলওে কমতি ছলি না র্দশকরে। কন্তিু বলো গড়াতে না গড়াতইে পররে সব শোর টকিটে ‘সোল্ড আউট’! এমনকি র্দশকদরে বাড়তি চাহদিার কারণে শোর সংখ্যা বাড়য়িে মাঝরাত র্পযন্ত টনেে নয়িে যাওয়া হয়।

পরবিাররে সবাইসহ পুরো সাতজনরে গ্রুপ নয়িে এসছেলিনে ২১ বছররে তরুণ আবুল ফজল ফাতহে।ি

তনিি বলনে, ‘ছবটিি ভালো লগেছেে আমাদরে সবার। আমার ধারণা, যারা ইসলাম সম্বন্ধে সঠকিভাবে জানে না, এই ছবটিা দয়িইে তারা শুরু করতে পার।ে’

একটি সনিমো হলরে র্কমী মহ্দেি আজর বলনে, ‘ছবটিা লম্বা বলে শুরুতে অনকেরে মনে হতে পারে একটু একঘয়ে,ে কন্তিু আসলে তা না। ভজ্যিুয়ালি ছবটিা দারুণ আর্কষণীয়, র্দশককে মুগ্ধ করার মতা রয়ছেে এর।’

মোহাম্মদ মহেদি হইেদারয়িান প্রযোজতি এই ছবরি দৃশ্য ধারণ করা হয়ছেে ইরান ও দণি আফ্রকিার শহর বলো-বলোত।ে

বশিাল বাজটেরে এই ছবতিে কাজ করছেনে বশ্বিরে বভিন্নি দশেরে কারগিরি বষিয়ে অভজ্ঞি ব্যক্তরিা। সনিমোটোগ্রাফি করছেনে তনিবার অস্কার জতো ইতালরি ভত্তিোরওি স্তোররেো, এডটিংি করছেনে ইতালরি রর্বাটাে পরেপগিনান,ি স্পশোল ইফক্টেরে কাজ করছেনে যুক্তরাষ্ট্ররে স্কট ই অ্যান্ডারসন, মকেআপ করছেনে ইতালরি গয়িানত্তেো ডি রসি এবং সংগীত সংযোজনে কাজ করছেনে ভারতরে অস্কারজয়ী সংগীত পরচিালক এ আর রহমান।

তবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন নয়িে নর্মিতি ছবি এটইি প্রথম নয়। নন্দতি র্মাকনি চলচ্চত্রিকার মুস্তাফা আকদ ১৯৭৬ সালে বানয়িছেলিনে ‘মুহাম্মদ, মসেঞ্জোর অব গড’ নামরে একটি ছব।ি দারুণ সাফল্যও পয়েছেলি সইে ছবটি।ি

তবে সবাই যে এই নতুন ছবটিি নয়িে উচ্ছ্বসতি, তমেন কন্তিু নয়। এদরেই একজন কোমলি র্আজমান্দ।ি ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ পড়ালখো করছনে ফল্মি ডরিকেশন নয়ি।ে তনিি বললনে, ‘ছবটিা নয়িে অনকে কথা শুনছেি এতদনি। সত্যি করে যদি বল,ি যা দখেছেি তার চয়েে আমার প্রত্যাশা আরো বশেি ছলি। মুস্তাফা আকদরে ছবরি চয়েে এটা আরো উচ্চমানরে হব,ে এমনটাই প্রত্যাশা ছলি আমার।’

নর্মিাতারা অবশ্য এই ছবকিে অন্য কোনোকছিুর সঙ্গে তুলনা করতে নারাজ। এমনকি প্রতদ্বিন্দ্বতিার মধ্যওে এই ছবকিে আনা হয়ন।ি এ কারণে ইরানরে অন্যতম চলচ্চত্রি উৎসব ফাজর ফল্মি ফস্টেভ্যিালে এটকিে প্রতযিোগতিার বাইরে রখেে আলাদাভাবে প্রর্দশন করা হয়।

শয়িা অধ্যুষতি ইরানে ছবটিরি পরর্বতী প্রর্দশনীর টকিটেও মোটামুটি সব বক্রিি হয়ে গছেে এরই মধ্য।ে তবে সুন্নি সম্প্রদায়রে কাছে এই ছবটিি বর্তিক তরৈি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছ।ে

ছবরি শল্পিীদরে নয়িে পরচিালক মাজদিি এখন কানাডায়, মন্ট্রলি চলচ্চত্রি উৎসবে যোগ দতিে যাচ্ছনে তাঁরা। ‘মুহাম্মদ’ (সা.) ছবটিরি প্রর্দশনীর মাধ্যমইে র্পদা উঠতে যাচ্ছে এই উৎসবরে।
শীর্ষ নিউজ ডেস্ক : ইরানের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি ‘মুহাম্মদ’ (সা.) অবশেষে মুক্তি পেয়েছে। ইসলাম ধর্মের পথপ্রদর্শক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ছেলেবেলার সময়টুকুকে অবলম্বন করে নির্মিত এই ছবি ইরানে দর্শকদের বিপুল প্রশংসা লাভ করেছে। নন্দিত চলচ্চিত্রকার মাজিদ মাজিদি ছবিটি পরিচালনা করেছেন।
নান্দনিকভাবে চিত্রায়িত এই ছবিটির দৈর্ঘ্য ১৭১ মিনিট। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি মার্কিন ডলার। ছবিটি আংশিকভাবে অর্থায়ন করেছে দেশটির সরকার। ছবিটি নির্মাণে সময় লেগেছে সাত বছরেরও বেশি। মাজিদ মাজিদি বিশ্বজুড়ে নামডাকওয়ালা এক পরিচালক। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ছবিটি হতে যাচ্ছে একটি ট্রিলোজির প্রথম পর্ব। এর মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে চান তিনি, উগ্রবাদীদের আচরণে যা বিপর্যয়ের সম্মুখীন। এই কাহিনীর ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আরো দুটি ছবি নির্মাণ করতে চান তিনি।
প্রায় দেড় হাজার বছর আগের সৌদি আরবের চিত্র বেশ দভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চিরাচরিত মরুভূমিতে উটে সওয়ার আরব বাসিন্দা নয়, বরং এই ছবির চিত্রায়ণ ছিল অনেকটাই বিষয়ানুগ। মহানবীর (সা.) অভূতপূর্ব জন্ম এবং কৈশোরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়টুকু এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দ নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে।
একটি দৃশ্যে দেখানো হয়, উপজাতীয়দের একটি সশস্ত্র দল পবিত্র মক্কা নগরীর দিকে ধেয়ে আসার পথে একঝাঁক কাকের ছুঁড়ে মারা পাথরেই ধ্বংস হয়ে যায়। এই দৃশ্যের সঙ্গে সংযুক্ত তীব্র আবহসঙ্গীত প্রশংসনীয়। আরেকটি হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যে দেখা যায়, বালক মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতের অলৌকিক স্পর্শে তাঁর ধাত্রী সুস্থ হয়ে ওঠেন। পুরো ছবিতে মহানবীর মহিমা এভাবেই বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেেিত চিত্রায়ন করা হয়েছে।
দর্শকরাও দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন ছবিটি। ‘ছবিটি আমাদের জন্য খুবই প্রেরণাদায়ক’, এভাবে বলেন মাশা রসৌলজাদেহ্। মধ্যবয়স্ক এই নারী তেহরানের একটি সিনেমা হলে তাঁর মা এবং কিশোরী মেয়েকে নিয়ে ছবিটি দেখেছেন।
ছবিটি দেখার পর ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশী সাংবাদিক আশরাফ রহমান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন,‘‘দীর্ঘ প্রতীার পর অবশেষে দেখলাম ইরানের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র ‘মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা.)’। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া মুভিটি দেখলাম তেহরানের Kourosh cineplex-এ। এটা ইরানের সবচেয়ে বড় সিনেপ্লেক্স। এখানে ১৪টি সিনেমা হল রয়েছে। আসন সংখ্যা ২৮০০টি। সম্পূর্ণ ডি-সিনেমা স্ট্যান্ডার্ড পর্দায় ছবির কোয়ালিটি হলো টু-কে। হলের সাউন্ড সিস্টেম ডলবি-৭.১।
মুভিতে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের আরবের চিত্র বেশ দভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিরতিহীনভাবে চলা প্রায় তিন ঘণ্টার মুভিটি কখন যে শেষ হয়ে গেল টেরও পেলাম না! নিঃসন্দেহে এটা আমার জীবনে দেখা সেরা চলচ্চিত্র। মুভিটির ঘটনাপ্রবাহ হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হলেও তাঁর চরিত্রে অভিনয়কারী শিশুটির মুখমণ্ডল দেখানো হয়নি। এমনকি যে শিশুটি মুহাম্মদ (সা.) এর চরিত্রে অভিনয় করেছে তার নামও দেখানো হয়নি। ফলে এতদিন যেসব অপপ্রচার চলছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হলো। তবে, মুভিতে আবদুল মোত্তালিব, আবু তালিব, রাসূলের মা আমিনা, দুধমাতা হালিমা, আবু সুফিয়ান, আবু লাহাবসহ তৎকালীন নেতৃবৃন্দের চরিত্রে অভিনয়কারীদের দেখানো হয়েছে।
মুহাম্মাদ (সা.) এর জীবনীভিত্তিক ট্রিলজি’র প্রথম পর্বে রাসূলের জন্ম-পূর্ববর্তী কিছু ঘটনা ছিল ফ্যাশ-ব্যাকে। ছবির শুরুটা হয়- শোয়াবে আবু তালিব উপত্যকায় মুসলমানদের অবরুদ্ধ জীবনের দুঃখ-কষ্টের চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে। কুরাইশদের নির্যাতনমূলক চুক্তির ফলে মুসলমানরা নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করে আবু তালিব উপত্যকায়। সে সময় বিবি খাদিজা বিভিন্নভাবে মুসলমানদের সহযোগিতা করেছেন। তবে মুভিতে হজরত খাদিজাকে দেখানো হয়নি।
শোয়াবে আবু তালিবের ঘটনাপ্রবাহ ২০ মিনিট দেখানো হলেও রাসূল (সা.)কে একবারও দেখানো হয়নি। এক পর্যায়ে সূরা ফিলে বর্ণিত ঘটনা প্রবাহ দেখানো হয়। ইয়েমেনি বাদশাহ আবরাহার হস্তিবাহিনী নিয়ে মক্কায় আক্রমণ ও আবাবিল পাখির মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতিরোধ চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আবরাহা’র পতনের প্রায় দুইমাস পর রাসূলেখোদার জন্ম হয়। জন্মের সময়কার কিছু অলৌকিক ঘটনা, মুহাম্মদের বিরুদ্ধে ইহুদিদের চক্রান্ত, তখনকার আরবে নারী শিশুকে জীবন্ত হত্যা, শিশুদের বলিদানের বিরুদ্ধে শিশু মুহাম্মদের অবস্থান, দাসপ্রথা, দাস মুক্তির বিষয়ে (মুহাম্মদ সা.)-এর ভূমিকা, দুধমাতা হালিমার কাছে শিশু মুহাম্মদকে হস্তান্তর, আবার মা আমিনার কাছে ফিরে আসা, আমিনার মৃত্যু, পাদ্রী বুহাইরার সঙ্গে রাসূলেখোদার সাাৎ, আবদুল মোত্তালিবের মৃত্যু এবং রাসূলের শৈশবের কিছু মুজিজা তুলে ধরা হয়েছে। মুভির শেষাংশে আবারো শোয়াবে আবু তালিবের ঘটনা দেখানো হয়েছে যেখানে দেখা যায়, মক্কার কুরাইশরা বনু হাশিম গোত্রের সঙ্গে যে নির্যাতনমূলক চুক্তি করেছিল সেই চুক্তির দলিল পোকায় খেয়ে ফেলে। ফলে চুক্তি বাতিল হয়ে যায় এবং নির্বাসিত মুসলমানরা মুক্তি পায়। মুভিটি শেষ হয়েছে একটি নাতে রাসূল দিয়ে।
ছবিটি না দেখেই যারা এতদিন সমালোচনা করেছেন, তারা যদি তা দেখেন তাহলে মাজিদ মাজিদিকে নিশ্চয়ই ধন্যবাদ দেবেন। ইসলামী ইরান এর আগেও বিভিন্ন নবী-রাসূলগণের জীবনীর ওপর চলচ্চিত্র ও সিরিয়াল নির্মাণ করেছে। যেমন : হজরত ইউসুফ (আ.), হজরত মারিয়াম (আ.), হজরত সুলাইমান (আ.), হজরত ইব্রাহীম (আ.), হজরত আইয়ুব (আ.) প্রভৃতি। কিন্তু মুহাম্মাদ (সা.) চলচ্চিত্রটির মতো এত চমৎকার ছবি ইরান কেন, গোটা মুসলিম বিশ্বে আর হয়নি। এই মুভির মাধ্যমে মাজিদ মাজিদি পাশ্চাত্যে রাসূল (সা.) এর অবমাননাকর ছায়াছবি ‘ফিতনা’, ‘ইনসেন্স অব মুসলিমস’ ও ডেনিশ কার্টুনের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। ইসলাম যে সন্ত্রাসী ধর্ম নয়, তা রাসূলের চারিত্রমাধুর্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমি মনে করি, এ ধরনের কাজ আরো বেশি বেশি হওয়া দরকার।
বর্তমান বিশ্বে এখন পর্যন্ত হজরত ঈসা (আ.) কে নিয়ে প্রায় ২৫০টি ফিল্ম, হজরত মুসা (আ.) কে নিয়ে প্রায় ১২০টি ফিল্ম এবং অন্যান্য নবী রাসূলদের নিয়ে প্রায় ৮০টি ফিল্ম এবং গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে প্রায় ৪০টির মতো ফিল্ম নির্মিত হয়েছে; অথচ সেখানে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) কে নিয়ে চলচ্চিত্রের সংখ্যা মাত্র দুটো! চলচ্চিত্রের মতো শক্তিশালী এ মাধ্যম আরো বেশি করে ব্যবহার করা উচিত।
মহানবীর জীবনীভিত্তিক প্রথম ছায়াছবি নির্মাণ করেছিলেন সিরিয়-আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা আক্কাদ। ওই ছায়াছবির নাম ‘দ্য ম্যাসেজ’। ১৯৭৬ সালে তা মুক্তি পাওয়ার পর মুসলমান বিশ্বের কোনো কোনো মহল তার কঠোর সমালোচনা করেছিল। সত্যি বলতে কী, সমালোচকদের কাজই হলো সমালোচনা করা। তারা ন্যায়-অন্যায় ও বিচারবুদ্ধির চেয়ে হিংসা ও পরশ্রীকাতরতাকে বেশি কাজে লাগায়। তারা ইসলাম অবমাননার জবাব দেয়ার মতা রাখে না কিন্তু কেউ উপযুক্ত জবাব দিলে তারও সমালোচনা শুরু করেন! এর মাধ্যমে তারা মুসলমানদের তি করার পাশাপাশি ইসলামবিদ্বেষীদের উপকার করে।
যাই হোক, ইরানে প্রদর্শন শেষে মুভিটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করি। রাসূলের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য সাড়ে চারশ কোটি টাকা ব্যয়ে ছবিটি নির্মাণের জন্য পরিচালক মাজিদ মাজিদি ও ইরান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
তেহরান জমজমাট
বেলা ১১টার মধ্যেই জমজমাট হয়ে ওঠে প্রোগৃহ। হাউসফুল না হলেও কমতি ছিল না দর্শকের। কিন্তু বেলা গড়াতে না গড়াতেই পরের সব শোর টিকেট ‘সোল্ড আউট’! এমনকি দর্শকদের বাড়তি চাহিদার কারণে শোর সংখ্যা বাড়িয়ে মাঝরাত পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরিবারের সবাইসহ পুরো সাতজনের গ্রুপ নিয়ে এসেছিলেন ২১ বছরের তরুণ আবুল ফজল ফাতেহি।
তিনি বলেন, ‘ছবিটি ভালো লেগেছে আমাদের সবার। আমার ধারণা, যারা ইসলাম সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানে না, এই ছবিটা দিয়েই তারা শুরু করতে পারে।’
একটি সিনেমা হলের কর্মী মেহ্দি আজর বলেন, ‘ছবিটা লম্বা বলে শুরুতে অনেকের মনে হতে পারে একটু একঘেয়ে, কিন্তু আসলে তা না। ভিজ্যুয়ালি ছবিটা দারুণ আকর্ষণীয়, দর্শককে মুগ্ধ করার মতা রয়েছে এর।’
মোহাম্মদ মেহদি হেইদারিয়ান প্রযোজিত এই ছবির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে ইরান ও দণি আফ্রিকার শহর বেলা-বেলাতে।
বিশাল বাজেটের এই ছবিতে কাজ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারিগরি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন তিনবার অস্কার জেতা ইতালির ভিত্তোরিও স্তোরেরো, এডিটিং করেছেন ইতালির রবার্টো পেরপিগনানি, স্পেশাল ইফেক্টের কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্কট ই অ্যান্ডারসন, মেকআপ করেছেন ইতালির গিয়ানেত্তো ডি রসি এবং সংগীত সংযোজনে কাজ করেছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমান।
তবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন নিয়ে নির্মিত ছবি এটিই প্রথম নয়। নন্দিত মার্কিন চলচ্চিত্রকার মুস্তাফা আকদ ১৯৭৬ সালে বানিয়েছিলেন ‘মুহাম্মদ, মেসেঞ্জার অব গড’ নামের একটি ছবি। দারুণ সাফল্যও পেয়েছিল সেই ছবিটি।
তবে সবাই যে এই নতুন ছবিটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত, তেমন কিন্তু নয়। এদেরই একজন কোমিল আর্জমান্দি। ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ পড়ালেখা করছেন ফিল্ম ডিরেকশন নিয়ে। তিনি বললেন, ‘ছবিটা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি এতদিন। সত্যি করে যদি বলি, যা দেখেছি তার চেয়ে আমার প্রত্যাশা আরো বেশি ছিল। মুস্তাফা আকদের ছবির চেয়ে এটা আরো উচ্চমানের হবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল আমার।’
নির্মাতারা অবশ্য এই ছবিকে অন্য কোনোকিছুর সঙ্গে তুলনা করতে নারাজ। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও এই ছবিকে আনা হয়নি। এ কারণে ইরানের অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসব ফাজর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটিকে প্রতিযোগিতার বাইরে রেখে আলাদাভাবে প্রদর্শন করা হয়।
শিয়া অধ্যুষিত ইরানে ছবিটির পরবর্তী প্রদর্শনীর টিকেটও মোটামুটি সব বিক্রি হয়ে গেছে এরই মধ্যে। তবে সুন্নি সম্প্রদায়ের কাছে এই ছবিটি বিতর্ক তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ছবির শিল্পীদের নিয়ে পরিচালক মাজিদি এখন কানাডায়, মন্ট্রিল চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে যাচ্ছেন তাঁরা। ‘মুহাম্মদ’ (সা.) ছবিটির প্রদর্শনীর মাধ্যমেই পর্দা উঠতে যাচ্ছে এই উৎসবের।
- See more at: http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=19032#sthash.GE9FaPaU.dpuf

কোন মন্তব্য নেই:

Post Top Ad

Responsive Ads Here