নেপালে ভারতীয় সব টিভি চ্যানেল বন্ধ করল কেবল অপারেটররা
(রেডিও তেহরান): নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে সেদেশে ভারতের সব টিভি চ্যানেল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০ টা থেকে সব কেবল কোম্পানি যৌথ সিদ্ধান্তে কেবল থেকে ভারতীয় চ্যানেলকে সরিয়ে ফেলেছে। তার পরিবর্তে এখন পাকিস্তানি চ্যানেল এবং চীনা চ্যানেল দেখানো হচ্ছে।
ফেডারেশন অফ কেবল টিভি এসোসিয়েশন–এর
প্রেসিডেন্ট সুশীল প্রোজৌলি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘তারা ভারতীয় টিভি চ্যানেল
সম্প্রচার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ, ভারত নেপালের সার্বভৌমত্বে
হস্তক্ষেপ করছে।’
তিনি জানান, ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার
বন্ধ করতে চাপ আসছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টা
থেকে তারা এসব চ্যানেল দেখানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায়
ভারতীয় হিন্দি চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
নেপালে চলা মদেশি আন্দোলনের পেছনে ভারতের
সমর্থন থাকার অভিযোগকে কেন্দ্র করে নেপালে ভারত-বিরোধী তৎপরতা জোরদার
হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশ, সেখানে হিন্দি ফিল্ম, ভারতীয় নম্বর প্লেট লাগানো
গাড়িও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মাওবাদীদের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগে
আহ্বান জানানো হয়। সরকারের এক মন্ত্রী অবশ্য বলছেন, এটা কেবল কোম্পানির
নিজস্ব সিদ্ধান্ত, সরকার এটাকে সমর্থন করে না।
নেপালে গত সপ্তাহে নয়া সংবিধান গৃহীত
হওয়ার পরে দক্ষিণ নেপালের তরাই অঞ্চলের মদেশি এবং থারু সম্প্রদায়ের পক্ষ
থেকে তীব্র বিরোধিতা করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, নয়া সংবিধানে তারা যথেষ্ট
অধিকার এবং প্রতিনিধিত্ব পায়নি। এ নিয়ে আন্দোলনের জেরে জ্বালানি, সব্জি এবং
ইমারতি দ্রব্য বহনকারী বহু ট্রাক সীমান্তে আটকে পড়ে।
এর আগে নতুন সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে দেশটির
দক্ষিণাঞ্চলে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে
কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়। নতুন সংবিধান অনুযায়ী, দেশটি বিশ্বের একক
সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু রাষ্ট্রের খেতাব থেকে বের হয়ে এসে এখন ধর্মনিরপেক্ষ
রাষ্ট্র। এছাড়া কেন্দ্রশাসিত সাতটি প্রদেশে বিভক্ত হচ্ছে নেপাল।
নেপালে নতুন সংবিধান নিয়ে ভারত-নেপাল
সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে নেপালি
বিক্ষোভকারীরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল দাহ করে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ভারত নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনধিকার চর্চার
পাশাপাশি আর্থিক অবরোধ করে সেদেশের সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছে। সোমবার
কাঠমান্ডুতে নেপালি ছাত্ররা ভারতীয় দূতাবাসের সামনে ভারত-বিরোধী স্লোগান
দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
লক্ষীপ্রসাদ ঢাকাল বলেছেন, ‘আর্থিক অবরোধের জন্য, শেষ চারদিনে অত্যাবশকীয়
পণ্য নিয়ে কোনো ট্রাক নেপালে ঢোকেনি। যদিও সোমবার গাড়ির জ্বালানি এবং
রান্নার গ্যাসের কয়েকটি গাড়ি ঢুকতে পেরেছে।
নেপালের ৭০ শতাংশ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যই
যায় ভারত থেকে। সেদেশের সঙ্গে পাঁচটি বাণিজ্যিক সীমান্ত দিয়ে এসব পণ্য ভারত
থেকে আমদানি করে নেপাল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের উপরে
নির্ভরশীলতা কমাতে চীন সীমান্তের দুটি পথ আবার খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে
নেপাল। গত এপ্রিলে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরে এই সীমান্ত দুটি বন্ধ রাখা
হয়েছিল। নেপালের বর্তমান পদক্ষেপ এবং সেদেশের মধ্যে ভারত বিরোধী আন্দোলনের
জেরে ক্রমশ ভারত এবং নেপালের মধ্যে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠছে বলে
বিশ্লেষকরা মনে করছেন। #
রেডিও তেহরান/এমএএইচ/এআর/২৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন