মুম্বাইয়ে বোমা হামলার দায়ে অবশেষে ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি কার্যকর
(রেডিও তেহরান): ভারতের মুম্বাইতে ১৯৯৩ সালে ধারাবাহিক বোমা হামলার দায়ে ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
(বৃহস্পতিবার) সকাল ৭ টায় নাগপুর
কেন্দ্রীয় কারাগারে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ফাঁসি হয় ইয়াকুব মেমনের। ৭ টা ১০
মিনিটের মধ্যে ফাঁসির প্রক্রিয়া শেষ হয়। পরে চিকিৎসকরা মেমনের মৃত্যু
নিশ্চিত হওয়ার ঘোষণা দেন। ময়না তদন্ত শেষ হওয়ার পরে ইয়াকুব মেমনের মরদেহ
তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হবে।
আজ সকাল ১১ টায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফোড়নবিশ সরকারিভাবে মেমনের ফাঁসির খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন।
ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে আদালতের ৫০০
মিটার এলাকা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। মুম্বাইয়ের আইনশৃঙ্খলা বজায়
রাখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রায় ৪৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মুম্বাইয়ের বিভিন্ন সড়ক গুরুত্বপূর্ণস্থানে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার
পুলিশ।
বুধবার ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি স্থগিতের
আবেদন খারিজ করে দেয় বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অমিতাভ রায় এবং
বিচারপতি পি সি পন্থ-এর সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ।
পরে ইয়াকুব মেমনের আইনজীবী রাজু
রামচন্দ্রন প্রেসিডেন্টের কাছে ফাঁসি মওকুফের আবেদন জানান। রাত ১০ টায়
প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায় এই আবেদন খারিজ করে দেন।
পরে গভীর রাতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান
বিচারপতির বাড়িতে উপস্থিত হন সিনিয়র আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণসহ অন্যান্যরা।
১৪ দিনের জন্য ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি স্থগিত করার দাবি জানান তারা। পরে
নজিরবিহীনভাবে রাত ১২ টায় বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অমিতাভ রায় এবং
বিচারপতি পি সি পন্থ-এর সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করা হয়। রাত ৩ টা ২০
মিনিটে শুরু হয় নতুনভাবে শুনানি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি এবং
মেমনের আইনজীবীদের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে সওয়াল জবাব চলে। ডিভিশন
বেঞ্চের বিচারপতিরা বলেন, ইয়াকুব মেমনকে অনেক সময় দেয়া হয়েছে, তার ফাঁসি
পিছিয়ে দেয়া দেয়া হলে বিচার ব্যবস্থায় খারাপ নজির তৈরি হবে। অবশেষে ভোর ৪
টা ৫০ মিনিটে ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষ থেকে ফাঁসি পিছিয়ে দেয়ার আবেদন খারিজ করে
দেয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে ১২ মার্চ
মহারাষ্ট্রের মুম্বাইতে বিভিন্নস্থানে ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণ হলে ২৫৭
জনের মৃত্যুর পাশাপাশি ৭১৩ জন আহত হয়। এ ঘটনায় অন্যতম চক্রান্তকারী হিসেবে
অভিযুক্ত হন ইয়াকুব মেমন।
১৯৯৪ সালে গ্রেফতার হয় ইয়াকুব মেমন।
২০০৭ সালে টাডা আদালতে তার ফাঁসির সাজা দেয়া হয়।
২০১৩ সালে সুপ্রিমকোর্টে তার ফাঁসির সাজা মওকুফের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন খারিজ হয়ে যায়।
টাডা আদালতের পক্ষ থেকে ফাঁসির দিন ধার্য হয় ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই।
২০১৫ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টে ইয়াকুব মেমনের পক্ষ থেকে কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করা হয়।
২০১৫ সালের ২১ জুলাই ইয়াকুব মেমনের পক্ষ থেকে করা সুপ্রিম কোর্টে করা কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ হয়ে যায়।
২০১৫ সালের ২২ জুলাই মেমনের পক্ষ থেকে ফাঁসি মওকুফের আবেদন করা হয়।
তার শেষ আবেদনের শুনানি প্রক্রিয়া যথাযথ
হয়নি বলে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি এ আর দাভে এবং বিচারপতি কুরিয়ান
জোসেফের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয় গত ২৮ জুলাই।
২৯ জুলাই তিন সদস্যদের ডিভিশন বেঞ্চে
খারিজ হয়ে যায় ফাঁসি স্থগিত করার আবেদন। প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন
মহারাষ্ট্রের গভর্নর সি বিদ্যাসাগর রাও। পরে গভীর রাতে আবারো সুপ্রিম
কোর্টে ফাঁসি স্থগিতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্যের বিচারপতিদের
সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ফাঁসি স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেয়। #
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন