পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে, আন্দোলনের হুমকি
(রেডিও তেহরান): পশ্চিমবঙ্গে
মুসলিমদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে
ক্ষোভ বাড়ছে। বেসরকারি মাদ্রাসার সরকারি অনুমোদন, শিক্ষা এবং চাকরির
ক্ষেত্রে যথাযথ সংরক্ষণ কার্যকরী করার দাবিতে মুসলমানদের মধ্যে এই ক্ষোভের
সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি আন-এডেড বা সরকার স্বীকৃত
অবৈতনিক মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি পরিষেবা ঠিকমত পাওয়া না যাওয়ায় আমরণ অনশনে
বসেছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষকরা। সমস্ত আন-এডেড মাদ্রাসায় মিড ডে মিল চালু করা,
পরিকাঠামো উন্নয়নে এমএসডিপি এবং সর্বশিক্ষা মিশন থেকে মাদ্রাসা পিছু
পঞ্চাশ লাখ টাকা করে বরাদ্দ করা, পরিদর্শন হওয়া মাদ্রাসাগুলোকে অনুমোদন
দেয়ার পাশাপাশি তাদের আর্থিক অনুদান দেয়া, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের
নিয়োগপত্র ও বেতন চালু করা, ছাত্রছাত্রীদের পোশাক এবং তাদের বৃত্তি দেয়া
ইত্যাদি দাবিতে এই অনশন হয়। ২২ জুলাই মাদ্রাসা বোর্ডের সামনে এই অনশন শুরু
হওয়ার পরে ২৪ জুলাই রাজ্য সচিবালয় নবান্নে সংখ্যালঘু দফতরের সচিব সৈয়েদ
আহমেদ বাবা’র সঙ্গে আলোচনার পর অনশন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
‘আন-এডেড মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটি’কে সরকার
পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে এগুলোকে মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রে উন্নীত করা
হবে। যদিও এই প্রতিশ্রুতি কত দিনে বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে কোনো রূপরেখা
স্পষ্ট নয়। এরইমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ মঞ্চ
‘মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদ’-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গণআন্দোলনের
হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক,
আব্দুল আজিজ (সোমবার) বলেন, ‘কিছু মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে অথচ
সেখানে কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে না এবং অনেক মাদ্রাসা দীর্ঘদিন পরিদর্শন
হয়ে পড়ে থাকলেও তাদের এখনো স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না। দ্রুত এসব সমস্যার
সমাধান না হলে এ নিয়ে আগস্ট মাসে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সদরে আন্দোলন শুরু
করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ (সোমবার) থেকে আন্দোলনে
নামার কথা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশ সফরে থাকায় তা
প্রত্যহার করা হয়েছে। আগামী আগস্টে বড় আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নেয়া
হয়েছে।’
আব্দুল আজিজ বলেন, ‘মুসলিমদের সামগ্রিক
উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি থাকা প্রয়োজন, এই সরকারের তা নেই। কয়েকজন ইমাম এবং
মুয়াজ্জিনকে ভাতা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না।’ এই প্রসঙ্গে তিনি
ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সরকারি ভাতা নেয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন।
আব্দুল আজিজ বলেন, ‘হজ হাউসের জন্য
বিল্ডিং এবং আলিয়া ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস গড়লেই মুসলিমদের উন্নয়ন শেষ হয়ে
যায় না। শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে মুসলিমদের যথাযথ অংশ থাকা প্রয়োজন।
রাজ্য সরকারের চার বছর পূর্ণ হয়ে গেলেও চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুসলিমরা
বঞ্চিত হয়ে রয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হাতে গোনা কয়েকজন বিশিষ্ট
ব্যক্তিদের ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থান হয়েছে, সাধারণভাবে মুসলিমরা সেই
তিমিরেই পড়ে রয়েছে।’
‘আন-এডেড মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটি’র
প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়কে সমাজের মূলস্রোতে আনার
জন্য ১০ হাজার মাদ্রাসাকে আন এডেড হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। যদিও মাত্র ২৩৭
টি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অনেক মাদ্রাসা পরিদর্শনের পর সেসবের
তথ্য ফাইল বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাদের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না।’
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান (সোমবার) বলেন,
‘উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তা যথাযথভাবে
কার্যকরী করা হচ্ছে না। উচ্চশিক্ষায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির আওতায় যে
সংরক্ষণের ঘোষণা করা হয়েছে তা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মানা
হচ্ছে না। গত চার বছরে সরকারি চাকরিতেও মুসলিমরা প্রয়োজনীয় সুযোগ পায়নি।’
মুসলিম নেতারা এ ধরণের অভিযোগ করলেও
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২২ জুলাই দলীয় এক সমাবেশে বলেন,
রাজ্যে ৩৫ হাজার ইমাম-মুয়াজ্জিন বাংলায় ভাতা পায়। কবরস্থানের প্রাচীর করে
দিয়েছি। গত ৪ বছরে ৮২ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে আমরা স্কলারশিপ দিয়েছি। আমরা
নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় করেছি, নজরুল ইসলাম বিমানবন্দর করেছি, ইকবালের
নামে চেয়ার করেছি, মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নামে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
করেছি, আলিয়া ইউনিভার্সিটি করেছি, নতুন হজ হাউস করা হচ্ছে, সংখ্যালঘু ভবন
হচ্ছে।’
সংখ্যালঘুদের কর্মসংস্থানের কথা বলতে গিয়ে
মমতা বলেন, ‘১৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণে ৯৭ শতাংশ সংখ্যালঘু ভাইবোনেদের
সংরক্ষণ দেয়া হয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সংখ্যালঘু মুসলিমদের উন্নয়ন নিয়ে এ রকম দাবি করলেও মুসলিম সংগঠনের পক্ষ
থেকে তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেয়া
হয়েছে। আগামী দিনে এই আন্দোলন বড় আকার ধারণ করলে সরকারের পক্ষে তা যথেষ্ট
বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।#
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন