ভারতের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প: বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগ
(রেডিও তেহরান): ভারত সম্প্রতি তাদের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাসহ ৩০টি নদী সংযুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে নতুন করে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে।ভারতের এ ঘোষণায় শুধু পরিবেশবাদীরাই নন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার,বিরোধী দল,এমন কি ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল ও পরিবেশবিদরা।
আন্তঃসীমান্ত নদীকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনার কথা নয়াদিল্লি ঘোষণা করে ১৩ই জুলাই। ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রী সানওয়ার লাল জাত বলেন, মানস-শঙ্খ-তিস্তা-গঙ্গা এই গুরুত্বপূর্ণ চারটি নদীকে শিগগিরই সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এক্ষেত্রে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা বা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, নদীগুলোর এই সংযুক্তির মাধ্যমে শুধু সেচ কাজই ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে তা-ই নয়, একই সঙ্গে পানির সুবিধা পাবে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার।
অতিরিক্ত যে পানি থাকবে তা সঞ্চালন করা হবে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে। এ বিষয়ে শিগগিরই মতামত জানাবে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বিহারের রাজ্য সরকার।
এখানে উল্লেখ্য, এর আগে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আসাম, ওড়িশা, সিকিম ও দক্ষিণের কেরালা রাজ্য এ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছে। ফলে ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার এ প্রকল্প থেকে সরে আসে। এরপর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ এলায়েন্স (ইউপিএ) সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা এ প্রকল্পটিতে হাত দেয়নি।
নতুন করে ভারতের এ ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। তারা সম্প্রতি এ নিয়ে একটি চিঠি লিখেছে ভারতের কাছে। তাতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, হিমালয় থেকে উৎপন্ন যেকোন নদী প্রবাহের গতি পরিবর্তন করা হলে, তাহবে বাংলাদেশকে দেয়া ভারতের প্রতিশ্রুতির বিরোধী অবস্থান। আন্তঃনদী সংযোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি। এ জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করতে নয়া দিল্লিকে অনুরোধ করেছে ঢাকা।
তাছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভারতের এ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বুধবার বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ভারতের এ প্রকল্পটির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলো আক্রান্ত হবে। ভারত যদি এ প্রকল্প বন্ধ না করে তাহলে বাংলাদেশের অনেক নদীর পানি প্রবাহ কমে যাবে।
বাংলাদেশের পরিবেশবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন যে, এ প্রকল্পের কারণে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পানি প্রবাহ থেমে যাবে। পলিমাটি স্থানান্তরিত হওয়া বাধাগ্রস্ত হবে। মাছের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বনভূমি ডুবে যাবে। বাংলাদেশের ভাটিতে আন্তঃনদীগুলোতে পানি প্রবাহ কমে যাবে।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান জনাব আবু নাসের খান রেডিও তেহরানকে বলেন, ভারতের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারতের বিশাল এলাকাও পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়বে।
ভরতের এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজকেও আহবান জানান তিনি।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আন্তঃনদী সংযোগ করার নতুন করে ঘোষণার মাধ্যমে ভারত দৃশ্যত তাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামম্প্রতিক প্রতিশ্রুতি এবং ২০১০ সালে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতেকে উপেক্ষা করেছে।
গত ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে যে যৌথ ঘোষণা দিয়েছিলেন তাতে তিনি বলেছিলেন, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশ আক্রান্ত হয় তাহলে ভারত একতরফা সিদ্ধান্ত নেবে না।#
রেডিও তেহরান/এআরকে/জিএআর/২৬
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন