আল্লাহর ৯৯ নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিল: আব্দুল গাফফার চৌধুরী
(রেডিও তেহরান): ‘আল্লাহর ৯৯
নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিল’ বলে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছেন প্রবীণ
সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী। এছাড়া, তিনি হিজাব, দাড়ি-টুপি
নিয়েও কটূক্তি করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী
মিশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায়
তিনি এ বিতর্কিত মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ
কে আব্দুল মোমেনের পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে একমাত্র আলোচক ছিলেন আব্দুল
গাফফার চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের অতীত এবং ভাষার বিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে
বলেন, “আজকের আরবী ভাষায় যেসব শব্দ; এর সবই কাফেরদের ব্যবহৃত শব্দ। যেমন-
আল্লাহর ৯৯ নাম, সবই কিন্তু কাফেরদের দেবতাদের নাম। তাদের ভাষা ছিল
আর-রহমান, গাফফার, গফুর ইত্যাদি। সবই কিন্তু পরবর্তীতে ইসলাম এডাপ্ট
(গ্রহণ) করেছিল।”
কিছুদিন মাদ্রাসায় পড়ার কথা উল্লেখ করে
গাফফার চৌধুরী আরও বলেন, “সবচেয়ে বেশি হাদিস সংগ্রহকারী আবু হুরায়রা নামের
অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা। আবু বকর নামের অর্থ হচ্ছে ছাগলের বাবা। কাফেরদের
মধ্যে যারা মুসলমান হয়েছিল পরবর্তীতে তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়নি।”
বোরকা এবং হিজাব সম্পর্কে এক প্রশ্নের
জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এটা হচ্ছে ওহাবিদের লাস্ট কালচারাল ইনভলব। আমি
অবাক হচ্ছি। ক্লাস টুয়ের মেয়েরা হিজাব-নেকাব পড়বে! এটা আমাদের ধর্ম শিক্ষা
হতে পারে?”
তিনি বলেন, “মুসলমান মেয়েরা মনে করে হিজাব, বোরকা হচ্ছে ইসলামের আইডিন্টিটি। আসলে কী তাই? বোরকা পরে যাচ্ছে কিন্তু প্রেম করছে। আবার ইন্টারনেটেও প্রেম করছে। আচরণ ওয়েস্টার্ন কিন্তু বেশভূষা ইসলামিক করে আত্ম-প্রতারণা করছে তারা।”
তিনি বলেন, “মুসলমান মেয়েরা মনে করে হিজাব, বোরকা হচ্ছে ইসলামের আইডিন্টিটি। আসলে কী তাই? বোরকা পরে যাচ্ছে কিন্তু প্রেম করছে। আবার ইন্টারনেটেও প্রেম করছে। আচরণ ওয়েস্টার্ন কিন্তু বেশভূষা ইসলামিক করে আত্ম-প্রতারণা করছে তারা।”
আওয়ামীপন্থী এই কলাম লেখক বলেন, “এখন যুগ
পাল্টেছে। এখন বাংলাদেশে বোরকা পড়ার বিপক্ষে অনেকেই জেগে উঠেছে। এসব
ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
দাড়ি-টুপি নিয়ে সমালোচনা করে গাফফার চৌধুরী বলেন, “পুরো দেশ এখন দাড়ি-টুপিতে ছেঁয়ে গেছে। সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টুপি আর দাড়ির সমাহার। অথচ তারা ঘুষ খাচ্ছেন। এত বড় দাড়ি, এত বড় টুপি; কিন্তু ঘুষ না পেলে ফাইলে হাত দেন না- এটা কী ইসলামের শিক্ষা?”
রাসুল আর রাসুলুল্লাহ শব্দটি এক নয় দাবি
করে গাফফার চৌধুরী বলেন, “রাসুল মানে দূত, অ্যাম্বাসেডর। রাসুলে সালাম মানে
শান্তির দূত। রাসুল বললেই আপনারা মনে করেন হযরত মুহম্মদ (সা.), তা কিন্তু
নয়। যখন রাসুল্লাহ বলবেন তখন মনে করবেন আল্লাহর প্রতিনিধি। এখন মোমেন ভাই
আমেরিকায় থেকে যদি বলেন কিংবা আমি নিজেকে রাসুল দাবি করলে কল্লা যাবে।“
ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে মন্ত্রিত্ব হারানো বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে সাফাই গান তিনি। অনেকটা রসিকতার সুরে তিনি বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী কী এমন বলেছিল? তাকে বিপদে পড়তে হয়েছে। তার জন্য আজকে দেশে আন্দোলন হচ্ছে। এসবই হচ্ছে ওহাবীয় মতবাদ ও মাওলানা মওদুদীর চাপিয়ে দেয়া সংস্কৃতি, যা আমাদের বাংলা ভাষার মধ্যে ঢুকে পড়েছে।”
তিনি বলেন, যত দিন আমাদের ভাষা থাকবে, রবীন্দ্র নাথ থাকবে, বঙ্গবন্ধু থাকবে ততদিন বাংলাদেশকে তালেবানরা ধ্বংস করতে পারবে না।
আব্দুল গাফ্ফার বলেন, “আমেরিকানরা
তালেবান সৃষ্টি করে এখন বিপদে পড়েছে। আর বাংলাদেশের জামায়াত দ্বীনে
মোহাম্মদী নয়, তারা হচ্ছে দ্বীনে মওদুদী। হিজাব এবং বোরখা হচ্ছে মওদুদীর
শেষ মতবাদ। আর জামায়াত এক সময় কোরবানীর গোস্তের চালে (চামড়ার পয়সায়) চলতো।
আমেরিকার পতনের সাথে সাথে এদেরও পতন হবে। শুধু শুধু সাদ্দাম এবং গাদ্দাফিকে
হত্যা করা হলো ইসরাইলকে নিরাপদ করার জন্য।”
সৌদি আরবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর নাম সৌদি আরব হবে কেন? তারা রাসূলের (সা:) অনুসারি হলে এর নাম হবে মোহাম্মদীয়া। কাবা শরীফের দরজাগুলোর নাম বাদশাহদের নামে দেয়া হয়েছে। কোনো সাহবিদের নামে নয়। এভাবে মুসলমানে মুসলমানে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন ওহাবী ইজম।
শেখ হাসিনার প্রশংসা আব্দুল গাফফার চৌধুরী
বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের অনেক ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। তারপরেও বাংলাদেশ
শেখ হাসিনার মত ইস্পাতরূপী নেত্রী পেয়েছে। যিনি কিনা মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের
বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে তাকে ৯ বার হত্যার
প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আমি হলে ভয়ে চলেই যেতাম কিন্তু তিনি সাহসের সাথে
লড়াই করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমার হয়ত ভুল হতে পারে। কিন্তু আমার একটি বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই আমি লিখছি। আমি বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, মৌলবাদী রাষ্ট্র আমরা চাই না, আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই।
জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে গাফফার চৌধুরী বলেন, আমি জিয়াউর রহমানকে ঘৃণা করি। কারণ তাকে আমি দেখেছি যুদ্ধের সময়। সাবুরা সেক্টরে আমি তার সাথে ছিলাম। সে সারাক্ষণ মাথার চুল চিরুনী দিয়ে আচরাতো আর খবর নিতো কোন রাষ্ট্রদূত আসছে কি না? এখন কী না তাকেই বলা হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ সে একটি মাত্র বাণী পাঠ করেছিল।
তিনি খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, বেগম
জিয়া আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে পারেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করেন
কীভাবে? তিনি বঙ্গবন্ধুকে ধর্মের বাবা ডেকেছিলেন। তিনিই তার সংসার রক্ষা
করেছিলেন।
আব্দুল গাফ্ফার বলেন, বর্তমান সরকার ও
আগের সরকারগুলোর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে বর্তমান সরকার হচ্ছে মানুষ, আর আগের
সরকারগুলো ছিল রোবট।#
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন