মেয়েদের জন্য কতটা নিরাপদ হলো বাংলা বর্ষবরণ উৎসব? - rangpur news

Breaking

Breaking News

rangpur news

This is news blog site.Here have important online newspaper.if you Concert:MD.Gulam azam sarkar. E-mail:gulamazam@gmail.com Mobil:01735632338

Windows

test banner

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭

মেয়েদের জন্য কতটা নিরাপদ হলো বাংলা বর্ষবরণ উৎসব?

মেয়েদের জন্য কতটা নিরাপদ হলো বাংলা বর্ষবরণ উৎসব?






গেটের ভেতরে ও বাইরে হাজার হাজার মানুষ। তার মাঝেই কিছু যুবক নববর্ষের উৎসবে আসা মেয়েদের শরীরে হাত দিতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেকের পরনের কাপড় টেনে ছিড়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে সেইদিন । মানুষের ব্যাপক ভীড়ের মাঝে হারিয়ে যায় আক্রান্তু মেয়েদের চিৎকার।
ঘটনার পর কয়েকদিন জুড়ে সংবাদমাধ্যমে উঠে আসতে থাকে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের খবরাখবর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে ঘিরেই যেহেতু বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, তাই বিশেষ দিনগুলোতে সেখানেই দেখা যায় হাজারো মানুষের ভিড়। আর ভিড়কেই টার্গেট করে নিপীড়ণকারীরা।
২০১৪ সালে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত অনুষ্ঠান শেষেও ঘটে শ্লীলতাহানির ঘটনা
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আরেকটি ফটক চারুকলা ইনস্টিটিউটের উল্টো দিকে ।
সেখানে বিজয় দিবসের একটি অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে নারীদের ওপর হামলা কিভাবে চালানো হয়- সেকথাই বলছিলেন বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিলভিয়া ইয়াসমিন ।
তিনি বলেন, "লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে ভিড়ের মধ্যে আমাদের ভীষণ ঠাসাঠাসি অবস্থা। সোহরাওয়ার্দীর গ্যেটের সামনে রাস্তায় আমরা। তেমন ভিড় ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে যেন ভিড় তৈরি করা হলো। আমাদের পেছনের একটি মেয়েকে ওরা টার্গেট করে, ওর শরীরে টাচ করছিল। মেয়েটি চিৎকার করে তার বন্ধুদের ডাকছিল। কিন্তু ভিড় আমাদের ঠেলে নিয়ে গেল চারুকলার গ্যেটের দিকে। মেয়েটির শাড়ির আচঁল খুলে গিয়েছিল। সে যেন দম নিতে পারছিল না-এমন অবস্থা"।
মেয়েদের নিরাপত্তার পরিবেশ কতটা তৈরি হয়েছে?
কিন্তু ২০১৫ সালে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে মেয়েদের ওপর একের পর এক যৌন হামলাকে নজিরবিহীন বলেছেন অনেকেই। কিন্তু ওই ঘটনার সময় এবং তার পরে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। ত্বরিৎ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগে সমালোচনা হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম আমজাদ স্বীকার করেন, সে বছর উদ্যান থেকে বের হওয়ার পথ খোলা ও বন্ধ রাখার কৌশলে তাদের ত্রুটি ছিল। তবে তরিৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সেটি তারা মানতে রাজি নন। কিন্তু এই ধরনের প্রকাশ্য যৌন হামলার ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তার বিষয়ে কতটা আশ্বস্ত করতে পারছেন তারা?
প্রক্টর আমজাদ বলেন, " আমরা নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি । বিকেল ৫টার পর ঢোকার গ্যেট বন্ধ করে দেয়া হবে গতবছরের মত। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবে। তবে আমরা মনে করি শুধু মেয়েদের বিষয় নয়। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর হামলা। সেজন্য মেয়েদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে"।
প্রক্টর বলেন, পুরো ব্ষিয়টি নির্ভর করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর।
শনাক্ত করেও গ্রেপ্তার নেই
অভিযোগ রয়েছে- ওই ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ আক্রান্ত নারীদের সহায়তা দিতে পারেনি।
এমনকি 'এটি কতিপয় দুষ্টু ছেলের কাজ' বলে ঘটনাটিকে অনেকটাই মামুলি প্রতিপন্ন করেন পুলিশের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা।
এ ঘটনায় সমালোচিত হওয়ার পর সিসিটিভি ক্যমেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষী বা অভিযুক্ত সন্দেহে কয়েকজনকে ধরিয়ে দিতে বড় অংকের পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ।
কিন্তু এখনো পর্যন্ত একজন ছাড়া আর কাউকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ।
ফলে অভিযোগপত্রে 'নাম' এসেছে একজনেরই যেখানে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন।
তাহলে কি এ ঘটনায় ব্যর্থ হলো পুলিশ?
জিজ্ঞেস করেছিলাম ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ডেপুটি কমিশনার মাসুদুর রহমানকে।
মি রহমান বলেন, শাহবাগ থানায় মামলা হওয়ার পর প্রথমে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করে। তখন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আটজনকে শনাক্ত করা হয়। একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তদন্তভার যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইর হাতে। তারা তদন্ত শেষে একজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে।
নাক্তকরে পুরস্কার ঘোষণার পরও কেবল একজনকেই ধরা গেল। বাকিদের ধরা গেল না কেন?
এর জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, হাজার হাজার মানুষের মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত করা জটিল।
"সন্দেহজনক যাদের ছবি পাওয়া গেছে তাদের অনেকের স্থায়ি ঠিকানায় মিল নেই। ফলে তাদের ধরা যায়নি। তবে পুলিশের চেষ্টা বলছে" বলে তিনি জানান।
'শুরু থেকেই মামলায় হেলা-ফেলা'
এই মামলার ক্ষেত্রে এক ধরনের অবহেলা ছিল বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের আইনজীবী নীনা গোস্বামী এই মামলার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে খোঁজ রাখছিলেন।
তিনি বলেন, "শুরু থেকেই একধরনের হেলা-ফেলা মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়াও আশাব্যঞ্জকভাবে এগোয়নি। অনেক মামলা বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হয় এখানে সেটিও করা যেত। কিন্তু তা হয়নি"।
"শাস্তি না হলে, সামনে কোনও নজির না থাকলে তারা মনে করবে এসব করে পার পাওয়া যায়"।
নববর্ষে হামলার ঘটনার পর বড় ধরনের আন্দোলনের চেষ্টা হয়েছিল।
এর প্রতিবাদে এবং দোষিদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নারী অধিকার কর্মীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায়, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের ডাক দেন।
এর আগে এমনই একটি বড় ধরনের আন্দোলন হয়েছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৮-৯৯ -সালে।
ছাত্রলীগের কর্মীদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের ধর্ষণ এবং সেনিয়ে উৎসব করার অভিযোগে সেই ক্যাম্পাসভিত্তিক আন্দোলনের পর, এটাই যৌন নির্যাতন-বিরোধী বড় ধরনের আন্দোলন প্রচেষ্টা বলা যায়।
কিন্তু শেষপর্যন্ত মামলার মত আন্দোলনটিও বেশিদূর যেতে পারেনি।
কোনও নারীর সাক্ষ্য নেই। কেন?
পুলিশের বক্তব্য ওই ঘটনার পর তারা কোনো নারীর বক্তব্য পায়নি ।
এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'নারী যৌন হামলা প্রতিরোধ কমিটি'র প্রধান অধ্যাপক নাসরিন আহমাদও জানান, কোনো মেয়ের সাক্ষ্য তারাও পাননি।
তবে পুরুষ নিয়ন্ত্রিত রক্ষণশীল সমাজে একটি মেয়ের পক্ষে হামলার বিবরণ বা সাক্ষ্য দেয়া সহজ নয় ।
গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রধান সৈয়দ শায়খ ইমতিয়াজ বলছিলেন, "আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি মেয়ের পক্ষে এধরনের ঘটনার বিবরণ দেয়া সহজ নয়। কারণ মানুষ ধরেই নেবে সে খারাপ আর খারাপ মেয়েরা এমন হামলার শিকার হয়-এটাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধারণা। ফলে বাবা-মায়েরাও চাননা যে তাদের মেয়ে এক্ষেত্রে কোনও বক্তব্য দিক"।
কতটা আশ্বস্ত মেয়েরা?
ঢাকার মতো বড় শহরের রাস্তা কিংবা মফস্বলের কোনো এলাকা, উৎসবের ভিড় অথবা নির্জন কোন এলাকা সব জায়গাতেই যৌন হামলার শিকার হচ্ছে নারীরা। আর দোষিরা শাস্তি না পাওয়ায় একধরনের নিরাপত্তহীনতার বোধ তৈরি হচ্ছে, বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলছিলেন, তার নিজের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বহুবার। এ কারণে তিনি এ ধরনের ভীড়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, "আমাদের বাড়ির লোকেরাও চায়না আমারা যাই। পহেলা বৈশাখের হামলার ঘটনায় স্বামীকে রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে স্ত্রীকে হয়রানি করা হয়েছে। সেখানে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?"
আরেকজন সহপাঠী বলেন, " বাসা থেকে বলে কোনও পুরুষের সাথে যেতে। ভাই বা অন্য কেউ। কিন্তু তাদের সাথেও কি আমরা সেফ (নিরাপদ)?"
নারীর ক্ষমতায়নের ক্যাম্পেইন নিয়ে যখন এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ তখন পুরুষেরা কেন তাদের এভাবে টার্গেট করছে?
অধ্যাপক সৈয়দ ইমতিয়াজ বলেন, "এখানে পুরুষরা একধরনের সংকটের মধ্যে আছে। তারা চায় নারীরা কাজে যাক। বাধ্য হয়েই চাইছে কারণ তার একার রোজগারে সংসার চলছে না। কিন্তু সে আবার বাড়ি ফিরে চায় তার বউকে মায়ের ভূমিকায় দেখতে। এখানেই দ্বন্দ্ব"।
"আবার যেসব পুরুষদের স্ত্রীরা/ মেয়েরা বাড়ির বাইরে কাজ করে না তারা ওই পুরুষটিকে বলে তুমি কেমন পুরুষ? সমাজ ও মিডিয়াও এভাবেই সবকিছু তুলে ধরছে। ফলে এই পুরুষটি বাইরে আরেকটি মেয়েকে মনে করছে ভোগ্যপণ্য" যোগ করেন মি. ইমতিয়াজ।
এই গবেষক বলেন, মূলত নারীদের অগ্রগতিকে এক ধরনের হুমকি মনে করছে অনেক পুরুষ। কেউ কেউ হয়তো আক্রান্ত নারীর পক্ষে এগিয়ে আসছেন তবে তাদের সংখ্যা নেহায়েত সামান্য।
"নারীরা বাইরে কাজ করায় সমাজে ব্যাপক বদল ঘটে গেছে। সেটা পুরুষ কিভাবে মেনে নেবে, সে কিভাবে সেই পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেবে-সেটা তাকে শেখানো দরকার ছিল। এখানে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সরকার কোনও কাজ করেনি"।
তিনি বলেন, "আমদের সমাজ নারীদের এগিয়ে যেতে বলছে, ক্ষমতায়নের কথা বলছে কিন্তু এই ধরনের পরিবর্তন ঘটলে কিভাবে তার সাথে খাপ খাওয়াতে হবে সেটা পুরুষকে শেখানো হচ্ছে না"
চলছে বর্ষবরণ প্রস্তুতি
সার্বজনীন হয়ে ওঠা বাংলা বর্ষবরণের উৎসবে শুধু নারীদের ওপর হামলার ঘটনাই নয়, ঘটেছিল বোমা হামলাও।
২০০১ সালে রমনার বটমূলে হরকাতুল জিহাদের বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন দশজন।
আর যৌন হামলার ঘটনার পর কড়াকড়ি আরও বেড়েছে। রয়েছে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সাম্প্রতিক বাস্তবতায় নিরাপত্তার ইস্যুও।
এরপরও এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সবকিছু ছাপিয়ে এখন একদিকে চলছে লাল-সাদা শাড়ি আর পাঞ্জাবির কেনার ধুম, অন্যদিকে চলছে প্রথমবার বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রারও প্রস্তুতি।

কোন মন্তব্য নেই:

Post Top Ad

Responsive Ads Here