ছেলে সন্তানের অবর্তমানে মেয়ের উত্তরাধিকার - rangpur news

Breaking

Breaking News

rangpur news

This is news blog site.Here have important online newspaper.if you Concert:MD.Gulam azam sarkar. E-mail:gulamazam@gmail.com Mobil:01735632338

Windows

test banner

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭

ছেলে সন্তানের অবর্তমানে মেয়ের উত্তরাধিকার

ছেলে সন্তানের অবর্তমানে মেয়ের উত্তরাধিকার

মারুফ আল্লাম
জনাব আজমল হোসেন মারা যাওয়ার সময় স্ত্রী, এক মেয়ে এবং এক ভাই রেখে যান। মুসলিম আইন অনুসারে তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক তার মেয়ে এবং এক-অষ্টমাংশ পাবেন তার স্ত্রী। সে হিসেবে পুরো সম্পত্তির আট ভাগের পাঁচ ভাগ এ দুজনের মধ্যে বণ্টন হওয়ার পর বাকি আট ভাগের তিন ভাগ আসাবা হিসেবে পেয়ে যাবেন আজমল সাহেবের ভাই। পক্ষান্তরে আজমল সাহেব যদি মারা যাওয়ার সময় স্ত্রী, ভাই এবং এক মেয়ের সঙ্গে একজন ছেলে সন্তানও রেখে যেতেন, সে ক্ষেত্রে সম্পত্তি বণ্টনের হিসাব-নিকাশ অন্যরকম হয়ে যেত। এ অবস্থায় স্ত্রী এক-অষ্টমাংশ নেয়ার পর বাকি আট ভাগের সাত ভাগ তার ছেলে-মেয়ের মধ্যে ২:১ হারে বণ্টিত হয়ে যেত এবং আজমল সাহেবের ভাই সম্পত্তিতে কোনো অংশ পেতেন না।

এর অর্থ হলো আজমল সাহেবের মৃত্যুর পর তার ছেলে না থাকলে সম্পত্তির বড় একটা অংশ পরিবারের বাইরে অর্থাৎ তার ভাইয়ের কাছে চলে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে মৃত্যুকালে ছেলে রেখে গেলে তার এ সম্পত্তি পরিবারের বাইরে যাচ্ছে না। ইসলাম একটি কমিউনিটিভিত্তিক জীবনব্যবস্থা, যেখানে পরিবারের চেয়ে সমাজ কিংবা কমিউনিটির স্বার্থ বেশি দেখা হয়। এ কারণে পারিবারিক গণ্ডির বাইরেও কাউকে কাউকে সম্পত্তি দেয়া হয়ে থাকে। কমিউনিটিভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় আজমল হোসেনের মৃত্যুর পর তার কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় তার স্ত্রী এবং মেয়ের দেখাশোনার নৈতিক দায়িত্ব তার ভাইয়ের ওপর বর্তায় বলে মুসলিম আইনে আজমল সাহেবের ভাইকেও সম্পত্তির কিছু অংশ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু সমস্যা হলো, আজকের সমাজ আর কমিউনিটিভিত্তিক নেই বরং পরিবারকেন্দ্রিক। এখন প্রতিটি পরিবার অন্য পরিবার থেকে স্বতন্ত্র; যে কারণে সম্পত্তি অর্জন কিংবা দেখভালের জন্য পরিবারের বাইরের সদস্যরা যেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখে না আবার আজমল সাহেবের ঘটনার মতো মৃত্যুর পর মৃতের স্ত্রী-কন্যাকে দেখাশোনার ব্যাপারেও পারিবারিক গণ্ডির বাইরে চাচা-ফুফুদের মতো আত্মীয়রা খুব একটা দায়িত্ব নেয় না। পরিবারগুলোর এই স্বতন্ত্রতা এবং এককেন্দ্রিকতা এখন একটি কঠিন বাস্তবতা। সুতরাং, এ রকম সমাজব্যবস্থায় পুত্রের অবর্তমানে মৃতের নিকটতর কন্যাসন্তানকে বাবার পুরো সম্পত্তি প্রদান না করে তুলনামূলকভাবে দূরবর্তী আত্মীয় চাচা-ফুফুদের কাছে সেই সম্পত্তি হস্তান্তর করায় এক অসম পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
মুসলিম পারিবারিক আইনের আওতায় এর দুই ধরনের প্রতিকার সম্ভব। প্রথমটি হলো পুত্রসন্তানের অনুপস্থিতির কারণে যে অংশটুকু পরিবারের বাইরে চলে যাওয়ার কথা, সেটুকু অংশ পিতা তার জীবদ্দশায় কন্যাসন্তানের অনুকূলে উইল করে দিয়ে যেতে পারেন। আর দ্বিতীয় উপায়টি হলো জীবদ্দশায় কন্যাসন্তানকে সেই অংশটুকু হেবা করে দিতে পারেন। তবে এ দুই উপায়েই বিশেষ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তিতে যারা নির্ধারিত অংশ পাবেন, তাদের উইল করতে হলে যার অনুকূলে উইল করা হবে, তার সহ-শরিকদের মতামত গ্রহণ করতে হয়। সে হিসেবে কন্যা যেহেতু পিতার সম্পত্তিতে নির্দিষ্ট অংশ পেয়ে থাকে, তার অনুকূলে সম্পত্তি উইল করতে হলে পিতাকে অন্য সহ-শরিকদের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে; যা বাস্তবে বেশ কঠিন ব্যাপার। আবার জীবদ্দশায় কন্যাসন্তানের অনুকূলে হেবা বা সম্পত্তি দান করারও একটা ঝুঁকি রয়েছে। হেবা সাধারণত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয় বলে হেবা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তার মালিক হয়ে যায় হেবাগ্রহিতা। এখন সম্পত্তি যদি বাবা-মা তার মেয়ের অনুকূলে হেবা করে দেন, সে ক্ষেত্রে বাবা তার জীবদ্দশায় অনিরাপদ বোধ করতে পারেন, কারণ সম্পত্তি তখন আইনগতভাবে আর তার মালিকানায় থাকে না। সম্পত্তিহীনভাবে বাকি সময়টা মেয়ের গলগ্রহ হয়ে পড়ে থাকার ঝুঁকি তাই কোনো বাবা-মা নিতে চান না।
সমস্যা সমাধানে কী করা যেতে পারে? এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, পারিবারিক আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা গুরুত্বপূর্ণ অভিমত দিয়েছেন। সমস্যার চারটি সম্ভাব্য সমাধান উল্লেখ করেছেন তিনি। তার মতে, পুত্রসন্তানের অনুপস্থিতিতে কন্যাসন্তানদের অবশিষ্ট সম্পত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামী আইনের আওতার ভেতর থেকেই ইজতিহাদের (গবেষণা) মাধ্যমে সমাধান বের করার চেষ্টা করতে হবে এবং সে অনুসারে আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। তিউনিসিয়ায় বহুবিবাহ নিষিদ্ধ এবং ইন্দোনেশিয়ায় কন্যাসন্তানের উত্তরাধিকার অংশ বৃদ্ধিতে যেভাবে ইজতিহাদ করা হয়েছে, তার উদাহরণ টানেন তিনি।
দ্বিতীয়ত সম্পত্তি উইল করার ক্ষেত্রে যে সীমাবদ্ধতাগুলো রয়েছে, সেগুলো দূর করা যেতে পারে। তার মতে, জীবদ্দশায় যেহেতু একজন ব্যক্তি পুরো সম্পত্তি হেবা করে যেতে পারেন, সেহেতু মৃত্যুর পরও পুরো সম্পত্তি উইল করার ব্যাপারে তার ক্ষমতা থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে এক-তৃতীয়াংশ উইল করা এবং উইল করতে হলে উত্তরাধিকারীদের সম্মতি গ্রহণসংক্রান্ত বাধ্যবাধকতাগুলো শিথিল করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। তাতে করে জীবদ্দশায় কন্যাসন্তানকে প্রয়োজনীয় অংশ উইল করে যেতে পিতার জন্য কোনো বাধা থাকত না।
তৃতীয়ত জীবনস্বত্ব রেখে হেবা করার বিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে। অর্থাৎ এমন হেবার ব্যবস্থা রাখা, যেখানে সম্পত্তির ওপর হেবাকারী জীবনস্বত্ব ভোগ করবেন এবং তার মৃত্যুর পর এ সম্পত্তি চূড়ান্তভাবে তার কন্যাসন্তানের কাছে চলে যাবে। এতে মৃত্যু ঘটা না পর্যন্ত হেবাকারী তার সম্পত্তির যাবতীয় ব্যবস্থাপনা করবেন এবং সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয় নিজে ভোগ করতে পারবেন।
চতুর্থত মিসরসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে বাধ্যতামূলক যে অসিয়তের বিধান রাখা হয়েছে, তাও চালু করা যেতে পারে। এতে করে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর পুত্রসন্তানের অবর্তমানে তার কন্যাসন্তানরা নির্ধারিত অংশ গ্রহণের পর অবশিষ্ট অংশ বাবার অসিয়তের আলোকে গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে বাবা যদি অসিয়ত নাও করে থাকেন, তবুও ধরে নেয়া হবে যে তিনি অসিয়ত করে গেছেন।
পুত্রের অবর্তমানে কন্যাকে মৃত পিতার অবশিষ্ট সম্পত্তি প্রদান করে আইন প্রণয়নের ব্যাপারে বাংলাদেশ আইন কমিশন বেশ আগেই সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। কমিশনের দাবি, ইসলামী নীতির মধ্যে থেকেই এভাবে আইন প্রবর্তন করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে তারা ইন্দোনেশিয়ার সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়কে উল্লেখ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার আদালত ছেলে সন্তানের অনুপস্থিতিতে মেয়ে সন্তানকে মৃত পিতার উত্তরাধিকার সম্পত্তির অবশিষ্টাংশ প্রদানের পক্ষে রায় প্রদান করেছেন। রায়ে যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে, সূরা নিসার ১৭৬ নাম্বার আয়াত অনুসারে নিঃসন্তান ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি জীবিত ভাই-বোনের কাছে চলে যায়। এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, মৃতের সন্তান-সন্ততি না থাকলে তবেই সম্পত্তি মৃতের ভাই-বোনদের কাছে চলে যাবে। সুতরাং মৃতের সন্তান থাকলে তার ভাই-বোনেরা সেই সম্পত্তিতে অংশ পাবে না, সেটিই এ আয়াত থেকে সাব্যস্ত হয়। নিঃসন্তান ব্যক্তি বলতে বর্তমানে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যার ছেলে সন্তান নেই; অথচ কোরআন শরিফে সন্তান বলতে পুরুষবাচক কোনো শব্দ উল্লেখ করা হয়নি। সে হিসেবে একজন মেয়ে সন্তান থাকলেও মৃতের সম্পত্তি তার ভাই-বোনদের কাছে যাবে না বলেই এ আয়াত থেকে সাব্যস্ত করা সম্ভব। সুতরাং, মৃতের ছেলে সন্তানের অবর্তমানে যে সম্পত্তি বর্তমানে মৃতের ভাই-বোন বা দূরের কোনো আত্মীয়ের কাছে চলে যাচ্ছে, তা কন্যাসন্তানের অনুকূলে প্রদান করে বিশেষ আইন করার পক্ষপাতী বাংলাদেশ আইন কমিশন।
পুত্রসন্তানের অবর্তমানে কন্যাসন্তানের কাছে পুরো সম্পত্তি না গিয়ে মৃতের তুলনামূলক দূরবর্তী আত্মীয়ের কাছে সম্পত্তি চলে যাওয়ার এ ধারণা কি কোরআন শরিফে নির্দিষ্টভাবে বর্ণিত আছে? এ ব্যাপারে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ মো. ইমদাদুল্লাহ বলেন, কোরআন শরিফে কেবল নারীদের নির্দিষ্ট অংশ দেয়া হয়েছে। সূরা নিসায় পুত্রসন্তানের অবর্তমানে কন্যাসন্তানদের জন্য উত্তরাধিকার সম্পত্তির সর্বোচ্চ দুই-তৃতীয়াংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুত্রসন্তান না থাকলে কন্যাসন্তানকে নির্ধারিত অংশ দেয়ার পর বাকি সম্পত্তি কোথায় যাবে, সে ব্যাপারে কোরআন শরিফে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। মূলত হাদিসের মধ্য দিয়ে এ বিধান সাব্যস্ত হয়েছে, যেখানে দূরবর্তী আত্মীয়দের অধিকারও স্বীকৃত হয়েছে।
পুত্রসন্তানের অবর্তমানে কন্যাসন্তানকে অবশিষ্ট সম্পত্তি প্রদান করে কোনো আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আপত্তি প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর মতে, এ ধরনের আইন কোরআন-হাদিস পরিপন্থী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর চেয়ে বরং ইসলামী আইনের আওতার ভেতর থেকেই এর সমাধান করা সম্ভব। তার মতে, বাবা-মা যদি বুঝতে পারেন যে তাদের মৃত্যুর পর পরিবারের বাইরের সদস্যরা (যাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে) কন্যাসন্তানদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন না, সে ক্ষেত্রে তারা জীবদ্দশায় তাদের মেয়ে সন্তানের অনুকূলে সম্পত্তি হেবা করে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জীবনস্বত্ব রেখে মেয়েদের সম্পত্তি হেবার বিধান করা হলে তা ইসলামী আইনের পরিপন্থী হবে না বলে মত দেন মো. ইমদাদুল্লাহ।

কোন মন্তব্য নেই:

Post Top Ad

Responsive Ads Here