- See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/153930#sthash.YVxskAC4.dpuf
ইতিহাস-ঐতিহ্য
পীরগাছা মন্থনা বড় তরফ জমিদার বাড়িটি জাদুঘর হচ্ছে
মোঃ গোলাম আযম সরকার, (পীরগাছা) রংপুর
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬,রবিবার, ১৫:৫৩রংপুরের পীরগাছা উপজেলার মন্থনা বড় তরফ জমিদার বাড়িটিকে জাদুঘর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শনিবার রাতে একটি বিপনি বিতানের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম মারুফ হাসান এ ঘোষণা দেন।
এর আগে দেবোত্তরে একটি মিটিং মন্থনা বড় তরফ দেবোত্তরের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম মারুফ হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন মন্থনা বড় তরফ দেবোত্তর এস্টেট-এর সম্পাদক ভবেশ চন্দ্র বর্মন, কমিটির সদস্য বিনাদ বাবু, ডাঃ বিনোদ বিহারী রায়, প্রভাত চন্দ্র রায়, সুধীর চন্দ্র রায়, পিযুষ কান্তি বর্মণ।
মিটিংয়ে জাদুঘর করা ছাড়াও জনকল্যাণমূলক ১০টি প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে দেবোত্তরের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম মারুফ হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা জাদুঘরটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাস্তবায়ন করবো।
তিনি আরো বলেন, দেবোত্তর এস্টেট বিপনি বিতান ও জাদুঘর থেকে যা আয় হবে তা জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে- এলাকার গরিব শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার সুযোগ তৈরি, মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান, কণ্যা দায়গ্রস্থদের সহযোগিতা করা, বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় পোশাক বিতরণ করা, শীতবস্ত্র বিতরণ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ ইত্যাদি।
এ কে এম মারুফ হাসান জানান, জাদুঘরের টিকিটের সম্ভাব্য মূল্য হবে মাত্র দুই টাকা।
২০০৫ সালের তৎকালীন পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ লাইসুর রহমানের 'পীরগাছা উপজেলা উন্নয়ন প্রোফাইল'- এ দেয়া তথ্য মতে রংপুরের ফতেহপুর চাকলার মন্থনা জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা অনন্তরাম কোচবিহার মহারাজার একজন কর্মচারী ছিলেন। তিনি একজন বারেন্দ্রীয় ব্রাহ্মণ। ১৭০৩-১৭০৪ খ্রিস্টাব্দের কোচবিহার মহারাজ রুপনারায়নের শাসনকালে রংপুরের পীরগাছা এলাকায় একটি ছোট তালুক লাভ করেন। তার নামানুসারে উক্ত তালুকের ( গ্রাম) নামও অনন্তরাম হয়। আরেক সূত্রে জানা যায় অনন্তরাম বংশের ষষ্ঠ পুরুষ ছিলেন এবং বৈজ্ঞব মিশ্র নামে একজন মৈথিলী ব্রাক্ষণ কোচবিহার মহারাজার দ্বারা প্ররোহিত এ জমিদারির আদি পুরুষ ছিলেন। তারই বংশের চতুর্থ পূরুষ জিতুমিশ্র এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। অনন্তরাম পূর্ব পূরুষ সম্পর্কেও বিশেষ কিছু জানা যায় না।
১৭১১ সালের দিকে যখন মোগল বাহিনী ‘কাচওয়ারা’ ( সরকার কোচ বিহার) দখলে তৎপর হয়ে ওঠে তখন অন্যান্য কর্মচারীদের মতো অনন্তরামও মোগল পক্ষে যোগদান করে মন্থনা জমিদারিতে তার পূর্বপদ বহাল রাখেন। তার প্রতিষ্ঠিত জমিদারি পরবর্তীকালে মন্থনা অথবা দু আনা ফতেহপুর বলে আখ্যা লাভ করে। তার পুত্র যাদবেন্দ্র নারায়ন একজন খ্যাত বৈষ্ণব অনুসারী ছিলেন। তিনি যাদব রায় ও গোপাল নামে দুটি পারিবারিক বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করে এক দেবোত্তর এস্টেট প্রতিষ্ঠা করেন। যার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৩০,০০০ টাকা। এছাড়াও তিনি ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণদের বহু সম্পত্তি দান করেন। যাদবেন্দ্র রায়ের ছেলে রাঘবেন্দ্র নারায়ন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে রাঘবেন্দ্রের পুত্র নরেন্দ্র ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাধিকারবিহীন অবস্থায় মারা গেলে মৃত জমিদারের স্ত্রী জয় দুর্গা দেবী প্রায় তিন দশকের মতো মন্থনা জমিদারি পরিচালনা করেন। এই জয়দুর্গা দেবীই ইতিহাসে খ্যাত নামা দেবী চৌধুরাণী নামে পরিচিত। যিনি তার জীবদ্দশার অধিকাংশ সময় রংপুরের প্রজা বিদ্রোহের সাথে জড়িত ছিলেন।
এ সময় সন্নাসী বিদ্রোহের নেতা ভবানী পাঠকের সাথে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে রংপুর কালেক্টর রিচার্ড গুডল্যান্ড ও সেনা কমান্ডার লেঃ ব্রেনান বেসামাল হয়ে পড়ে। রংপুরসহ উত্তরবঙ্গ, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারও উক্ত বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়ে। বৃটিশদের অত্যাচারে দেবী চৌধুরাণী অবশেষে আত্মগোপন করে নিজ গোমস্তার মাধ্যমে জমিদারী পরিচালনা করেন। তার অনুপস্থিতির সুযোগে কোম্পানি সরকার তার পরগণায় রাজস্ব আদায়ের জন্য সাজোয়াল নিযুক্ত করে। এর ফলে নিরীহ প্রজাদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি পায়। দেবী চৌধুরাণী কত দিন নিরুদ্দেশ ছিলেন সঠিক বলা যায় না। তবে ধারণা করা হয় ফকির সন্নাসী, প্রজা বিদ্রোহ প্রশমিত হলে তিনি নিজ জমিদারীতে ফেরত আসেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন